এ কে সরকার শাওনের ৫৮ তম জন্মদিন পালন
নিজস্ব সংবাদদাতা, ঢাকা
৬ ফেব্রুয়ারী ছিলো কবি ও কথাসাহিত্যিক এ কে সরকার শাওনের ৫৮ তম জন্মদিন। এইদিনে তিনি বদন বইয়ে লিখলেন
"কেক নয়, ফানুস নয়
নয় মোম প্রজ্জ্বলন,
জীবন থেকে হারিয়ে গেলো
আরো একটি কষ্টের সন!"
কষ্ট ভুলতে নাড়ীর টানে জন্মদিনে রাজধানীর বাড়ী ছেড়ে সস্ত্রীক সোজা চলে গেলেন জন্মভূমি সবুজ শ্যামল গ্রাম গোপালপুরে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে একটি অপরূপা গ্রাম গোপালপুর। তাঁর ভাষায়
"সমতটের রূপসী তন্বী
গোপালপুর তার নাম!
সারি সারি সুন্দর বাড়ি
শত গুনী মানীর ধাম!"
সেখানে পৈতৃক বাড়ীতে কিছুক্ষণ কাটিয়ে চলে গেলেন শস্য ক্ষেতে। সেখামে কবির কলম থেমে থাকেনি। সর্ষে ক্ষেতের হলুদ সায়রে বিমোহিত হয়ে লিখলেন
"মৌমাছি ভ্রমর গুঞ্জে দিনভর
হলুদ সর্ষে ক্ষেতে।
বনে-জঙ্গলে পিয়া পিয়া ডাকে
পাপিয়া-মহুয়া তফাতে।"
গাঢ় সবুজ প্রচ্ছদে সফেদ ধনে পাতার ফুল নিয়ে লিখলেন
"ধনে পাতার কী বাহার!
ঘ্রাণে আত্মহারা।
ঘন সবুজ প্রচ্ছদে ফোঁটা
ফুলগুলি যেন তারা! "
এভাবেই "শীতের শান্ত সকাল" কবিতাটি লিখলেন ঘুরে ঘুরে। নীড় ফেরা পাখীর মত সন্ধ্যায় রাজধানীতে ফিরে এলেন। সারাক্ষণ গুনগুনিয়ে গাইলেন কালজয়ী পরিচালক সুবাস দত্তের আলিঙ্গন ছায়াছবির গান
"ঘুরে এলাম কতো দেখে এলাম
অশান্ত মন নিয়ে ছুটে গেলাম
আমার গাঁয়ের মতো কভু দেখিনি
সে যে আমার জন্মভূমি। "
সাহিত্য চর্চায় নিবেদিত এই প্রতিভাবান কবি'র জন্ম ১৯৬৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের গোপালপুরে। পিতা মো: আবদুল গনি সরকার একজন সরকারী চাকুরে এবং মাতা মিসেস সালেহা গনি সরকার একজন আদর্শ গৃহিনী ছিলেন। তিনি পিতা-মাতার সাত সন্তানের মধ্যে ৪র্থ সন্তান। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি কনিষ্ঠ।
কলকাতার বাংলা এক্সপ্রেস পুরস্কার বিজয়ী কবি ছাত্রজীবন থেকেই সাহিত্য ও সৃজনশীল সব ধরনের ধারার সাথে জড়িত আছেন। তাঁর লিখা গান, কবিতা, নাটক, টেলিফিল্ম ইত্যাদি দেশে বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়-হচ্ছে। তাঁর প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলি হচ্ছে যথাক্রমে “কথা-কাব্য”, “নীরব কথপোকথন”, ও "আপন-ছায়া"। ২০২৫ সালের বই মেলায় প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস " অতল জলে জলাঞ্জলি। এই উপন্যাসে তিনি ভিনদেশী শব্দ সম্পূর্ণভাবে পরিহার করেছেন। তাঁর একটি গল্পগ্রন্থ সহ অপ্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ৯। কবি'র শিক্ষা জীবনের শুরু ঝালকাঠির উদ্বোধন উচ্চ বিদ্যালয়ে। ১৯৮৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ১৯৮৫ সালে নবীনগর কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক হন। ১৯৯০ সালে বিমান বাহিনীর এটিআই থেকে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ সহযোগী প্রকৌশলীর সনদ অর্জন করেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ১০ বছর তিনি সেই এটিআই এর প্রশিক্ষক ছিলেন। ২০০৮ সালে থাইল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ অ্যাসাম্পশন থেকে তথ্য প্রযুক্তিতে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন। প্রান গ্রুপ ও ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্স কর্পোরেশন কর্তৃক প্রদত্ত "খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা" বিষয়ের উপর একাধিক সনদ রয়েছে কবি'র। এছাড়াও তিনি আইন শাস্ত্রেও সম্মান স্নাতক। সরকারি ছাড়া তিনি প্রান সহ দেশের কয়েকটি স্বনামধন্য শিল্পগ্রুপের উপ মহা-ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) হিসাবে কাজ করেন। ১৯৯১ সালে ৫ জুলাই তিনি যুগলবন্দী হন বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এ কে এম জহিরুল হক (ইব্রাহিম)সাহেবের দ্বিতীয়া কন্যার সাথে। কবি ও কবি'র শিক্ষাবিদ স্ত্রী নাজমা আশেকিন শাওনের তিন রাজকন্যাগণ বিশ্বের প্রথম সারির বনেদী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পূর্ণ মেধা বৃত্তি নিয়ে অধ্যয়ন করছেন। এবারের বাংলাদেশের বই মেলায় তাঁর প্রথম উপন্যাস অতল জলে জলাঞ্জলি প্রকাশ করে ছিন্নপত্র প্রকাশন। বইমেলায় ষ্টল ষ্টল নং ৫৯৩।সরকারি ও বেসরকারি চাকুরির পাঠ চুকিয়ে বর্তমানে তিনি রাজধানীর উত্তরখানের নিজ বাসভবন কবিকুঞ্জ 'শাওনাজ ভিলায়' নিরবে নিভৃতে সাহিত্যচর্চা করে চলোছেন ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন