বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৪

একগুচ্ছ অনুবাদ কবিতা ।। নীলিম কুমার মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস, Nilim Kumar


একগুচ্ছ অনুবাদ কবিতা ।। নীলিম কুমার

 মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস 



কবি পরিচিতি--সাম্প্রতিক অসমের অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং বিতর্কিত কবি নীলিম কুমার ১৯৬১ সালে অসমের পাঠশালায় জন্মগ্রহণ করেন। পেশায় চিকিৎসক। প্রকাশিত গ্রন্থ ‘ অচিনার অসুখ’,’ স্বপ্নর রেলগাড়ি’,’ জোনাক ভাল পোয়া তিরোতাজনী’, নীলিম কুমারের শ্রেষ্ঠ কবিতা‘ ইত্যাদি। প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ২৪।




কবিতা ।। মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস

 


অতিথি


মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ -বাসুদেব দাস

কিছুই জিজ্ঞেস না করে আমার বুকের দরজা খুলে সে

ভেতরে প্রবেশ করল

এসেই আমার প্রেমের ফুলদানিটা

ভেঙ্গে ফেলল

কোথাকার আপদ একটা

সকালেই চলে এসেছিল

খাওয়ালাম

দাওয়ালাম

বিকেল হল

অতিথি তো যায় না

রাত হল

অতিথি আমার বিছানায় গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে পড়ল

মধ্যরাতে আমার হাতে বুক থেকে একটা পুঁটলি বের করে দিয়ে

হঠাৎ সে যাবার জন্য প্রস্তুত হল

রাতের রেলে যাবে

পুঁটলিটা খুলে দেখে

দেখলাম আমার প্রেমের ফুলদানিটার মতো

ভেঙ্গে আছে তাঁর হৃদয়

কোথাকার অতিথি এসেছিল

রাতের রেলে সে কোথয় বা চলে গেল

 

 

নিরুদ্দেশের বিজ্ঞপ্তি


মানুষগুলি হারিয়ে যাচ্ছে।

তাই আজকাল মানুষগুলি ফোটো উঠে বেশি।

নিরুদ্দেশের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জুনুন নিজেই ফোটোগুলিতে

খুঁজে বেড়ায় নিজেকে। আমরা ফোটোগুলিতে

খুঁজে বেড়াই নিজেরই মুখটি এবং দেখতে পাই

অবিকল নিজের অপরিচিত মুখটা।

নিজের সেই অপরিচিত মুখটিকে আমি

ভালোবাসতে বাধ্য করাই নিজেকে।

না হলে আমার উপায় থাকেনা।

কারণ আমরা হারিয়েছি

আজকালকার ফোটোগুলিতে আমাদের সঙ্গে থাকে—

প্রিয়, অপ্রিয়, অর্ধপ্রিয়, অর্ধ শত্রু, অর্ধ মিত্র

বিশ্বাসী অবিশ্বাসী ভবিষ্যতের শত্রু হতে চলা প্রত্যেকেই।

—এই সবার মধ্যে নিজেকে দেখে করুনা জন্মায়।

কেননা সেই জন নিজের ভবিষ্যতের বিষয়ে

কোন আন্দাজ করতে পারেনা যে সেই জন হারিয়েছে।

 

যত ফোটো উঠেছে মানুষগুলি, ততই নিজেকে হারিয়েছে।

 

  

বাতাস এবং নারী


মূল অসমিয়া  বাংলা অনুবাদ‐ বাসুদেব দাস

প্রচন্ড গরম।

গোধূলি হয়েছিল কেবল,

হঠাৎ বিদ্যুৎ সরবরাহ চলে গেল।

দেখা গেল

আটমহলের বাড়িটির ছাদে

একজন মহিলা উঠে আসছে,

হাতে একটা পাখা!

আর কিছু ভাবতে ভাবতে

নিজেকে হাওয়া করতে থাকল

 

কিছুক্ষণ পরে

তাঁর ভাবনা

তাঁর হাতের মুঠি থেকে

পাখাটা নিচে ফেলে দিল

ঠিক এই মুহূর্ত পর্যন্ত

পথ চেয়েছিল বাতাস

বাতাস দৌড়ে এল

একটু অভিমান নিয়ে,

আর মহিলাটিকে বলল না যে

উদাস ভাবনাগুলি অপকারী।

কারণ বাতাস ভালোভাবেই জানে‐

নারী অবিহনে ভাবনাগুলি বেঁচে থাকে না

বাতাস মহিলাটির চুলগুলি

উড়াতে লাগল,

আর শাড়ির আঁচলটাও!

 

বাতাসের প্রতি কৃতজ্ঞতায়

মহিলাটির মুখে হাসি ফুটে উঠল

বাতাস বহুদিন দেখেনি

এরকম হাসি





এই শহরের সবচেয়ে

বুড়ো মানুষটি

প্রতিদিন বারান্দায় বসে অপেক্ষা করে থাকে খবরের কাগজটির জন্য

 

তার খবরের কাগজটি না পড়া পর্যন্ত যেন এই শহরে

সকালগুলি আসতেই পারে না।

 

খবরের কাগজটি  না পড়া পর্যন্ত

তাঁর গলা সকালের

এক কাপ চা ও গিলে না।

 

তাঁর পত্নী চায়ের কাপ নিয়ে

ঠিক তখনই উপস্থিত হয়

যখন তাঁর চোখ পড়তে শুরু করে

প্রথম পৃষ্ঠার শিরোনামগুলি

 

চায়ের কাপের সঙ্গে তিনি খবরের কাগজটি পড়ে শেষ করে

 

তারপরে তিনি

স্নান করতে যান

এবং

খবরের কাগজের সমস্ত অক্ষরগুলি ধুয়ে ফেলেন

 

তিনি খাওয়া চায়ের কাপটা ধুয়ে ফেলেন তাঁর

পত্নী।


প্রদীপ

 

জ্বলছিস হয়তো তুই 

পোড়ানোর জন্য আমার  বুকের  অন্ধকার?

তোর অর্ধেক জীবন গেল

 

একটুও অন্ধকার দূর হল না

জ্বলে জ্বলে এখন দেখছি

তুই শেষ হবি

নিজে  দেখছি ডুবে যাবি অন্ধকারে

 

কেবল ঈশ্বরই তোর খোঁজে আসবে

তিনি তো খুঁজে পাবেন না

এত অন্ধকারে তোর আত্মা

তোর খোঁজে পুনরায়

তোকেই জ্বালাবে ঈশ্বরও

ওহে অবোধ প্রদীপ

অন্ধকারও   দুঃখী

তোকে দেখে

কীভাবে বলি শুভ দীপাবলী???


 


1 টি মন্তব্য:

  1. অসাধারণ কবিতাগুলি। অনুবাদের আড়ষ্টতা নেই। সাবলীল গভীর ব্যঞ্জনা ময়।

    উত্তরমুছুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...