শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

পাখিদের পাড়া পড়শী- ৩// ১১ পঙ্কজ গোবিন্দ মেধি মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ-বাসুদেব দাস, Pankaj Gobinda Medhi, Pakhider Para Porshi তৃতীয় অধ্যায়, একাদশ অংশ

 পাখিদের পাড়া পড়শী- ৩// ১১


পঙ্কজ গোবিন্দ মেধি   


মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ-বাসুদেব দাস,  

Pankaj Gobinda Medhi, Pakhider Para Porshi

তৃতীয় অধ্যায়, একাদশ অংশ 



(১১)

 আজ রাস পূর্ণিমা।

 সকাল থেকে প্রতিটি কর্মীই ব্যস্ত। আজ আমাদের স্বপ্নের পর্যটক নিবাসটি বাস্তব রূপ লাভ করবে। গত তিন চার দিন ধরে আমাদের ব্যস্ততার আর শেষ নেই। নবজিৎ বৈশ্য, কীচক ,টিংকু, জেপি প্রত্যেকেই চাকরি থেকে তিন দিনের জন্য ছুটি নিয়েছে। পর্যটক নিবাসীর চারপাশে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রতিটি পরিবেশ কর্মী নিজের নিজের দায়িত্বে কাজ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করে চলেছে। আমি স্থায়ীভাবে কাজ করা প্রত্যেককেই নতুন কাপড় উপহার দিয়েছি। সৌম্যদা পাঠানো জনজাতীয় মানুষ দুটিকে, নব কাজ করার জন্য নিযুক্ত করা দুজন ব্যক্তিকে এবং নৈমিত্তিক কাজ করা অন্য চারজন ব্যক্তিকে। আজকের অনুষ্ঠানে তারা নতুন কাপড় পরে এসেছে। অনামিকা, জ্যোতিমালা, কাকিমা প্রত্যেকেই সুন্দর পরিষ্কার পোশাক পরে পরিচ্ছন্ন হয়ে সকাল থেকে পরিবেশটাকে সুন্দর করে তুলেছে। অচ্যুত পরিচালনার সমস্ত দিক সামলাচ্ছে। অতীতকে পুলক এবং রাতুল সাহায্য করছে। পুলকের বন্ধু এপেটাইজারের মালিক পাঠানো রাঁধুনী দুইজন আরও দক্ষ। ওরা দুজনেই নিষ্ঠাবান প্রকৃতি কর্মীর মতোই পরিবেশ পটু। কোথাও এক ফোঁটা নোংরা দেখতে পেলে কোনো একজন নয়, অন্যের কাঁধে থাকা গামছা দিয়ে হলেও মুছে দিচ্ছে। জানিনা,এই পটুতা কতদিন অব্যাহত থাকবে।

 অচ্যুত পুলক এবং রাতুল কফি রঙের জামা এবং কালো রঙের প্যান্ট পরেছে। শার্টের আস্তিনে লাগানো আছে কালো রঙের পটি।বাকি তিনজন ছেলে এবং দুটি মেয়ে ঘরের ভেতরে থাকা পর্যটকদের শুশ্রূষা করবে। ওদের পোশাকের রং নীল। কাপড়ের নির্বাচন অচ্যুত পুলকদের।সব বিষয়ে আমি হস্তক্ষেপ করতে চাইনি। দেখি না ওরা কাজটাকে কীভাবে সামলে নেয়। তবে আমি লক্ষ্য করলাম, ওদেরকে দু-চারটি কথা বলার প্রয়োজন আছে।

 গতরাতে আমরা প্রত্যেকেই পর্যটক নিবাসের কাজ শেষ হওয়া উপলক্ষে এক ভোজ সভায় মিলিত হয়েছিলাম। নতুন করে নিযুক্ত হওয়া রাঁধুনি ভরত এবং নরেন আমাদের আপ্যায়িত করেছিল। আমি সবার উদ্দেশ্যে বলেছিলাম তোমাদের স্থানীয় খাদ্য সম্ভারের উপরে গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের এখানে আসা পর্যটক বিদেশি খাদ্য সম্ভারের স্বাদ নিতে আসে না, আসে স্থানীয় খাবারের স্বাদ নিতে। সকালের আহারে পুরী দেবার চেয়ে কোমল চাল এবং দই দিয়ে আপ্যায়ন করার চেষ্টা করবে। সঙ্গে নারকেলের নাড়ু। চায়ের সঙ্গে কলা পাতায় করে পিঠা। কুলি পিঠার ভেতরে চিনি নারকেলের গুড়ি দিলে আমি তোমাদের সামনে লাউসের অভিজ্ঞতার কথা বললাম। অচ্যুতকে বললাম তুমি আমাদের স্থানীয় খাদ্য সম্ভারের তালিকা প্রস্তুত করবে এবং প্রতিটি গ্রাহকের সামনে সেটাই দেবে। কাসার থালা এবং বাটি দেখেছ, তারমধ্যে পুরী পরিবেশন করলে কেমন দেখাবে । জল খাবার জন্য পেতলের গ্লাস এবং ছোটো ছোটো ঘটি ব্যবহার করলে আমাদের আভিজাত্য কমবে না, বরং বাড়বে। স্থানীয় খাদ্য পরিবেশন এবং একান্তই আমরা ব্যবহার করা সাজ সরঞ্জাম আমাদেরকে পুরোনো কালের বলবেনা , নিজের পরিচয় দিতে কুণ্ঠা বোধ না করা জাতীয়তাবাদী হিসেবে পরিচয় দিতে হবে। খাদ্য পরিবেশনের সময় ছেলেদের আটহাতি ধুতি এবং জামা ব্যবহার করতে বলবে এবং তাদের জন্য সেরকম কাপড়ের ব্যবস্থা করবে।

 পর্যটক নিবাসে কাজ করা প্রতিটি কর্মীকেই মনে রাখতে হবে তারা প্রকৃতি কর্মী, তারা পর্যটন কর্মী ।তাদের প্রত্যেকেরই থাকতে হবে কর্ম তৎপরতা এবং সেবার মনোভাব ।কেউ যদি না পারে সে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেবে অথবা তাকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।

  মনে রাখবে তোমরা এক এক জন ব্যবসায়ী ।তোমাদের কর্ম পদ্ধতি ব্যবসার অনিষ্ট করলে তোমাদের নিজেদেরই তার ফল ভোগ করতে হবে।

 সফল ব্যবসায়ী বিপিন ডেকার উপরে আমার ভরসা আছে। তিনি পর্যটক নিবাসের প্রকল্পটিকে অন্তর থেকে গ্রহণ করেছেন। তারা প্রত্যেকেই পরিচালনার দিকটি দেখবে, কিন্তু পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ‌।বিজ্ঞাপন দিলে সাধারণ পর্যটক ভিড় করলে পরিবেশের উপরে বিরূপ প্রভাব পড়বে। অবশ্য সমস্ত পর্যটককে দশ মিনিটের জন্য প্রকৃতি পর্যটনের উপরে সাধারণ প্রশিক্ষণ একটা দেওয়া যেতে পারে। সঙ্গে তাদের হাতে একটা ছোটো পুস্তিকাও তুলে দেওয়া যেতে পারে, যেখানে প্রকৃতি পর্যটনের উপরে সম্যক আভাস উল্লেখ থাকবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কথা কাজগুলি এগিয়ে যাবে। অভিজ্ঞতা এবং অনুশীলন আমাদের অনেক কথা শেখাবে। সৌম্যদা এবং শৈলেশ চৌধুরী ভরসার যোগ্য। তারা প্রতিমুহূর্তে আমাদের সঙ্গে আছে। তাদের উপরে দায়িত্ব দিলে আমাদের নিবাসে পর্যটকের কোনো অভাব হবে না।

  উৎসবমুখর দিনটিতে আমি ঋণাত্মক দিকসমূহের উপরে আলোকপাত করতে চাইনি।সৌম্যদা পৃথক পৃথকভাবে প্রকৃতি কর্মীদের নিজের অভিজ্ঞতা থেকে যথাসম্ভব শলা পরামর্শ দিচ্ছে।কোথায় কী তৈরি করলে দেখতে ভালো লাগবে– বিপিন ডেকা ও দেখিয়ে গেছে। আমি জানি এইসব এই মুহূর্তের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নয়। তথাপি প্রতিজন প্রকৃতি কর্মীর নিজস্ব ইচ্ছা অভিলাস আছে। তাতে বাধা দেওয়ার কোনো প্রয়োজন আমরা কেউ অনুভব করছি না।

   বিপিন ডেকা প্রতিটি টেপে জল ভালো করে বইছে কিনা পরীক্ষা করার জন্য জলের টেপগুলি খুলে দেখছে। জিজ্ঞাসা করছে জলাধারে পর্যাপ্ত জল উঠিয়ে রাখা হয়েছে কিনা। জেপি প্রতিটি পর্যটক নিবাসী দরজার সামনে ধুপ কাঠি জ্বালিয়ে দিয়েছে। সুনন্দ পড়ে থাকা কলাপাতার টুকরো একটা উঠিয়ে নিয়ে পাশের নোংরা ফেলার জায়গায় ফেলে দিয়েছে। রাতুল পাইপ দিয়ে চারপাশে জল ছিটাচ্ছে।নবজিৎ সন্ধ্যার কার্যসূচী সফল করার জন্য ব্যস্ত। সে অভিনেতা মৃদুল ভুইয়া এবং অভিনেত্রী প্রস্তুতি পরাশরের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করায় ব্যস্ত। তারা দুজনেই সময় মত না এলে অসুবিধা হবে। তারা দুজনেই নবজিতকে আশ্বাস দিয়েছে তারা নির্দিষ্ট সময়ের দশ মিনিট আগেই পৌঁছে যাবে।দুজনকেই মনে করিয়ে দিয়েছে শরাইঘাটে প্রতিদিন যানজট হয়। সঙ্গে এটাও বলেছে নলবাড়ির হরি মন্দিরের রাস মহোৎসব উদ্বোধন করার সময় পর্যটক নিবাসের দ্বার উন্মোচন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।নবজিতের মতে তার মধ্যে কোনো ধর্মীয় কারণ নেই,হরি মন্দিরের মাধ্যমে প্রচলিত হওয়ার জন্য সামাজিক পরম্পরা রক্ষা করাই একমাত্র কারণ। তারা দুজনেই নবজিতকে উল্টে অনুরোধ জানিয়েছে তোমরা সময়ে শুরু করবে। তোমাদের ওখান থেকে গিয়ে আমাদের প্রথম দর্শনীর জন্য প্রস্তুত হতে হবে।যেতে হবে টিহুতে। নবজিৎ নির্দিষ্ট সময় পাঁচটা দশ মিনিটে আরম্ভ হবে বলে পূর্ণ আশ্বাস দিয়ে তাদের আমন্ত্রণ নিশ্চিত হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি অনুভব করেছে।

  প্রকৃতি কর্মী অধর এবং শ্বাহ আলম কাছের অগ্নিশালা গ্রামে গিয়ে আতশবাজি কিনে এনেছে। অগ্নিশালা গ্রামে ব্রিটিশ শাসন কাল থেকেই পরম্পরাগত ভাবে উন্নত মানদন্ডের আতশবাজি নির্মাণ করে। দুই প্রকৃতি কর্মী আতশবাজি কিনে এনেছে বলে জানতে পেরে সৌম্যদা দুজনকেই ডেকে আনল। সৌম্যদা দুজনকেই তোমরা আতশবাজি এনেছ নাকি বলে জিজ্ঞেস করায় দুজনেই এনেছে বলে জানাল। তখন সৌম্যদা বললেন— তোমরা জান না,তাই তোমাদের ভুল হয়েছে বলতে পারিনা। তোমরা জেনে রাখ আতশবাজি প্রকৃতির ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। এতে ব্যবহার করা রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশ দূষিত করে।। আতশবাজির উজ্জ্বল আলো এবং শব্দ বন্যপ্রাণীদের আতঙ্কিত ভীতিগ্রস্ত করে তুলে। তোমরা কল্পনা কর তো এখানে জ্বালানো আতশবাজি কত আলো এবং শব্দের সৃষ্টি করবে। আশেপাশের অরণ্যে থাকা জীবজন্তুগুলি সেই আলো দেখতে পাবে। এবং শব্দ শুনতে পাবে। ওরা তখন ভয়ে এখান থেকে দূরে চলে যাবে। প্রকৃতি কর্মী হিসেবে তোমরা নিশ্চয়ই এরকম ভুল করবে না।

অধর এবং শ্বাহ আলমের মনে সৌম্যদার মন্তব্য গভীর প্রভাব বিস্তার করল।ওরা দুজন আতশবাজি এনেছে বলে জানতে পেরে যে কয়েকজন তরুণ প্রকৃতিকর্মী আনন্দ পেয়েছিল তাদের অধর এবং শ্বাহ আলম ফটকা এবং আতশবাজির অপকারিতার বিষয়ে সৌম্যদা বলা কথাগুলি জানানোয় ওরা জিজ্ঞেস করল তাহলে এখন কী হবে ? তখন অধর এবং শ্বাহ আলম বলল, আজকের কথা তো আলাদা, জীবনে আর কখনও ফটকা আতশবাজি জ্বালানো হবে না।অন্যেরা জ্বালাতে চাইলে তাদের বাধা দেব।

 পর্যটক নিবাসকে কেন্দ্র করে ঘটতে থাকা বিভিন্ন কার্যাবলী চেতন অথবা অবচেতনভাবে আমার চোখের সামনে পার হয়ে যাচ্ছে। আগামীকাল থেকে আমি অতি সন্তর্পনে পর্যটক নিবাসের বিভিন্ন কার্যাবলী থেকে সরে আসছি। যে গাছের নিচে চেয়ার পেতে আমরা পর্যটক নিবাস নির্মাণের সম্পূর্ণ কার্যাবলী প্রত্যক্ষ করেছিলাম, সেখানে এখন সুন্দর ফুলের বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। লাল রংয়ের নার্জি ফুলের গাছগুলি দ্রুত বেড়ে চলেছে এবং দুই একটি ফুলের কলি প্রস্ফুটিত হয়েছে ।আমি বাগানের কাছে এটা চেয়ার পেতে বসে একা প্রকৃতি কর্মীদের কাজকর্ম গুলি নিরীক্ষণ করছি। সবাই নিজের নিজের কাজে ব্যস্ত। দিনের বেলা স্থানীয় এয়োরা নাম প্রসঙ্গ করার কথা। সুনন্দের মা এবং কাকিমা নাম প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়েছে। তাদের দলটি প্রয়োজনীয় বাদ্যযন্ত্র হাতে নিয়ে ইতিমধ্যে এসে উপস্থিত হয়েছে। দলটি হলঘরের ভেতরে প্রসঙ্গের বিধিব্যবস্থা করছে। তাদের চা জল খাবার দেবার জন্য অনামিকা জ্যোতি মালা জুলিয়েট ব্যস্ত। ভরত এবং নরেন ব্যস্ত নাম প্রসঙ্গে অন্তত আয়োতি এবং উপস্থিত লোকের জন্য খিচুড়ি প্রস্তুত করায়। সৌম্যদা একদল ছেলেমেয়ে নিয়ে গ্রামের প্রতি ঘর মানুষের বাগান বস্তিতে রোপণ করা গাছের চারাগুলি কীভাবে যত্ন নিচ্ছে দেখতে গিয়েছেন। কেউ প্রয়োজন অনুসারে যদি গাছের চারায় বেড়া দিয়ে ঘেরাও করেনি,তাদের সাহায্য করার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সঙ্গে নিয়ে গেছে।আগাছা উৎপাদিত করার জন্য খুন্তি খুরপি সঙ্গে নিয়েছে। সৌম্যদার সঙ্গে যাওয়া প্রকৃতি কর্মীদের উৎসাহের অন্ত নেই।সৌম্যদা ওদের সামনে দেখতে পাওয়া পাখিগুলির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। প্রকৃতি সংরক্ষণের দুই-চারটি জ্ঞাতব্য কথা বলে চলেছেন।প্রতিঘর মানুষ গাছের চারা সংরক্ষণে আন্তরিকতার সঙ্গে যত্ন করতে দেখে তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

  সৌম্যদা এসে আমার সামনের খোলা জায়গাটায় বসেছেন।বসে থাকা প্রকৃতি কর্মীদের সামনে দাঁড়িয়ে সৌম্যদা তাদের বিভিন্ন প্রশ্ন করে চলেছেন।সৌম্যদার কাছে একটি পুঁটলি।পুঁটলিতে কী আছে আমি জানি না।সৌ্ম্যদা প্রকৃ্তি কর্মীদের জিজ্ঞেস করছে---তোমাদের মধ্যে কে কে গাছের চারা রোপণ কর এভবগ দেখাশোনা করার সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃ্তি সংরক্ষণে বিশেষ পারদর্শিতা দেখিয়েছ?তাঁদের নামগুলি তোমাদের মাঝখান থেকেই বল।এমনিতেই বলে দিও না।একজন প্রকৃ্তি কর্মীকে সৌম্যদা নামগুলি লিখে যেতে বলল।

 উঠে দাঁড়িয়ে একজন বলল—নয়ন।

 নয়নের কথা আমার মনে পড়ল।নীতি নির্ধারক কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকার সময় সে আমাকে একজন মানুষের গাছ কাটা দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল।

অন্য একজন বল—অবিনাশ।

 ঠিকই বলেছে প্রকৃতি কর্মীটি।অবিনাশ একটা ভামকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেছে।প্রায় পঞ্চাশজন প্রকৃ্তি কর্মী দল থেকে এরকম দশজন প্রকৃ্তি কর্মীকে নির্বাচন করে বের করা হল।সৌম্যদা বলায় ছেলেটি বিশেষভাবে পারদর্শী প্রকৃ্তি কর্মীদের নামগুলি পুনরায় আওড়ে গেল।

 --তোমাদের কারও কোনো ওজর আপত্তি আছে।

 নাই বলে প্রকৃ্তি কর্মীরা সামগ্রিকভাবে হাততালি দিয়ে সমর্থন জানাল।

 সৌ্ম্যদা একজন প্রকৃ্তি কর্মীকে তার কাছে থাকা পুঁটলিটা খোলার জন্য বলল।পুঁটলিটা খোলার পরে সবাই দেখতে পেল তাতে কয়েকটি স্পোর্টিং গেঞ্জি রয়েছে।সৌ্ম্যদা তারই একটা হাতে নিয়ে সবাইকে দেখাল।সাদা রঙের গেঞ্জিটার সামনের ভাগে একটা দহিকতরার (এক ধরনের মিষ্ট কণ্ঠের পাখি)ছবি।আর পেছন দিকে টাইপ করে লেখা আছে দহিকতরা।শব্দটির নিচে একটা আঁচ।আঁচটার নিচে হাতের অক্ষরে লেখা আছে –দশের হিতে কাজ ত্যাগের সঙ্গে কর।সৌ্ম্যদা বিশেষ পারদর্শিতা প্রদর্শন করা প্রকৃ্তি কর্মীদের এক একটা স্পোর্টিং গেঞ্জি উপহার দিল।

 — এটা তোমাদের করা ভালো কাজের বিপরীতে দেওয়া সম্মান। এই সম্মান তোমরা ধরে রাখতে চেষ্টা করবে। যারা এই সম্মান আজ লাভ করনি, কাল লাভ করার জন্য তোমরাও চেষ্টা করবে। নিশ্চয় পারবে। এই স্পোর্টিং যেখানে সেখানে পরে যাবে না। সম্মানজনক স্থানে পরবে।

 সৌম্যদা দুজন প্রকৃতি কর্মীর মাধ্যমে সুনন্দ, নবজিৎ বৈশ্য, পুলক, রাতুল, কীচক ,অচ্যৃত , অনামিকাদের ডেকে এনে দশ জনকে সম্মানজনক স্পোর্টিং প্রদান করল।

 গাছের নিচের চেয়ারটাতে একা বসে অবচেতনভাবে আমি এই দৃশ্যগুলি দেখতে পাচ্ছি।আমি দেখতে পাচ্ছি অনামিকা আমার দিকে এগিয়ে আসছে। অনামিকার বেশভূষা দেখে আমি আশ্চর্য হয়ে পড়লাম। আশ্চর্য নয়, বলা যেতে পারে আপ্লুত হয়েছি। সে দহিকতরা স্পোর্টিং পরার সঙ্গে সৈনিকরা ব্যবহার করা একটা সবুজ প্যান্ট এবং সৈনিক ব্যবহার করা একজোড়া কাপড়ের জুতো পরে এসেছে। উপস্থিত প্রত্যেকেই একদৃষ্টে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। কাছে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমি উঠে দাঁড়ালাম এবং স্যালুট প্রদর্শন করে অভিবাদন জানালাম। সবার সামনেই সে আমাকে জড়িয়ে ধরল। তার দুচোখ থেকে উষ্ণ অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। কিছুক্ষণ পরে সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে দুই হাতে মুখটা ঢেকে ধরল। আমি জানতে পারলাম না সে জ্যোতিষ ব্যবহার করা পোশাক পরিধান করে এভাবে জ্যোতিষকে স্মরণ করছে, না জ্যোতিষের আদর্শ সামনে রেখে নতুন জীবনটা আরম্ভ করবে বলে স্থির করেছে। আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকা প্রত্যেকেই পুনরায় নিজের নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

 কিছুটা লাজুক ভাবে অনামিকা এসে আমার পাশে বসলো এবং সে হঠাৎ নিজেকে বদলে ফেলল।

 —ইস। আপনি একা বসে আছেন। আপনাকে লক্ষ্য করছি আপনি গত দুদিন থেকে আমাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে আপনি দূরত্ব বজায় রাখছেন। আপনি চা খেয়েছেন?

অনামিকা একসঙ্গে জিজ্ঞেস করা প্রশ্নগুলির কোনটির উত্তর দেব আমি ঠিক করতে পারছি না।

 — খাইনি।

 আমি চা খাই নি বলে সাধারণভাবে বলে রাখলাম। সে আমাকে কিছু না বলে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেল। পেছন থেকে তাকে সামরিক বাহিনীতে কাজ করা কোনো মহিলা অফিসারের মতো দেখাচ্ছে। আমি জানিনা, অসমের অন্য কোনো গ্রামে হলে অনামিকা এভাবে এগিয়ে আসতে পারতেন কিনা। কিন্তু বর কুরিহা গ্রামটি সত্যিই আদর্শগত ভাবে ব্যতিক্রম। কার ও প্রতি কুনজর দেবার জন্য এখানে প্রত্যেকেরই যেন সময়ের অভাব। অনামিকা এক কাপ চা এবং একটা নিমকি নিয়ে ফিরে এলেন। আমি তার হাত থেকে শুধুমাত্র এক কাপ চা নিলাম।

 — নিমকি খাবেন না?

 — না খাই না।

 —কেন?

 — ইচ্ছা নেই।

 অনামিকা গুমোট ভাবে আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল।

 — আপনার দেখছি আজকাল কোনো কিছুতেই ইচ্ছা নেই।

 অনামিকা কোনোরকম ভুল বলছে না। সত্যি। শেষ পর্যন্ত কোনো কিছুতেই আমার ইচ্ছা নাই হয়ে গেছে।

 আমি ভাবতে শুরু করেছি আমার ইচ্ছার কোনো অংশ পূরণ হল মানে আমার করার কাজ শেষ হয়ে গেল। কখন ও আবার ভাবি মনের মধ্যে কল্পনার সৌধ না তৈরি করে আমি কীভাবে বেঁচে থাকব। গ্রামটি অরণ্য হয়ে উঠতে আর ও পাঁচ বছর সময় লাগবে।

 — কী হল, কিছুই বলছেন না দেখছি?

 — অনেক প্রশ্নের উত্তর না থাকার মতো অনামিকা, আমার হাতে তোমার তোমার প্রশ্নেরও উত্তর নেই।

 আমি নিজের কাছ থেকে অথবা আইনের কাছ থেকে পালাতে চাইলে প্রশ্নের উত্তর না থাকার অজুহাত দেখাই অথবা এভাবে সিদ্ধান্ত নিই। আমার মনের মধ্যে মাঝেমধ্যে উঁকি দেওয়া নিরাশা এবং হতাশায় অন্যের উৎসাহে ঠান্ডা জল ঢালা অনুচিত। সমস্ত কিছু অনির্ণেয় বলে ভাবলেও, কাজের ফলাফল আছে বলেই আমি অনির্ণেয়তাকে ধ্যান করে হাত গুটিয়ে বসে থাকি না।আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য চেষ্টা করলাম।

  --না অনামিকা।আমি মাঝে মধ্যে আমার সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসি। আমি ভাবি পৃ্থিবীতে আমার চেয়ে আমার অন্য কোনো ভালো সঙ্গী থাকতে পারে না।আমি আমার সঙ্গে থাকলে জানই তো ,আমার জন্য বাস্তব পৃ্থিবীটা পরিবর্তিত হয়ে যায়।কখনও নিজের সঙ্গে সময় কাটিয়ে দেখ।

 উদয়নদা, আমি ক্ষণিকের জন্য ভাবি না আমার পৃথিবীটাতে শুধু আমি বসবাস করছি। আমার পৃথিবীটা বহুমাত্রিক। সেখানে সবাই থাকে। আমার সম্পর্কিতরা, বন্ধুবান্ধবরা, পরিচিত অপরিচিত অনেকেই। সেই পৃথিবীতে থাকে প্রাকৃতিক এবং অপ্রাকৃতিক বিচিত্র সম্পদ এবং ঘটনা রাজি। জীবন চক্রের বাস্তব পরিঘটনা।।এই সমস্ত কিছুকে অস্বীকার করে আমি শুধু আমার সঙ্গে জীবন কাটাতে অনিচ্ছুক।

 অনামিকা আমাকে আমার পৃথিবী থেকে বের করে আনল। তার মানে আমার জন্য দুটি পৃথিবী,একটিতে আমি একা থাকি অন্যটিতে আমি এবং আমার সঙ্গে থাকে অনেকেই। যান্ত্রিকতা এবং প্রাকৃতিকতার মধ্যে বিচরণ করে আমার মনের মধ্যে দুই চিন্তার ধ্বংসাবশেষ আমি গড়তে চাইছি নাকি? আমি নিজেকে লুকানোর জন্য চেষ্টা করলাম।

 আয়োতিরা নাম প্রসঙ্গ করার জন্য প্রস্তুত হয়েছে কি অনামিকা? ও দাঁড়াও, সৌম্যদা এবং তার সঙ্গে যাবার ছেলেমেয়েগুলোর দলটি খাওয়া দাওয়ার দিকে তুমি একটু লক্ষ্য রাখবে।

—আয়োতির দলটি নাম প্রসঙ্গ ইতিমধ্যে আরম্ভ করেছে। আপনি বোধহয় সেদিকে খেয়াল করেননি। প্রকৃতি কর্মী ছেলেমেয়েদের জন্য বেলের শরবত এবং ওদের জন্য প্রত্যেকের সঙ্গে খিচুড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে।।

 অনামিকা বলার পরে আয়োতিদের করতালি তালের শব্দ এবং বাদ্যযন্ত্রের ধ্বনি এসে আমার কানে লাগল। নিজের পৃথিবীতে যে এরকমই। নিজেকে সম্পূর্ণ নিজের সঙ্গে ব্যস্ত করে রাখে।

—-আমি আসছি। আমার একটু কাজ আছে। আপনার কাজ একেবারে শেষ হয়ে যাওয়া বলে কেন ভাবছেন? বহির্মুখী একজন মানুষ হঠাৎ অন্তর্মুখী হয়ে যাবেন না।এবার বৈশাখে দেখবেন গাছের চারাগুলি দ্রুত বেড়ে চলেছে।নতুন নতুন পাতা বের হবে।ওরা একফুট উঁচু হবে।গাছের চারাগুলির আগে মনগুলি বেঁধে নিলে আমরাও ওদের মতো উঁচু হয়ে যেতে থাকব।

তাজ্জব ব্যাপার।আমি হতচকিত হয়ে পড়লাম।অনামিকা আমার নিজস্ব পৃ্থিবীটা খান খান করতে চেষ্টা করছে।অরণ্য গ্রাম এবং পর্যটক নিবাসের কাজ করার পর থেকে মা আমার সঙ্গ ত্যাগ করেছে।

আমি চেয়ার থেকে উঠে এসে আয়োতিদের নাম-পর্ব শুনতে লাগলাম।সুর দিয়ে গাওয়া তাঁদের সঙ্গী্তের কথাগুলি একেবারে অব্যর্থ ।এটি পুনরায় এরকম পৃ্থিবী যেখানকার সমস্ত বাসিন্দা কর্মবিমুখ হতে ইচ্ছুক।আর আমার এরকম মনে হয় তাঁরা যেন সামূহিকভাবে আত্মহত্যা করার জন্য অপেক্ষা করছে।

এতদিন মনে না আসা চিন্তাগুলি আজ হঠাৎ আমার মনে কেন আসতে লাগল।বাপুটি কোনোভাবে জানতে পারলে সে এসে বলবে—আমি বলেছিলাম না,আপনাকে ভূতে পাবে।এখন আপনাকে ঝাঁড়ফুক করতে হবে।

পুরোহিত শর্মা এসে আমার পাশে বসল।

--আপনার পাশে এসে বসাটাই এখন ভাগ্যের কথা।

এবার পুনরায় আমার পাশে এসে বসল ভাগ্য।সবাই নিজের নিজের কাজে ব্যস্ত।আজ আমার সেরকম ব্যস্ততা নেই।সময় পার করার জন্য আমি পুরোহিত শর্মাকে ঘিরে ধরলাম।

--ভাগ্য মানে পুন্য।ভাগ্য মানে ঈশ্বরের সুমতি।ভাগ্য মানে মন চাওয়া সফল।শর্মাবাবু ভাগ্য মানে কি?

পুরোহিত শর্মা আমার কাছ থেকে এই ধরনের প্রশ্ন আশা করেন নি।

--ভাগ্য মানে কী হবে?আমরা যা চাই তা পাওয়া তো।না পেলে দুর্ভাগ্য।আমরা বলি সেটা কপালেই লেখা থাকে।

--আমার কপাল আপনি পড়তে পারবেন শর্মাবাবু?

--কেউ কারও কপাল পড়তে পারে না।সেইজন্য হয়তো আমরা ভাগ্য এবং দুর্ভাগ্যকে শ্লেটে আঁকতে পারি না।পারলে বলতে পারতাম আগামীকাল আপনার জীবনে কী হতে চলেছে।

শর্মার মন্তব্য শুনে থাকা অবস্থায় দেখতে পেলাম সৌ্ম্যদা ছেলেমেয়েদের দলটিকে নিয়ে ভাত খাবার ঘরে এসেছে।তিনি সোজাসুজি আমাদের কাছে এলেন এবং প্রকৃ্তি কর্মীদের ভাত খাবার ঘরে যেতে বললেন।আমি তার দিকে একটা চেয়ার এগিয়ে দিলাম।পুরোহিত শর্মার সঙ্গে অদৃষ্টকে নিয়ে আর বেশি কথা বলা হল না।

--তুমিও আমাদের সঙ্গে যেতে পারতে।গাছের চারাগুলি সুন্দরভাবে গড়ে উঠছে।গ্রামের প্রায় প্রতিঘর মানুষই গাছের চারাগুলিকে খুব সুন্দরভাবে যত্ন করছে।গোয়ালঘরের গরু এবং চারাগাছটির মধ্যে তারা কোনো পার্থক্য করছে না।দুই তিন বছরের মধ্যেই গ্রামটা পুরো সবুজ হয়ে উঠবে।

সবুজ হতে চলা গাছের চারাগুলির কাছ থেকে ফিরে এসে সৌ্ম্যদা পুরো মানুষটা সবুজ হয়ে পড়েছে বলে আমার মনে হল।আমরা অনেকক্ষণ ধরে সবুজ হতেঁ চলা অরণ্য গ্রামটি সম্পর্কে কথা বললাম।অনামিকা এসে কিছুক্ষণ আমাদের কাছে বসল।সে আমার মনোভাব বুঝতে পারল না।এক ঘণ্টা আগের মানুষ একজন একঘন্টা পরে কীভাবে বিশেষভাবে বদলে যেতে পারে,হয়তো তার চিন্তা এবং বোধের ধারণার বাইরে ছিল। তবে আমি সেকথা জানি। একজন মানুষ চিন্তা জগত থেকে বাহনের পিস্টনের মতো বাইরে-ভেতরে করতে থাকে।সেই পিস্টনের মসৃণতা নির্ভর করে চিন্তার তৈলাক্ততার ওপরে।

দিনটা আমার কাছে বিচ্ছুরিত চিন্তা এবং কল্পনার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হল।

অনামিকা হয়তো আমাকে জানতে বা বুঝতে এসেছিল,হয়তো সে ভেবেছে আমি নিজেই একটা রহস্য।

মাথার ওপরে ধীরে ধীরে উঠে এসেছে বিশাল আকৃ্তির চাঁদ।দশদিক রূপোলি জ্যোৎস্নায় ভরপুর।শীতল বাতাস এবং রাশি রাশি শিশিরের কণা অনন্য পরিবেশের সৃষ্টি করেছে।অভিনেতা মৃদুল ভূঞা এবং প্রস্তুতি পরাশর ফিতা কেটে আমাদের স্বপ্নের পর্যটক নিবাসকে বাস্তবে উপস্থাপন করল।আগামীকাল থেকে তারা আমাদের অতিথি হবে।।উলুধ্বনি এবং হাততালির মধ্যে ফিতার বাইরে থাকা প্রকৃ্তি কর্মিরা পর্যটনক্ষে্ত্রে প্রবেশ করছে।অস্বচ্ছ আলোতে ঝি্লমিল করে উঠছে পর্যটন মণ্ডল।তারা এক এক করে প্রতিটি ঝুপড়িতে প্রবেশ করছে।মন্তব্য দিতে গিয়ে বলছে অনন্য।গ্রন্থাগারটিতে ঢুকে তারা অতিশয় আপ্লুত।প্রকৃ্তি কর্মীর জন্য,পর্যটকদের জন্য গ্রন্থাগার ,তারা ভারতবর্ষের কোনো পর্যটন ক্ষেত্রে নাকি এই ধরনের সাত্তিক প্রচেষ্টা দেখতে পায় নি।বিভিন্ন জন প্রকৃ্তিকর্মী,এমনকি ভরত এবং নরেনও তাদের সঙ্গে সেলফি উঠছে।পর্‍্যটকের মন্তব্য খাতায় তাঁরা আবেগের সঙ্গে লিখেছে –পরম করুণাময় পর্যটক নিবাসটিকে সুদৃষ্টি প্রদান করুক।

সৌম্যদাকে সঙ্গে পেয়ে দুই অভিনেতা এবং অভিনেত্রী আন্তরিকতার সঙ্গে বার্তালাপ করছে।গণ্ডারের খড়গের হিসেব বহির্ভূত এবং বেসরকারি বিশৃঙ্খল সম্পর্কে সৌ্ম্যদা নেওয়া ভূমিকার প্রশংসা করছে।সমস্ত ধরনের সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছে।এগুলিই সামাজিক দায়বদ্ধতার ধনাত্মক দিক।

পরম্পরাগত আতিথ্যে অভ্যাগতদের অভ্যর্থনা করার পর্ব চলছে।

আজকের দিনটিতে আমি আমাকে সমস্ত ব্যস্ততা থেকে সরিয়ে রেখেছি।তাই বহুদিনের মাথায় আমি আজ সম্পূর্ণ চাঁদটিকে নিজস্ব আকাঙ্খায় প্রত্যক্ষ করার সুবিধা লাভ করেছি।আমি একপা দুপা করে পাখিদের পাড়া পড়োশির দিকে এগিয়ে গেলাম।চোখের আড়ালে সমৃদ্ধ সারি সারি গাছের চারার মধ্য দিয়ে আমার সঙ্গে চাঁদ ও হাঁটতে লাগল।পাখিদের পাড়া প্রতিবেশীর মৃত শিশু গাছটির হেলানো জায়গাটিতে বসে আমি সামনের শিমূল গাছ দুটির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছি।চাঁদের আলোতে শিমূল দুটির ছায়া কেঁপে কেঁপে জলাশয়ের জলে নৃ্ত্য করছে। নিবারণের জন্য অকালে হারানো শিমূল গাছটির কথা আমার খুব মনে পড়ে গেল।সেই গাছটিতেই বকের সংসার পাতার জন্য প্রাণপনে চেষ্টা করছিল।জলাশয় থেকে ভেসে আসা একটা ঠান্ডা বাতাস আমাকে ক্ষণিকের জন্য নাড়া দিয়ে গেল।আমি দেখতে পাওয়া শিমূল গাছদুটির উঁচু শিমূল গাছটাতে কয়েকটি বকের ছায়া মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে।ওরা চাঁদকে ঢেকে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা করছে।পাখিদের পাড়াপড়োশীর আবাসীদের দেখতে পেয়ে আমি আত্মহারা হয়ে পড়লাম।দিনটির সমস্ত ঋণাত্মক চিন্তাকে মুছে ফেলার জন্য আমি সম্ভবত এই মুহূর্তটির জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।

প্রাকৃ্তিক চেয়ারটিতে বসে থাকা থেকে আমি দেখতে পেলাম কেউ একজন আমার দিকে এগিয়ে আসছে।আমার খোঁজে এসে অনামিকা পাখিদের পাড়া পড়োশিতে পৌছে গেল নাকি?


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...