রম্যরচনা
"... বান্ধবী ললিতা..."
কাশীনাথ সাহা
আমাদের ব্যথা একজায়গায় নয়।নানান জায়গায় ব্যথা চড়বড়িয়ে উঠেছে। বাঙালির প্রেমে ব্যথা, বিরহে ব্যথা,প্রতিবেশীতে ব্যথা,নালিশে ব্যথা!পুলিশে ব্যথা,হেলমেট না থাকলেই দু'হাজার। চাকরিতে ব্যথা,নিয়োগে ব্যথা, ডি.এ তে ব্যথা।বউয়ে ব্যথা, পরকীয়ায় ব্যথা!আরও আরও গোপন অনেক ব্যথা আছে বাঙালিদের সেগুলো উল্লেখ করা সমীচীন নয়। বাঙালি এখন প্রেমে পড়তেও ভয় পাচ্ছে! প্রেমে তো পড়বো। তারপর? প্রেমিকা যখন বিয়ের বায়না ধরবে তখন কি হবে! চাকরির অবস্থা তো তথৈবচ! চাকরি বিহীন প্রেম চলে বিবাহ চলে না। অতএব, ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না। ইদানিং সন্দেশখালি -র ব্যথাটাও বেশ চনমনিয়ে উঠেছে। বেশ তো গটগটিয়ে চলছিল রাজ্যটা। দু'চারটা নেতা-মন্ত্রীরা জেলে ঢুকলেও বাকীরা আগামী ভোটে জিতবেই জিতবে নিশ্চিন্ত হয়ে দখিনা বাতাস খাচ্ছিল। দিদিমণি ও লক্ষ্মী ভান্ডার ৫০০ থেকে হাজার। ডি এ আরও ফোর পার্সেন্ট। ব্যস বাঙালির আর কি চাই৷ সবই লাইন বরাবর চলছিল, কিন্তু কোথা থেকে বেআক্কেল ভাবে সন্দেশখালি ঢুকে সব গড়বড় করে দিল। এ ব্যথা কি যে ব্যথা বোঝে কি আনজনে সজনি আমি বুঝি মরেছি মনে মনে.... । বলা নেই কওয়া নেই এক্কেবারে সর্বাঙ্গে ব্যথা ধরিয়ে দিয়েছে সন্দেশখালি! লক্ষ্মীর ভান্ডারের ফায়দা এক্কেবারে মাঠে মারা গেল! কেন্দ্র সরকারও ঝোপ বুঝে কোপ মারতে ময়দানে নেমে পড়েছে। ইতনা সুনহারা মওকা কঁহা মিলে গা! বাম আর কংগ্রেসীরা এখনও ধরি মাছ না ছুঁই পানি... । কি করবে কোন পথে লড়াইটা চালাবে বুঝতে পারছে না। এটা হলো I.N.D.I.A জোটের ব্যথা! পথে এবার নামো সাথী পথেই হবে ব্যথা চেনা...!কিন্তু পথ কোথায়? এখন পেট ব্যথা,মাথা ব্যথা,হাঁটুতে ব্যথা,দাঁতে ব্যথা কোমরে ব্যথার মতো অন্য শাশ্বত ব্যথা গুলো আর ঠিক টের পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ কেউ তো আবার ব্যথা বাড়িয়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসনের সাইনবোর্ড সামনে ঝুলিয়ে দিয়েছে। কবিদেরও ব্যথা টনটনিয়ে উঠেছে! কবিদের কলম তো আগেই বেশ চড়া দামে বিক্রি হয়েই গেছে। অনেক শ্রী, উপাধি, উত্তরীয়, স্মারক আর মঞ্চে একটা নড়বড়ে চেয়ারের লোভে কবি আর কবিতার মেরুদণ্ড বেঁকেই গেছে। দু একজন যাঁরা এখনোও কবিতায় একটু আলতো উষ্ণতা ছড়াবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারাও সচেতন।মেপে পা ফেলছে। পরের ব্যথা আঙুল টিপতে গিয়ে নিজেই না গাড্ডায় পড়ে! বুদ্ধিজীবীরা পথে নামবো নামবো করেও মোমবাতির অভাবে পথে নামতে পারছেন না। নামলেই ব্যথা... দুয়ারে ব্যথা!সংগীত শিল্পীরা গলা ছেড়ে গান গাইছে, তুমি অনেক যত্ন করে আমায় ব্যথা(দুঃখ) দিতে চেয়েছো দিতে পারো নি।যদি বলি আমিও তো ডুবেছি তুমিও কি একটুও ডুবোনি...
ঘরের বউ বলে দিয়েছে, ওসব সন্দেশখালি না সন্দেশভর্তি তা জেনে তোমার লাভ নেই। ও বিষয় নিয়ে একটাও উচ্চবাচ্য চলবে না। মনে রেখো লক্ষ্মী ভান্ডার একহাজার হো গয়া! এখন আমরা সবাই লক্ষ্মীশ্রী!কিছু ব্যাগড়বাই করেছো কি পিটিয়ে বৃন্দাবন দেখিয়ে দেব! অতএব কোন কোন জায়গায় ব্যথা তা এখন নিজেই বুঝতে পারছি না।
এদিকে দুদিন বাদেই ২১ শে ফেব্রুয়ারি। আন্তর্জাতিক স্বাধীনতা না কি একটা দিবস! ভাষা দিবস কি? ওটা আবার কি দিবস? ভ্যালেন্টাইন্স দিবসের মতোই কি? কি হবে ওইদিন? একটু সাজুগুজু। একটু কবিতা গান বক্তৃতা নেকু নেকু মিছিলে, আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি...। একটা দুটো পত্রিকা প্রকাশ! সেই পত্রিকায় যার কবিতা ছাপা হয় সেই কবি নিজের কবিতাটি বার দশেক পড়ে বইটি তাকে তুলে রাখে। উইকে খাওয়ানোর জন্য! এ ব্যথা বাঙালির নতুন ব্যথা! স্যরি ব্যথা না হুজুগ! চলুক এসব নিয়েই আমরা বেঁচেবর্তে থাকতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মমতা, মোদি,মা মাটি মানুষ, জয় শ্রীরাম,ইনকিলাব, বন্দেমাতরম, ভারতমাতা কি জয়।সবকিছুতে জড়িয়ে ব্যথা ভর্তি শরীর নিয়ে ভুবনেশ্বর এইমস্ নয়তো ভেলোর,চেন্নাই ছুটছি। ছুটেই চলেছি...,
আর মাঝে দেশাত্মবোধক সঙ্গীতের সাথে তাল মেলাচ্ছি... তোর কোন কোন জায়গায় ব্যথা গো বান্ধবী ললিতা!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন