হে আমার স্বদেশ- ৪৯
সন্তোষ কুমার কর্মকার
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস, Basudev Das
লেখক পরিচিতি--এ সন্তোষ কুমার কর্মকার একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, শিশু সাহিত্যিক এবং অনুবাদক।বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায় ১৯৫৩ সনে শ্রীকর্মকারের জন্ম হয়।পিতা কানাইলাল কর্মকার। ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে সপরিবারে ভারতে চলে আসেন। প্রাথমিক শিক্ষা অসমের বরপেটায়।গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত বিভাগে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। রচিত উপন্যাস গুলি যথাক্রমে গৃহভূমি, শঙ্খ ধ্বনি, পদাতিক, সুবর্ণরেখা,অ মোর আপোনার দেশ, কালান্তরর কথকতা, শিপার সন্ধানত, ইত্যাদি। ছোটগল্প,বেশ কিছু শিশু উপন্যাস এবং অনুবাদ গ্রন্থ রচনা করেন।২০২১ সনের এপ্রিল মাসে এই মহান লেখকের মৃত্যু হয়।১৯৯৬ সনে ভারতীয় ভাষা পরিষদ পুরস্কার, ১৯৯৮ সনে অসম সাহিত্য সভার সীতানাথ ব্রহ্ম পুরস্কার এবং ২০২০ সনে সাহিত্যাচার্য সৈয়দ আব্দুল মালিক উপন্যাসশ্রী পুরস্কার লাভ করেন ।
আলোচ্য উপন্যাস ' হে আমার স্বদেশ' (অ’ মোর আপোনার দেশ) অসমের অন্যতম সাহিত্যিক, ঠাকুর পরিবারের জামাই, সাহিত্যরথী লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়ার জীবনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে।এই উপন্যাসে বেজবরুয়ার চেতনায় কীভাবে জাতীয়তাবাদ অঙ্কুরিত হয়েছিল, বেজবরুয়ার জাতীয়তাবাদের স্বরূপ, রবীন্দ্রনাথের জাতীয়তাবাদের সঙ্গে বেজবরুয়ার জাতীয়তাবাদের তুলনা, ইউরোপীয় নবজাগরণের প্রেক্ষাপটে ভারত তথা অসমের নবজাগরণের উন্মেষ, জাতীয়তাবাদী বেজবরুয়ার সংগ্রাম, অসম বাংলার সাংস্কৃতিক সমন্বয় আলোচিত হয়েছে।এই উপন্যাসের চরিত্র রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে ঠাকুরবাড়ির মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ, বলেন্দ্রনাথ,প্রজ্ঞাসুন্দরী ,অন্যদিকে অসমের হেমচন্দ্র গোস্বামী, গুণাভিরাম বরুয়া,চন্দ্রকুমার আগরওয়ালা -উনবিংশ শতকের অসম বাংলার অনেক স্বনামধন্য পুরুষই উপন্যাসের পাতায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
প্রসঙ্গত বলে রাখি শ্রীমতী কর্মকার উপন্যাসটির প্রায় আড়াইশো পাতার মতো অনুবাদ করেছিলেন।তবে আমি প্ৰয়োজন অনুসারে উপন্যাসটিকে আবার নতুন করে একেবারে প্রথম থেকে অনুবাদ করেছি। বলাবাহুল্য শ্রীমতী কর্মকারের অনুবাদ আমাকে অনেকটাই সাহায্য করেছে। এই সুযোগে আমি তার কাছে আমার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। পরিশেষে দৈনিক বাংলা পত্রিকা(অন লাইন)উপন্যাসটি ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করতে আগ্ৰহী হওয়ায় তাদেরকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
(৪৯)
(৪৯)
লক্ষ্মীনাথের পুত্র মুখদর্শনের সৌভাগ্য হল না। সেটা নিয়ে লক্ষ্মীনাথ বিশেষ করে পত্নী প্রজ্ঞার মনে একটা অভাববোধ থাকলেও তার বাহ্যিক প্রকাশ নেই। আজ পর্যন্ত আত্মীয় পরিজনের কেউ বেজবরুয়া দম্পতিকে এই নিয়ে দুঃখ বা মন খারাপ প্রকাশ করতে দেখে নি। সমস্ত দিক দিয়ে সুন্দর করে গড়ে উঠা পাঁচ বছরের সুরভি মারাত্মক ডিপথেরিয়া রোগে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করায় লক্ষ্মীনাথ শোকে দুঃখে ভেঙ্গে পড়েছিলেন। তবে সময় সুরভির অভাবটা অনেকখানি পূরণ করে দিয়েছে।১৯০০ সনের ১৭ অক্টোবর দ্বিতীয়া কন্যা অরুণার জন্ম হয়। তার প্রায় তিন বছর পরে ১৯০৩ সালের ৩ নভেম্বর রত্নার জন্ম হয় এবং ১৯০৮ সনের ৪ নভেম্বর জন্ম হয় চতুর্থ কন্যা দীপিকার।
জীবিতদের মধ্যে তিন জনই কন্যা সন্তান। তা বলে তাদের শিক্ষা-দীক্ষার ক্ষেত্রে লক্ষ্মীনাথ কোন ধরনের শিথিলতা প্রদর্শন করেননি। খরচ সাপেক্ষ যদিও প্রতিটি মেয়েকে কলকাতার ইংলিশ স্কুলে পড়ার সুবিধা করে দিয়েছেন। তিনজনই কলকাতার বিখ্যাত মিশনারি স্কুল ডায়োসেশন স্কুল অথবা কলেজের ছাত্রী। কোন কলেজে পড়ানো ছাড়াও হাওড়াতে থাকার সময় লক্ষ্মীনাথ তাদের জন্য সংগীত এবং নৃত্যকলা শিক্ষার জন্য গৃহশিক্ষিকা নিযুক্ত করে দিয়েছেন।
অরুণা ডায়োসেশন কলেজ থেকে ১৯১৮ সনে মেয়েদের মধ্যে প্রথম এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করে আই এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তারপরে একই কলেজ থেকে ১৯২০ সনে সে বিএ পাস করে। এই সময় সত্যব্রত মুখার্জির সঙ্গে অরুণার বিয়ে হয় এবং দুটি ছেলে মেয়ের মা হয়ে ১৯২৮ সনে ইংরেজি সাহিত্যে এমএস শ্রেণিতে উঠেন। রক নাও বিয়ের পরীক্ষা উত্তীর্ণ হন। তৃতীয় কন্যা দীপিকা ১৯৩০ সালে বিএ পরীক্ষার উত্তীর্ণ হয়ে বিটি পড়তে শুরু করেন।
পাঁচ বছর বয়সে সুরভি হয়ে উঠেছিল প্রাণময়ী, প্রত্যেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারা বুদ্ধিমতী মেয়ে। অরুণা সহজ- সরলহাস্যময়ী। কিছু একটা বললে সহজেই মেনে নেয় এবং সে লক্ষ্মীনাথের বাধ্য মেয়ে। রত্নার মন এতটা খোলামেলা নয়। কিছু একটা পছন্দ না হলে বা মতের মিল না হলে সেটা নিয়ে সে তর্ক করে। যুক্তি দিয়ে বুঝাতে পারলে তবেই রত্না কথাটা মেনে নেয়। ছোটো মেয়ে দীপিকা তিন বোনের চেয়ে একটু আলাদা। সে কথা কম বলে। অরুনা রত্নার মতো সবার সঙ্গে কথা বলে না। স্কুল কলেজে বান্ধবী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাবধানী এবং কিছুটা অর্ন্তমুখী স্বভাবের মেয়ে। বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বি টিতে নাম লাগানোর পরে দীপিকা আরও গম্ভীর হয়ে পড়ল।
সুরভি অকালে চলে গেল। উচ্চশিক্ষিত বরোদার রাজসভার উচ্চ পদের বিষয়া সত্যব্রতের সঙ্গে বিয়ে হয়ে ঘর সংসার সামলে ছেলে মেয়ের মা হয়ে অরুণা এখন সুখী গৃহস্বামীনী ।এদিকে ডিব্রুগড়ের ধনী চা ব্যাবসায়ী রোহিনীকুমার বরুয়াকে বিয়ে করে রত্নাও ইতিমধ্যে দুটি কন্যা সন্তানের মা হয়ে ডিব্রুগড়ে থেকে ঘর সংসার করছে। সত্যব্রত রোহিণী দুই জামাই লক্ষ্মীনাথ প্রজ্ঞার খোঁজখবর নেয়, অসুখ-বিসুখ হলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। কিন্তু তাদের কেউ তাদের সঙ্গে থাকেনা। সঙ্গে থাকার জন্য দাবিও করা যায় না। দাবি করার অধিকার নেই।
এখন কন্যার সন্তানের জন্ম হলে ঘর উজ্জ্বল হয়ে উঠে। কিন্তু মা-বাবার বাড়িতে লালিত পালিত হয়ে যখন পতিগৃহে চলে যায়, তখন ঘরটা শূন্যতায় ভরে পড়ে। অতি আদরের অরুণা এবং রত্না পতি গৃহে চলে গিয়েছে। ইতিমধ্যে দীপিকাও বিবাহ যোগ্যা হয়ে উঠেছে। তাকেও বিয়ে দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিতে হবে। তারপরে কেবল প্রজ্ঞাকে নিয়ে লক্ষ্মীনাথ কীভাবে এই বাড়িতে থাকবেন?.... কথাটা ভাবতেই তার বুকটা কেমন যেন করে ওঠে।
কিন্তু—।
সেদিন দীপিকার সঙ্গে লক্ষ্মীনাথ এবং প্রজ্ঞা বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় একটা অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটল।
দীপিকাকে নিয়ে প্রজ্ঞা কলকাতায় যাবে। লক্ষ্মীনাথ ঝাড়চোগোড়া পর্যন্ত তাদের এগিয়ে দেবে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় দীপিকা অন্যদিনের মতো লক্ষ্মীনাথ এবং প্রজ্ঞার পা ছুঁয়ে প্রণাম করল না। বের হবার সময় দীপিকাকে মাত্রাধিক শান্ত এবং বিশেষ কোনো কথায় মানসিকভাবে সংকল্পবদ্ধ যেন মনে হল। বলল না যদিও লক্ষীনাথের মনে প্রশ্নের উদয় হল, দীপিকা এটা কেন করল? তারপর এই প্রশ্নটি তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াল? তার মনে একটা আশঙ্কার সৃষ্টি হল, অশুভ কিছু একটা ঘটতে চলেছে নাকি?
দীপিকাকে ডায়োসেশন কলেজের হোস্টেলে রেখে জোড়াসাঁকোতে দাদা ঋতেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘরে এক রাত কাটিয়ে প্রজ্ঞা কলকাতা থেকে সম্বলপুরে ফিরে আসার দিনই লক্ষ্মীনাথ প্রসঙ্গটা উত্থাপন করলেন। তিনি কথাটা যতটা গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন, প্রজ্ঞা সেভাবে নেয়নি। প্রজ্ঞা বলল যে আজকালকার ছেলেমেয়েরা 'প্রণাম' করাটাকে খুব একটা পছন্দ করে না। এদিকে দীপিকা মিশনারি স্কুল কলেজে পড়াশোনা করেছে ।কলেজের প্রিন্সিপাল শিক্ষকরা খ্রিস্টান ।শ্রেণীকক্ষের পাঠ্যসূচি ছাড়াও খ্রিস্টান ধর্মের বিষয়ে আলোচনা হয় ।যিশুর বাণী শোনানো হয় এবং বাইবেলের গীত গাওয়া হয়। তাই দীপিকার ওপরে এইসবের প্রভাব পড়তেই পারে। প্রজ্ঞার কথা শুনে লক্ষ্মীনাথ আরও বেশি সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল।
'দীপির ওপরে খ্রিস্টান ধর্মের প্রভাব। কিন্তু ওই একই কলেজে অরুণা পড়েছে ,রত্নাও পড়েছে। ওই কলেজ থেকেই ওরা বিএ পাস করেছে। ওদের ওপরে তো খ্রিস্টান ধর্মের ঐরকম প্রভাব পড়েনি।'
' ওহো, এত উত্তেজিত হচ্ছে কেন? সবার স্বভাব চরিত্র তো আর একরকম হয় না।'
' আমি কিন্তু দীপিকে অন্যরকম দেখছি। এমনিতেই আমার সঙ্গে অরুণা ,রত্নার মতো এত ফ্রি নয়। তার মধ্যে কিছু দিন ধরে আমার সঙ্গে কথাবার্তা কমিয়ে দিয়েছে। ওর মনের মধ্যে কী ঢুকেছে, ওর সঙ্গে বসে ভালোভাবে কথা বলে জানার চেষ্টা কর। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে কোথায় একটা গন্ডগোল হতে চলেছে।'
' ঠিক আছে।আমি আজই ওকে চিঠি লিখছি।'
স্বামীর উৎকণ্ঠার কথা উল্লেখ করে প্রজ্ঞা ছোটো মেয়ে দীপিকাকে চিঠি লিখল। দশ দিন পরে চিঠির উত্তর এল। লক্ষ্মীনাথ যা আশঙ্কা করেছিল, কথা সেটাই। খুব কম কথায় সরল ভাবে দীপিকা খ্রিস্টান ধর্মের প্রতি অনুরাগের কথা জানিয়ে মায়ের কাছে চিঠি লিখেছে। চিঠিটার কথা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে লক্ষ্মীনাথ আরও বেশি অস্থির হল। এত প্রাচীন, এত ঐশ্বর্যময় সনাতন হিন্দুর সন্তান দীপিকার মনে খ্রিস্টান ধর্মের প্রতি অনুরক্তি জেগেছে।দীপিকার ওপরে লক্ষ্মীনাথের আরও রাগ হল। রাগ হল ডায়োসেশন স্কুল কলেজের কর্মকর্তাদের ওপরে। শিক্ষদানের উদ্দেশ্য দেখিয়ে তারা এভাবে কম বয়সী মেয়েদের কাঁচা মনে খ্রিস্টান ধর্মের বীজ ঢুকিয়ে দিয়ে ভারতীয় হিন্দুদের খ্রিস্টান করার পরিকল্পনা করছে।
উত্তেজনায় লক্ষ্মীনাথ কী করবেন কী করবেন না ভেবে পেলেন না। উত্তেজনা কমে আসার পরে তার মনে পড়ল এখনও তো রোহিণী রত্না কলকাতায় আছে। লক্ষ্মীনাথ তাদের কাছে সাহায্য চাইলেন। তারা ডায়োসেশন কলেজের হোস্টেলে গিয়ে দীপিকার সঙ্গে দেখা করল। কিন্তু হোস্টেলটা খ্রিস্টান মিশনারিদের দ্বারা পরিচালিত। হোস্টেলে বসে এই বিষয়ে দীপিকার সঙ্গে কথা বলা ঠিক হবে না। তারা দীপিকাকে কলকাতার বাড়িতে ডাকল। কিন্তু দীপিকা দিদির বাড়িতে গেল না।
কথাটা জেনে লক্ষ্মীনাথ দিশাহারা হয়ে পড়লেন। তিনি বড়ো জামাইকে চিঠি লিখলেন। বড়ো জামাই বরোদার রাজ্যে উচ্চ পদে আসীন, বিদেশের ডিগ্রিধারী এবং ব্যক্তিত্বের অধিকারী। লক্ষ্মীনাথের বিশ্বাস সত্যব্রত বুঝিয়ে সুঝিয়ে খ্রিস্টান ধর্মের প্রভাব থেকে দীপিকাকে উদ্ধার করতে পারবে। সত্যব্রতও চেষ্টার ত্রুটি করল না। কিন্তু ইতিমধ্যে খ্ৰিষ্ট ধর্মের প্রতি দীপিকার আস্থা বিশ্বাস দৃঢ় হয়ে পড়েছে। যে সমস্ত কথা বলে চিঠির মাধ্যমে সত্যব্রত বোঝানোর চেষ্টা করল দীপিকা সেইসব কথার এরকম যুক্তিপূর্ণ উত্তর দিল যে সত্যব্রত এই বিষয়ে আর এগোতে পারল না।
এবার লক্ষ্মীনাথ অসহায় হয়ে পড়লেন। অশান্তিতে তাঁর আহারে রুচি নাই হয়ে গেল। ব্যাবসায় মন উঠে গেল। লেখাপড়ায় মন বসাতে পারলেন না। রাতের ঘুম নাই হয়ে গেল।
এটা কি হল? মা-বাবা হিসেবে তারা এত যত্ন নেয়, এত আদর করেন, তার প্রতিটি দাবী পূরণ করেন… তথাপি দীপিকা কেন এরকম হল? বাড়িতে প্রজ্ঞার জন্য ব্রাহ্ম ধর্মের উৎসব উপাসনা চলতেই থাকে। প্রতিদিন সকাল বিকেল ব্রাহ্ম গীত গাওয়া হয়। অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় সাহায্য করা ছাড়া লক্ষ্মীনাথ ভাগবত ছাড়েননি কীর্তন ছাড়েননি। ভাগবতে বর্ণিত বৈষ্ণবের রসাল বাণী তার জীবনের জন্য অমৃত সুধা অর্থাৎ লক্ষ্মীনাথ প্রজ্ঞার বাড়িতে ধর্মীয় আচার সংস্কারের একটি পরম্পরা রয়েছে। ধর্মীয় পরম্পরা এবং নীতি নিয়মের মধ্য দিয়ে তারা জীবনের পথে এগিয়ে চলেছে। মা বাবার মধ্যে এই সমস্ত দেখে শুনেও তাদের ছোটো সন্তান দীপিকা খ্রিষ্টান হতে যাচ্ছে! কেন? কেন সে খ্রিস্টান হতে চলেছে?তাকে শিক্ষা দানের ক্ষেত্রে কি ভুল হয়েছে নাকি ?নাকি লক্ষ্মীনাথের নিজের জীবন চর্চায় কোনোরকম ভুল থেকে গেছে?
এভাবে প্রশ্নের পর প্রশ্ন নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করেও লক্ষীনাথ কোনো উত্তর পেলেন না ।তা বলে তিনি মনে মনে বসে থাকতেও পারলেন না। এবার লক্ষ্মীনাথ নিজেই দীপিকার কাছে চিঠি লিখতে বসলেন। চিঠিতে নিজের বংশের কথা জানাবেন। বংশের সমৃদ্ধ ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক পরম্পরাৰ কথা জানাবেন। আজ থেকে সাত বছর আগে লক্ষ্মীনাথ তাদের বংশের অতীত ঐতিহ্যের কথা জানিয়ে দীপিকাকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। সেই চিঠিৰ প্রসঙ্গ উত্থাপন করে পুনরায় লিখলেন— তাদের আদি পুরুষ ছিলেন কলিবর বরুয়া। তিনি তীর্থ ভ্রমণের উদ্দেশ্যে কনৌজ থেকে অসমের হয়গ্রীব মাধব এবং কামাখ্যা দেবীর মন্দির দর্শন করতে এসেছিলেন। তিনি বেদ–বেদাঙ্গ শাস্ত্রে প্রগাঢ় পণ্ডিত ছিলেন। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে নিপুন ছিলেন এবং তার পান্ডিত্যের কথা জেনে তখনকার অসমের রাজা জয়ধ্বজসিংহ এক হাজার পোড়া নিষ্কর মাটি এবং ধনধান্য দিয়ে সংস্থাপন করে রাজার চিফ মেডিকেল অফিসার বা বেজবরুয়া উপাধি দিয়েছিলেন… ইত্যাদি ।তাছাড়া লক্ষ্মীনাথের মাতা ছিলেন মহাভারতের আঠারোটি পর্ব অসমিয়া ভাষায় অনুবাদ করা বিখ্যাত লেখক মাধব কন্দলির বংশোদ্ভূত। তাদের বংশ পরিবারের সবাই ধর্মপরায়ণ। হিন্দুর ধর্ম গীতা ভাগবতের উদার বৈষ্ণবের অমল অমৃত সুধায় জীবনচর্চা এবং বিকাশের নীতিতে গভীরভাবে আস্থাভাজন। নিজের বংশের শিক্ষিত সংস্কৃতিবান পুরুষরা ছিলেন হিন্দু। সনাতন হিন্দু ধর্মের এই ধরনের সমৃদ্ধ ঐশ্বর্য থাকা সত্ত্বেও সেই বংশের সন্তান হয়ে দীপিকা কেন বিদেশী খ্রিস্টান ধর্ম সম্পর্কে অনুরাগী হয়ে উঠল?
দীর্ঘ হলেও চিঠিটা লেখার পরে লক্ষ্মীনাথের মনটা কিছুটা শান্ত হল। তিনি আশা করলেন এই চিঠিটা দীপিকার মন- মানসিকতায় পরিবর্তন আনবে।
কিন্তু লক্ষীনাথের আশা-অসার হল। পিতার চিঠি পেয়েই দীপিকা নিজের স্থিতি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিল।
চিঠির ভাষা সরল। খ্রিস্টান ধর্মের প্রতি দীপিকার বিশ্বাস গভীর, বিশ্বাসের কারণগুলি উদাহরণ তথ্যের আধারে স্পষ্ট। চিঠিটা পড়ে লক্ষ্মীনাথের মাথার ওপরে আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। তিনি পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারলেন, খ্রিস্টান ধর্মের রাহু গ্রাস থেকে দীপিকাকে উদ্ধার করা যাবে না। লক্ষ্মীনাথ তারপরে পুনরায় একটি চিঠি লিখলেন। দীপিকার চিঠিতে উল্লেখ করা যুক্তিগুলিকে বিরোধিতা করে দীর্ঘ চিঠি। কিন্তু চিঠিটা ডাকে দেবার পরেও তিনি শান্ত হতে পারলেন না।
ধর্মের প্রতি আস্থা বিশ্বাস নিয়ে বাপ বেটির মধ্যে বৌদ্ধিক যুদ্ধ আরম্ভ হল। অপ্রত্যাশিত এবং অসম যুদ্ধটা দেখে ধৈর্যশীলা প্রজ্ঞা চিন্তিত হয়ে পড়ল ।অবশেষে প্রজ্ঞা নিজে কলকাতায় গিয়ে দীপিকাকে বাড়িতে নিয়ে এল।
দীপিকা বাড়িতে আসতে চায়নি। প্রজ্ঞা ' তোমার বাবা তোমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় কষ্ট পাচ্ছেন ।খেতে পারছেন না ।এক মাস ধরে ঘুমোতে পারছেন না ।গত সপ্তাহ থেকে মাঝরাতে বিছানা ছেড়ে উঠে অন্ধকার ঘরের মেঝেতে নিশাচরের মতো পায়চারি করতে শুরু করেছেন ।অনাহার অনিদ্রায় তোমার পাপার ব্লাড প্রেসার বেড়ে গেছে ।ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়েছেন' ইত্যাদি বলার পরে তবে দীপিকা বাড়িতে এল।
বাড়িতে এসেও দীপিকা পিতার মুখোমুখি হয়নি।সারাদিন নিজের ঘরের মধ্যে ঢুকে থাকে। দুপুরবেলা রাতে খাবার টেবিলে একসঙ্গে বসে যদিও প্রয়োজন ছাড়া একটিও কথা বলে না। সে আগের চেয়েও শান্ত হয়ে পড়েছে। চলাফেরাতে ও ধীর স্থির। ২৪ বছর বয়সী মেয়েটিকে ৩৪ বছরের মহিলা বলে মনে হয়। তার দিকে তাকিয়ে লক্ষ্মীনাথের রাগ হয়, অসহনীয় যন্ত্রণাটা এতটাই বেড়ে যায় তাকে বকাবকি করতে ইচ্ছা করে। কিন্তু লক্ষ্মীনাথ পিতা, স্নেহশীল পিতা। অপত্য স্নেহের বাঁধনে তিনি বিবশ। মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছুই বলতে পারেন না।
ধর্মের প্রতি বিশ্বাস আনুগত্য নিয়ে স্বামী এবং মেয়ের মধ্যে এই টানা হেঁচড়া আর কতদিন চলবে ?এই অশান্তি সহ্য করা যায় না। ধর্মের চেয়ে পিতার সঙ্গে কন্যার সম্পর্কটা বড়ো। ধর্মের চেয়ে মানবতা বেশি আদরণীয়। স্বামী এবং মেয়েকে কষ্ট পেতে দেখে প্রজ্ঞারও কষ্ট হয়। অবশেষে সে বলে,' তোমরা একসঙ্গে বসে তোমাদের সমস্যা সংকট গুলি মিটিয়ে নাও না কেন?'
' সমস্যা-সংকট! আমি কি সমস্যা‐ সংকট সৃষ্টি করলাম?' লক্ষ্মীনাথের কন্ঠস্বরে উত্তেজনা,' এই সমস্যা- সংকটের মূলেতো তোমার ছোটো মেয়ে।'
' পাপা—।' সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দীপিকা বিনীতভাবে বলল' এটা কোনো সমস্যা বা সংকট নয়।'
'কেন সমস্যা-সংকট নয়?'
' ধর্মীয় এবং উচ্চমান বিশিষ্ট ঐতিহ্যপূর্ণ আচার সংস্কারে আবদ্ধ বেজবরুয়া বংশের মেয়ে হয়ে তুমি খ্রিস্টান হতে চলেছ এ আমি কীভাবে মেনে নেব?'
' কিন্তু পাপা, এই বেজবরুয়া বংশের ডাক্তার গোপালচন্দ্র বেজবরুয়া‐- আমার জ্যেঠামশাই খ্রিষ্টান হয়েছিলেন।'
' হ্যাঁ হয়েছিলেন। আর খ্রিস্টান হওয়ার পরেও গোলাপ দাদার সঙ্গে আমাদের রিলেশন ছিল। তোমার মা আর আমি এক বিধবার সঙ্গে খ্রিস্টান ধর্ম মতে চাৰ্চে গিয়ে ওর বিয়ে দিয়েছিলাম। মৃত্যুর পরে আমিই খ্রিস্টান ধর্ম মতে ওর ক্রিমেশনের যাবতীয় ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু তোমার জ্যেঠামশাই ডাক্তার গোলাপ বেজবরুয়া কেন খ্রিস্টান হয়েছিলেন সে তুমি জান?'
দীপিকা চুপ। শান্ত দৃষ্টিতে সে উত্তেজিত বাবার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
' না ,তুমি জান না। ডাক্তার বেজবরুয়া খ্রিস্টান হয়েছিলেন টাকা পয়সার অভাবে ,ভালোবাসার অভাবে। কিন্তু তোমার তো টাকা–কড়ির কোনো অভাব হয়নি। তুমি খ্রিস্টান হতে যাচ্ছ নিজের মনে ভেবে নেওয়া ভালোবাসার অভাবে। মিশনারি কলেজের পরিবেশে তোমার খ্রিস্টান শিক্ষক শিক্ষিত্রীরা তোমার মন তোমার চেতনা বোধকে বিভ্রান্ত করে ফেলেছে। ওরা তোমার ব্রেনটাকে এমনভাবে ওয়াশ করেছে যে তুমি এখন ভাবছ যে তোমার মা বাবা বোন ভগ্নিপতিরা কেউ তোমাকে ভালোবাসে না।। এই সংসারে তুমি একা। তাই তুমি বিধর্মী বিদেশিদের কাছে ভালোবাসার কাঙ্গাল হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছ। অর্থহীন কুয়াশায় তোমার হৃদয় মন চেতনাবোধ আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে।দীপি তুমি মরীচিকার পেছনে ছুটছ, দীপি তুমি মরীচিকার পেছনে ছুটছ।'
কথাগুলি নির্মম। এত নির্মম ভাষায় লক্ষ্মীনাথ কোনোদিন দীপিকাকে বকাবকি করেনি। এদিকে দীপিকা বাবা এভাবে বলবে ভাবতে পারেনি। তথাপি সে সহ্য করল। কথাগুলি সাংঘাতিকভাবে আঘাত করলেও বাবা বলেছে বলেই সে সহ্য করল।
' চিঠিতে তুমি উল্লেখ করেছ, তুমি খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার কথা সবাইকে জানালেও তোমার কোনো আপত্তি নেই। তোমার এত আস্পৰ্ধা! তুমি এত বেপরোয়া ! কোথায় দাঁড়িয়ে কোন সাহসে তুমি এত বড়ো কথা লিখলে ? আজ যে তুমি খ্রিস্টান ধর্মকে সর্বোৎকৃষ্ট ভেবে তুমি খ্রিস্ট ধর্মের প্রবক্তা যিশুর শরণাপন্ন হলে খ্রিস্টান ধর্মের মূল গ্রন্থ বাইবেলে আছে — বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আদিতে ছিল শব্দ। শব্দই হল ভগবান। কিন্তু এই মত এই বিশ্বাস আমাদের গীতা ভাগবতে আছে। আমরা যে নাম কীর্তন করি— নাম, নামতো শব্দ । নাম মানে শব্দব্রহ্ম । নাম জপ করলেই ভগবানকে পাওয়া যায়। সুতরাং খ্রিস্টান ধর্মপুঁথিতে আমাদের ধর্ম থেকে আলাদা কিছুই লেখেনি।'
' তাহলে তো বিরোধের কোনো প্রশ্নই থাকেনা পাপা।' অবিচলিত কন্ঠে দীপিকা বলল,' গীতা– ভাগবতের কথা বাইবেলের লেখা থাকলে আমি বাইবেল আশ্রয় করে কি অন্যায় করলাম?'
লক্ষ্মীনাথ থতমত খেয়ে গেল। দীপিকা এত বুদ্ধিদীপ্তভাবে তার কথার উত্তর দিল। এবার তিনি ভালোভাবে বুঝতে পারলেন, দীপিকাকে বোঝানোটা সহজ হবে না। তিনি ভেতরে ভেতরে হতাশ হলেন। হতাশায় অস্থির হয়ে পড়ছিলেন যদিও নিজেকে সামলে নিলেন। তারপর কণ্ঠস্বর নামিয়ে এনে বললেন, 'দীপি কথাগুলি ওভাবে ভাবছিস কেন? নিজেদের আধ্যাত্বিক চেতনা সম্পন্ন বিশাল ধর্মীয় জ্ঞান এবং জীবন দর্শন থাকতে পরধর্মের দিকে কেন হাত বাড়াবি? এটা তোর ভুল হচ্ছে। তুই ভুল পথে পা বাড়াচ্ছিস ।আমাদের উপনিষদে আছে আত্মানাং বিদ্ধি' তার অর্থ হল তুমি নিজেকে জানবার চেষ্টা কর। তুমি তোমার আত্মাকে জেনে নিজের মানুষকে জানার চেষ্টা কর। নিজেকে এবং নিজের মানুষকে জানলেই তুমি ভালোবাসার সন্ধান পাবে। আমি ভগবানের কাছে প্রার্থনা করছি ,মঙ্গলময় ভগবানের দয়ায় তুই যেন সেই ভালোবাসার সন্ধান পাস।আত্মজ্ঞান এবং আত্মপরিচয়ের মাধ্যমে তুই যেন বিশ্বজগতকে চিনতে পারিস।'
ভগবানের কথা উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে দীপিকার চোখে মুখে অদ্ভুত এক রূপ ফুটে উঠল। এরকম মনে হল যে সে যেন এখানে থেকেও না থাকার মতো হয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পরে বাবার দিকে তাকাতেই তার দেহটা কিছুটা কেঁপে উঠল বলে মনে হল। তারপর তার চোখ দিয়ে দুই ধারায় অশ্রু নেমে এল।
দীপিকার চোখ জোড়া দিয়ে কেন এভাবে অশ্রু ধারা নেমে এল লক্ষ্মীনাথ বুঝতে পারলেন না। কিন্তু দীপিকা তার আদরের সন্তান, তার আত্মার একটি অংশ। সন্তানের চোখে অশ্রু ঝরতে দেখে পিতা লক্ষ্মীনাথ সহ্য করতে পারলেন না। তার কথাগুলি দীপিকাকে আঘাত করেছে। আঘাতের যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরেই সে অশ্রু বিসর্জন করছে। এই উপলব্ধির বেদনা ও অপার। তার জন্যই রাতে ঘুমোতে এসে প্রজ্ঞার দিকে তাকাতেই লক্ষ্মীনাথের এরকম অবস্থা হল যেন তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়বেন। প্রজ্ঞা সান্ত্বনা দিতেই তার আবেগ বেড়ে গেল। বিছানায় পরে বালিশে মাথা গুঁজে গভীর কন্ঠে বলল,' পরি ,আমাদের কোথায় ভুল হল? কী অন্যায় করেছি যে আমাদের সন্তান খ্রিস্টান হয়ে আমাদের ছেড়ে বিদেশে চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে?'
প্রজ্ঞা কী বলবে? অসহায় অশ্রুপাত ছাড়া স্বামীকে সান্ত্বনা দেবার ভাষা তাঁর নেই।
লক্ষ্মীনাথের চেষ্টা বিফল হল। তাঁর জীবনটা ঘাত প্রতিঘাতে পরিপূর্ণ। ঘাত প্রতিঘাতের সঙ্গে সংগ্রাম করেই এত বছর এগিয়েছে। সমস্ত ক্ষেত্রে তিনি জয়লাভ করেননি। শিক্ষাজীবনের মাধ্যমিক স্তরে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়া, এমএ এবং আইন পরীক্ষায় বিফল হওয়া, সরল বিশ্বাসে কাঠের ব্যাবসা আরম্ভ করে ডবসন রোডের বাড়িটা ভোলানাথের নামে রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার জন্য পরবর্তীকালে তার সঙ্গে সংঘাত শুরু হওয়ায় সেই বাড়িটার অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া, পৃথকভাবে ব্যাবসা আরম্ভ করে বিশ্বযুদ্ধের জন্য ব্যাবসায় শোচনীয় ভাবে ব্যর্থ হওয়া, বয়স এবং স্বাস্থ্যের জন্য বার্ড কোম্পানির চাকরি ছাড়তে বাধ্য হওয়া…এসবের কোনো ব্যর্থতাই আজকের ব্যর্থতার সমতুল নয়। তাঁর জীবন জোড়া সাধনার কোনো জ্ঞান কোনো প্রচেষ্টাই দীপিকাকে উদ্ধার করার ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ হল না। এভাবে দীপিকার খ্রিস্টান হওয়াটা তার সত্তায় এক প্রচন্ড আঘাত।
এই আঘাতের যন্ত্রণা সহ্য করতে কিছুটা সময় লাগবে। দীপিকাকে ফিরিয়ে আনার জন্য আর কোনো উপায় নেই জেনেও বুকের মধ্যে জমা হয়ে থাকা বিভিন্ন ক্ষোভ প্রকাশের সঙ্গে ক্ষীণ একটা আশা নিয়ে লক্ষ্মীনাথ ডায়োসেশন কলেজের শিক্ষার্থী সিস্টার ডরোথি ফ্রান্সিসকে একটা চিঠি লিখলেন,
Dear sister Dorothy Francis ,(Sambalpur,26th August 1932)
I am informed that my daughter Dipika is going to embrace Christianinity …you should have informed her parents if any move has been made towards it.The parents have never relinquished entirely in your favour.They have placed her in your charge for education not for conversion to a religion not of her parents.
…She is a young girl,quite inexperienced in worldly matters and also impressionable ,and your duty is not to fan the fire,she being quite alone and far from home influence.You should have informed her parents all about her mental changes.Does your silence not prove that you did not want to give any chance to her parents to get her out of your influence?I did not think this will go to the credit of the authorities of the Diocesan college and school…
After this do you think that the Hindoos and other the communities will trust Diocesan?
I do not think that you have fully realised the gravity of the situation that by such active or passive or tacit move will create a great agitation in Calcutta amongst the Bengali community and will go towards injuring the reputation of the college, and people will think twice before they made up their minds to send their girls to Diocesan.
I ,therefore, request you to desist from the move, and send my daughter out of the of your influence and place…
Trusting you will kindly adop my suggestion and keep my request ,and thus avoid further complication.
Yours sincerely
L.N.Bezbaroa
ভাবার চেয়েও চিঠিটার ভাষা কড়া হয়ে গেল।কিন্তু চিঠিটা প্রেরণ করেও কোনো লাভ হল না।সিস্টার ডরোথি ফ্রান্সিস বা ডায়োসেশন কলেজের কর্ম-কর্তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন না। লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়ার ছোটো মেয়ে দীপিকা বেজবরুয়া খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হয়ে সিস্টার দীপিকা হয়ে কিছু বছর কলকাতাতায় বসবাস করলেন।তারপরে ১৯৩৫ সনের ১৪ সেপ্টেম্বর বোম্বাই গিয়ে সেখান থেকে জলপথে ইংলেণ্ড যাত্রা করলেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন