স্মৃতিকথা- ৩৫
এই আমি চরিত্র
নীলাঞ্জন কুমার
( গত মাসের পর )
সে সময় বরুণের বাড়িতে গিয়ে মাঝেমধ্যে আড্ডা দিতাম । বরুণের বাড়ি থেকে গেলে বেশ খানিকটা মাঠ পেরিয়ে যেতে হত । শরৎকালে সেখানে কাশফুল ফুটতো । আমি ওই মাঠ দিয়ে ওই সময় হাঁটলে কাশফুলগুলো আমার প্যান্টে জড়িয়ে যেত । বরুণের বাড়ি গিয়ে তা ঝেড়ে নিতাম ।এখন মনে হয় সে কি সুন্দর আমেজ । বরুণ যখন কাগজের নৌকা বের করতে শুরু করে তার প্রস্তুতি পর্বেআমিই ছিলাম প্রধান সহায়ক । আমিই ওকে উৎসাহিত করেছিলামমৃণাল দার বাড়িতে ও যখন কাজ করতো সে সময় । ধীরে ধীরে ও এক ফর্মার একটি কাগজ বের করলো । যেখানে আমি ছিলাম প্রায় মুখ্য সহায়ক । আশ্চর্যের বিষয় আজ চল্লিশ বছর হয়ে গেল বরুণ ঠিক একই আকার ওই ষোল পৃষ্ঠার কাগজটি বজায় রেখেছে । ধারার কোন পরিবর্তন হয়নি । যে নামাঙ্কন প্রথম সংখ্যাতে ( বরুণের আঁকা) তা এখনও বজায় রেখেছে । বরুণের একটি ছেলে হয়েছিল । প্রথম থেকে সে স্পেশাল চাইল্ড । হায়ার সেকেন্ডারিতে ভালো রেজাল্ট করেছিল । কিন্তু তাকে ইহলোকে ধরে রাখতে পারেনি বরুণ । এতো সুন্দর ও ভালো মানুষকে কে যে ওপরতলায় দুঃখ দেয় বুঝি না ।
যা হোক দুঃখ তো জীবনের অঙ্গ । সঙ্গে থাকবে আনন্দও । ১৯৮১ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ আছে চাবিকাঠি বের হল । প্রচ্ছদ এঁকেছিল সুদীপ মাইতি । সুন্দর করেছিল প্রচ্ছদ । ও শিল্পী প্রণবেশ মাইতির নিকটাত্মীয় । তখন মেদিনীপুরের রাজাবাজারে সঞ্জয়ের মেস বাড়ির পাশে শিল্পী শ্যামল ঘোষের বাসা ছিল । ওখানে সমস্ত মেদিনীপুরের কমবয়সী চিত্রশিল্পীরা আসতো । আমি আর সঞ্জয় যোগ দিতাম ওদের সঙ্গে প্রায়ই । ওরা ষড়ঙ্গ।নামে একটি সংস্থা খুলেছিল । সেই ষড়ঙ্গ থেকে একবার রবীন্দ্র জয়ন্তী হয়েছিল । আমি তাতে গান গেয়েছিলাম এক শ্রুতি নাটকে। বেশ জমেছিল সেই অনুষ্ঠান । শিশুকথা নামে একটি কাগজ ওখান থেকে প্রকাশিত হয়েছিল । অনতিবিলম্বে তা বন্ধ হয়ে যায় । তখন বাকপ্রতিমার কাজ আর এই সব করে বেড়াচ্ছি । সুতরাং আনন্দ তো আর ধরে না ।
এদিকে বাকপ্রতিমার অফিসে কাজ চলছে । বইপত্রের ছাপাছুপির কাজ শুরু হল মেদিনীপুরেরদুটি প্রেসে । একটি মেদিনীপুরেরবলরাম দাসের
গল্প বই আর একটি মেদিনীপুরে গণনাট্য সংঘের কৃষ্টি সংসদ শাখার প্রাণপুরুষ শ্রীজীব গোস্বামীর ' জোয়া ' নাটকের । এই প্রকাশনার বিষয় নিয়ে আমার শ্রীজীব গোস্বামীর সঙ্গে আলাপ । শ্রীজীব গোস্বামীর আসল নাম বাসুদেব দাশগুপ্ত । যিনি নাটক লিখতেন শ্রীজীব গোস্বামী নামে আর গান লিখতেন ও সুর দিতেন বাসুদেব দাশগুপ্ত নামে । একদিন বাকপ্রতিমার অফিসে ওঁনাকে প্রস্তাব দিলাম আমি যোগ দিতে চাই কৃষ্টি সংসদে। উনি সানন্দে রাজি হলেন । তার কয়েকদিন পর আমার কৃষ্টি সংসদে আগমন ।
দারুণ লেখা,পড়ে খুব ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুন