কান্না /// দেবাশীষ সরখেল
চায়ের দোকানে কাজ করে বালক ।চা দেয় ,ঘুগনি মুড়ি দেয় ,মাঝেমধ্যে ভাবরা ছঁাকে।
কলকাতার এক বাবু জয়চন্ডী পাহাড়ে বেড়াতে এসে তাকে দেখে খুব খুশি হলেন ।বললেন, যাবি আমার সাথে ?তোকে চায়ের গ্লাস ধুতে হবে না । সারাদিন তেমন কাজ নেই ।কেবল ঘর মুছবি ,ভাবড়া ছাঁকবি আর টিভি দেখবি ।
পরদিন বালকের বাবা চুপি চুপি বাবুর হোটেলের ঘরে এসে উপস্থিত া বলে ,দোকান মালিকের কাছে৫০০০ টাকা অগ্রিম নেওয়া আছে । যদি দিয়ে দেন ।ও মুক্তি পেয়ে যাবে ,আপনার সাথে যাবে ।৫০০ টাকা বেতন আর খাওয়া দাওয়া দেবেন ।
বাবু তো এককথায় রাজি ।ফেরার দিন গাড়ি নিয়ে বালকের বাড়িতে এসে দেখে ,গ্রাম জুড়ে খুব কান্নাকাটি চলছে ।
ব্যাপার কি ? না , বুড়ো মারা গেছে ।বয়স ৯৭ ।বিছানায় পড়েছিল১৩ বছর ।
বাবু অবাক হলেন ।এর জন্য এত কান্নাকাটি ?বহুদিন আগে থেকেই তো তার নাম খরচের খাতায় লেখা ছিল ।
বালকও কাঁদতে কাঁদতে গাড়িতে উঠে বসলো ।
শক্তিগড়ে গাড়ি থামার পর বাবু তাকে তিনখানা বড় ছানার ল্যাংটা খাওয়ালেন , মুহূর্তে কান্না ভুলে গেল বালক ।
কলকাতায় এসে আরামে থাকতে লাগল । ঘর মোছা আর টিভি দেখা ।মাঝে মাঝে সে ভাবরা পিঠে ছেঁকে দেয় । বাবুর বউ খুব খুশি । কিন্তু তার কি অসুখ কে জানে, বিছানায় সর্বক্ষণ শুয়ে থাকে ।
তারপর একদিন টুপ করে মরে গেল ।বড্ড ভাবরা খেতে ভালোবাসতো ।বালক দেখল ,ফুল সাজানো গাড়ি এলো া মুহূর্তে তাকে নিয়ে চলে গেল ।
আবার বাবু নতুন মেয়ে মানুষ নিয়ে এলেন।
কোথাও কোন কান্না নেই ।অনুশোচনা নেই ।বালক ভয় পেল এবার ।বলল , আমি আর এখানে থাকবো না ।
বাবু বারবার কারণ জিজ্ঞেস করতে থাকেন ।বালক গোঁজ হয়ে বসে থাকে ।
বারবার পীড়াপীড়ি করায় সে একটি কথাই বলল ,কি করে এখানে থাকি, এখানে কেউ কাঁদে না যে ?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন