স্মৃতিকথা- ৩৩
এই আমি চরিত্র
নীলাঞ্জন কুমার
গ্রাজুয়েট হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ হয়ে গেল মেদিনীপুরের বিশিষ্ট কবি হিসেবে পরিচিত ও লিটল ম্যাগাজিন প্রেমী বর্তমানে প্রয়াত মৃণালকান্তি কালীর সঙ্গে । মৃণাল বাবু পারিবারিক দিক দিয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ী ছিলেন । শহরের পাহাড়ি পুর এলাকায় তাঁদের বিশাল বাড়ি । তিন ভাই এক বাড়িতে থাকতেন । সম্পন্ন পরিবারের মানুষটি শহরের লিটল ম্যাগাজিনের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন । যখন মেদিনীপুরে পঞ্চাশ দশকে পুরনো সাহিত্য ছেড়ে নতুন কবিরা নতুন সাহিত্য নিয়ে আসছেন সেই সময় তিনি ' আকাশ ' নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেছেন কিছুদিন । তাছাড়া ' অনুপমা সান্যালের শব ' নামে একটি কাব্যগ্রন্থ তাঁর প্রকাশিত হয়েছিল। যাতে জীবনানন্দের অনুকরণ ছিল স্পষ্ট ।
মৃণাল বাবু আটের দশকে একটি পত্রিকা প্রকাশের জন্য তরুণ কর্মঠ কবি খুঁজেছিলেন । সেই সঙ্গে তাঁর স্বপ্ন ছিল প্রকাশনী সংস্থা খোলার । কবিতার প্রতি আমার উৎসাহ দেখে তিনি আমায় প্রস্তাব দেন তাঁর সংস্থার কর্মাধ্যক্ষ হিসেবে যাতে যোগ দিই। যা আমি আসলেই শুরু হবে । পারিশ্রমিক সে সময় তিনশো টাকা । আমি তো বগ্ বগ্ খুশি । সাহিত্য করতে পারব সে সঙ্গে টাকা আসবে এ সুযোগ ছাড়ে কে!
বাবা মাকে এ কথা জানালে ওরা তো দারুন খুশি। তাদের মতে যাহোক ছেলেটা দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে । অচিরেই প্রকাশনীর কাজ শুরু হয়ে গেল । নামকরণ হলো বাকপ্রতিমা ।আস্তে আস্তে আমরা আরও সখ্য হয়ে উঠলাম । তখন আমার কাব্যগ্রন্থের প্রস্তাব উনি দিলেন । বেরবে আমার প্রকাশনী সংস্থা স্বরলিপি প্রকাশনী থেকে । প্রতি মাসে ' স্বরলিপি ' নামে একটি ডবল ক্রাউন চার পৃষ্ঠা কবিতার কাগজ আমি সম্পাদনা করব স্থির হল । বলা যায় প্রকৃতার্থে শুরু হয়ে গেল সাংস্কৃতিক যাপন । বাকপ্রতিমা সংস্থা শুরু হল ওনার বাড়ির সামনের ঘরে । আমি মনুসংহিতা কপি করার দায়িত্ব পেলাম । সেই সঙ্গে তা পড়াও হতে থাকলো । তখন ভারতবর্ষে জেরক্স মেশিন আসেনি । আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল । নাম দিলাম 'আছে চাবিকাঠি '। পুরো টাকা মৃণাল কান্তি কালী দিলেন । ওনাকে মৃণাল বাবু বলে ডাকতাম । ওঁর স্ত্রী র
' বকুনি ' তে ওঁকে তারপর মৃণাল দা বলে ডাকতাম । অচিরেই দাদা ভাই সম্পর্ক গড়ে উঠলো । যা হোক সংস্থার কাজের কারনে আমায় কলকাতা আসতে হত । যোগাযোগ করতাম কলেজ স্ট্রিটের ভোলানাথ প্রকাশনী র মালিক সুরেশ বাবুর সঙ্গে। উনি মৃণাল দার বন্ধু ছিলেন । ধীরে ধীরে এই পাবলিকেশনের কি কি বই প্রকাশ হবে তার তালিকা ঠিক করে আজকাল পত্রিকাতে বেশ বড় বিজ্ঞাপন দেওয়া হল । যা দেখে মেদিনীপুর চমকে গেল । বাকপ্রতিমার কথা তখন শিল্প সাহিত্য মহলে মুখে মুখে ঘুরছে । সেই সঙ্গে বাকপ্রতিমার লিটল ম্যাগাজিন ' উজ্জ্বয়িনী ' র কাজ আরম্ভ হল । সম্পাদক মৃণালকান্তি কালী আর সহ সম্পাদক নীলাঞ্জন কুমার । বলা যায় বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। কবিতা সমান তালে চলতে লাগল ।
আপনার ফটোটি বেশ। অনেককাল আগের মনে হয়। যাইহোক, আপনার লেখাটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। তবে একজায়গায় লিখেছেন জীবনানন্দ দাশের অনুকরণ করা হয়েছে।অতবড় একজন খ্যাতিমান কবির কবিতা অনুকরণ করা সে তো খুব সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার।যেকোন সজাগ পাঠকই তো ধরতে পারবেন। যাইহোক, আপনার লেখা ভালো লাগলো। আগামী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম রইলাম।
উত্তরমুছুন