ছোট গল্প ।। অবলোকন
সোমনাথ মুখার্জী
এখন রাত দুটো বাজতে তিন মিনিট বাকী। সময় যে মূল্যবান তার খবর সৌগত এখন সেভাবে মানে না। অথবা বলা যায় রাখতে বাধ্য নয়। হয়ত তাও নয়। আজ এই মুহূর্তে মানসিক অবস্থান এমন এক পরিস্থিতির শিকার, ভাবলে মন নির্বাক বা অবশ হয়ে যায়। মা মৃত্যু শয্যায় শায়িতা। প্রযুক্তি তখন এতরকমের সবল ছিল না। ডাক্তার ডাকার জন্য পথে নামতে হয়েছে। বাড়িতে ল্যান্ডলাইন নেই। অন্য কেউ সাহায্যের প্রত্যাশা পূরণ করে নি। সৌগত অসহায় অবস্থায় চারপাশে তাকাল। কয়েকটি কুকুর ওর দিকে নির্লিপ্ত চাহনিতে তাকিয়ে। আশ্চর্য হল। শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড় ছাড়িয়ে বাগবাজার যাবে। হাতঘড়ির সময় এখন দুটো পনেরো। ঘড়ি দেখা ওর বাতিক। হঠাৎ মন কেমন করে উঠল। অবচেতনের ভেতর থেকে কে যেন বলে উঠল চরমতম দুঃখের কথা। কী করণীয় ভাবনার দোলাচলে হারিয়ে গেল। চোখের জল আচমকা বাধা মানল না। সৌগত জানে সবকিছুই। তাও সত্যি মেনে নিতে পারাটা মনের জোর আকাঙ্খা করে।
ডাক্তার ডেথ্ সার্টিফিকেট লিখে দিলেন। সৌগত বাবার দিকে তাকাল। আজ বাবাকে চিনতে পারল না। মুখের দিকে তাকালে মনে হচ্ছে আকাশ ভেঙে পরেছে মাথায়। বাবা তাকিয়ে আছে অপলক। ও কিছুটা জানে বাষট্টি সালে প্রেমের বিয়ে কতখানি জটিল ছিল। মা এবং ছেলের সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মত। সৌগত বুঝেছিল মায়ের ভেতরে অসাধারণ স্বচ্ছতা যেন সবসময় আলোকিত হয়ে আছে। কত কথা মা অবলীলায় বলত। আজ এখন মায়ের স্থির অবয়বের দিকে তাকালে কেমন যেন অসহায় বোধ হয়। বাবা বলল হতাশ শব্দে, খোকা কী দেখছিস!!
সৌগত বলল,কিছু নয়। দেখছি। বাবা এবার আমাদের কী হবে! গলা ধরে এল।
বাবা বলল,আজ কত কথা মনে পরছে। আমার জন্য সবকিছুকে সরিয়ে সাহস দেখিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিল। আজ দেখছি ওই জিতে গেল। সকলকে আপন করতে ওর জুড়ি নেই। সকাল হোক্ দেখবি কত মানুষ আসবে। ঝরঝর করে কেঁদে উঠল বাবা।
ভোর হয়ে আসছে। হঠাৎ স্বপ্নটা ভেঙে গেল। উঠে বসে সৌগত ভাবল,আজও সব কেমন স্পষ্ট মনে আছে মা। ভালো থেকো তুমি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন