স্মৃতিকথা -২৯
এই আমি চরিত্র
নীলাঞ্জন কুমার
( গত মাসের পর)
কলেজের থার্ড ইয়ারের সময় থেকে এভাবে কলকাতা যাওয়া শুরু হয়ে গেল । মাসে একবার কখনো কখনো দু - বার আমি কলকাতা যেতে লাগলাম । পাতিরাম তখন আমার বিশ্ববিদ্যালয় আর ' কথা ও কাহিনি ' তে তখন বসে বসে পড়ার ব্যবস্থা ছিল, সেখানে আমি পড়তাম আর পড়তাম । ৩ টাকা ৫পয়সার মাছ ভাত আর আলুচোখা খাওয়া প্রায় নিয়মিত ব্যাপার হতে গিয়েছিল । প্রায়ই হোটেলের মালিককে ৩ টাকা দিতাম । বলতাম পাঁচ পয়সা নেই । মালিক রাগ করতো, ছোট বড় কথা বলতো । কিন্তু ওই পর্যন্ত । আমিও পাঁচ পয়সা বাঁচানোর আনন্দ পেতাম । তখন ভাবতাম যদি সত্যি সত্যি কলকাতাতে বাস করতে পারি তবে মনের মতো পড়তে লিখতে পারব । ১৯৯৪ সালে কলকাতাতে পাকাপাকি আসার পর সে স্বপ্ন সফল হয়েছে । তখন আমার চাকরিস্থল ছিল কলেজস্ট্রিটের কাছে আর আমি অফিস সেরে ওখানে এসে পড়তাম আর
পড়তাম ।
যাহোক আবার পুরনো কথায় ফিরে আসি , থার্ড ইয়ারের ক্লাস, কলকাতাতে সাহিত্যের পড়াশোনা , মেদিনীপুর জেলা লাইব্রেরি, রাজনারায়ণ লাইব্রেরি, গুরুদাসের খড়্গপুরের পুরাতন বাজারের বাড়ি ইত্যাদি নিয়ে দিন কাটানোর মুহূর্তগুলো বেশ রঙিন হয়ে উঠতো । ধীরে ধীরে কলেজের দিন কমছে, থার্ড ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষা সামনে, সত্যি বলছি পরীক্ষার পড়ায় তেমন তাগিদ নেই । মাঝে মাঝে মনে হয় কি হবে পরীক্ষা দিয়ে, আদৌ কি চাকরি পাব? কারণ সত্তরের দশকের থেকে চাকরির যে টানাটানি তা আমাকে ভাবিয়ে ছাড়তো । ক্রমাগত চাকরি বিষয়ে হতাশা আরো তীব্র হল । যখন দেখতাম পাড়ার শিক্ষিত বেকাররা দুপুরে বাড়িতে ঘুমোচ্ছে আর পাড়ার রকে বসে মেয়েদের অশ্লীল ইঙ্গিত করছে । আমার দিদিরা বড় হচ্ছে । বড়দির বিয়ের ব্যবস্থা চলছে । ঠিক সেই সময়ে আমাদের কর্নেলগোলার বাড়িওলা বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিয়ে দিল । আমরা জানতাম অনেক দিন হয়ে গেল এবার হয়তো বাড়ি ছাড়তে হবে । বাবা বাড়ি খোঁজা শুরু করতে লাগল । বাবার মাথায় দিদির বিয়ে, আমাদের পড়াশোনা, দাদার প্রায় বেকারত্ব, সেই সঙ্গে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ । বাবা মা সে সময় স্থির করলো এবার নিজের বাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে । সেই স্বপ্ন সফল করারআগ্রহ নিয়ে বাবা কর্নেলগোলা থেকে বেশ দূরে জগন্নাথ মন্দিরের কাছে নতুন বাজারে বাবার পুরনো বন্ধু বেদব্যাস দে- র বাড়িতে ভাড়া ঠিক করলো ।বেদব্যাস বাবু অনেক দিন আগে মারা গিয়েছিলেন। তাঁর কয়লার দোকান ছিল বাড়ির সামনে কয়েক কাঠা জমির ওপর । ওখানে পরবর্তীকালে তাঁর পরিবার ঘর তৈরি করে । আমরা কর্নেলগোলা থেকে উঠে গেলাম সেই বাড়িতে । নতুন বাড়ি নতুন পরিবেশ বেশ কিছু অসুবিধে হলেও ধীরে ধীরে মানিয়ে নিতে হল নতুন বাড়ির পরিকল্পনার কারণে । বাবা আস্তে আস্তে জমি খুঁজতে লাগল। কিছু জমি দেখতে দেখতে মেদিনীপুরের জর্জকোর্টের প্রায় পাশেই অরবিন্দ নগরের ৫ কাঠা জমি মা বাবার পছন্দ হলো । বাবা এক সমবায় সমিতি থেকে লোন নিয়ে জমিটা কিনলো। আমরা বাড়ির ব্যাপারে পরিকল্পনা করতে শুরু করলাম ।
এদিকে মেদিনীপুরের নতুন বাজার থেকে খড়্গপুরের পুরাতন বাজার খুব বেশি দূরে নয়, বাসে মাত্র আধ ঘণ্টার মতো । তাই গুরুদাসের বাড়ি নিয়মিত যাওয়া শুরু হয়ে গেল । ওদের বাড়ি এত ভাল লাগত যে অনেক সময় ওদের কাছে অত্যন্ত বিরক্তিকর হয়ে উঠতো । যা বুঝতে পারলেও না গিয়ে পারতাম না । গুরুদাসের বাবা ওদের সঙ্গে আমার যোগাযোগের আগে মারা গিয়েছিলেন । ছিলেন গুরুদাসের তিন দাদা, মা, ঠাকুমা, দিদি বোন । দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছিল, বোন তখন বেশ ছোট, আর এক দাদা বাইরে থাকতেন । তাঁর এক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ।
( চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন