মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৩

স্মৃতিকথা -২৯ ।। এই আমি চরিত্র ।। নীলাঞ্জন কুমার Nilanjan Kumar

 স্মৃতিকথা -২৯

                    

                            এই আমি চরিত্র

                             নীলাঞ্জন কুমার


                          ( গত মাসের পর)



                                  ।। ২৯ ।।


কলেজের থার্ড ইয়ারের সময় থেকে এভাবে কলকাতা যাওয়া শুরু হয়ে গেল । মাসে একবার কখনো কখনো দু - বার আমি কলকাতা যেতে লাগলাম । পাতিরাম তখন আমার বিশ্ববিদ্যালয় আর ' কথা ও কাহিনি ' তে তখন বসে বসে পড়ার ব্যবস্থা ছিল,  সেখানে আমি পড়তাম আর পড়তাম । ৩ টাকা ৫পয়সার মাছ ভাত আর আলুচোখা খাওয়া প্রায় নিয়মিত ব্যাপার হতে গিয়েছিল । প্রায়ই হোটেলের মালিককে ৩ টাকা দিতাম । বলতাম পাঁচ পয়সা   নেই । মালিক রাগ করতো, ছোট বড় কথা বলতো । কিন্তু ওই পর্যন্ত । আমিও পাঁচ পয়সা বাঁচানোর আনন্দ পেতাম । তখন ভাবতাম যদি সত্যি সত্যি কলকাতাতে বাস করতে পারি তবে মনের মতো পড়তে লিখতে পারব । ১৯৯৪ সালে কলকাতাতে পাকাপাকি আসার পর সে স্বপ্ন সফল হয়েছে । তখন আমার চাকরিস্থল ছিল কলেজস্ট্রিটের কাছে আর আমি অফিস সেরে ওখানে এসে পড়তাম আর
পড়তাম ।
                 যাহোক আবার পুরনো কথায় ফিরে আসি , থার্ড ইয়ারের ক্লাস,  কলকাতাতে সাহিত্যের পড়াশোনা , মেদিনীপুর জেলা লাইব্রেরি,  রাজনারায়ণ লাইব্রেরি, গুরুদাসের খড়্গপুরের পুরাতন বাজারের বাড়ি ইত্যাদি নিয়ে দিন কাটানোর মুহূর্তগুলো বেশ রঙিন হয়ে উঠতো । ধীরে ধীরে কলেজের দিন কমছে,  থার্ড ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষা সামনে,  সত্যি বলছি পরীক্ষার পড়ায় তেমন তাগিদ নেই ।  মাঝে মাঝে মনে হয় কি হবে পরীক্ষা দিয়ে,  আদৌ কি চাকরি পাব?  কারণ সত্তরের দশকের থেকে চাকরির যে টানাটানি তা আমাকে ভাবিয়ে ছাড়তো । ক্রমাগত চাকরি বিষয়ে হতাশা আরো তীব্র হল । যখন দেখতাম পাড়ার শিক্ষিত বেকাররা দুপুরে বাড়িতে ঘুমোচ্ছে আর পাড়ার রকে বসে মেয়েদের অশ্লীল ইঙ্গিত করছে । আমার দিদিরা বড় হচ্ছে । বড়দির বিয়ের ব্যবস্থা চলছে । ঠিক সেই সময়ে আমাদের কর্নেলগোলার বাড়িওলা বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিয়ে দিল । আমরা জানতাম অনেক দিন হয়ে গেল এবার হয়তো বাড়ি ছাড়তে হবে । বাবা বাড়ি খোঁজা শুরু করতে লাগল । বাবার মাথায় দিদির বিয়ে,  আমাদের পড়াশোনা,  দাদার প্রায় বেকারত্ব,  সেই সঙ্গে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ । বাবা মা সে সময় স্থির করলো এবার নিজের বাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে । সেই স্বপ্ন সফল করারআগ্রহ নিয়ে বাবা কর্নেলগোলা থেকে বেশ দূরে জগন্নাথ মন্দিরের কাছে নতুন বাজারে বাবার পুরনো বন্ধু বেদব্যাস দে- র বাড়িতে ভাড়া ঠিক করলো ।বেদব্যাস বাবু অনেক দিন আগে মারা গিয়েছিলেন। তাঁর কয়লার দোকান ছিল বাড়ির সামনে কয়েক কাঠা জমির ওপর । ওখানে পরবর্তীকালে  তাঁর পরিবার ঘর তৈরি করে । আমরা কর্নেলগোলা থেকে উঠে গেলাম সেই বাড়িতে । নতুন বাড়ি নতুন পরিবেশ বেশ কিছু অসুবিধে হলেও ধীরে ধীরে মানিয়ে নিতে হল নতুন বাড়ির পরিকল্পনার কারণে । বাবা আস্তে আস্তে জমি খুঁজতে লাগল। কিছু জমি দেখতে দেখতে মেদিনীপুরের জর্জকোর্টের প্রায় পাশেই অরবিন্দ নগরের  ৫ কাঠা জমি মা বাবার পছন্দ হলো । বাবা এক সমবায় সমিতি থেকে লোন নিয়ে জমিটা কিনলো। আমরা বাড়ির ব্যাপারে পরিকল্পনা করতে শুরু করলাম । 



      এদিকে মেদিনীপুরের নতুন বাজার থেকে খড়্গপুরের পুরাতন বাজার খুব বেশি দূরে নয়,  বাসে মাত্র আধ ঘণ্টার মতো । তাই গুরুদাসের বাড়ি নিয়মিত যাওয়া শুরু হয়ে গেল । ওদের বাড়ি এত ভাল লাগত যে অনেক সময় ওদের কাছে অত্যন্ত বিরক্তিকর হয়ে উঠতো । যা বুঝতে পারলেও না গিয়ে পারতাম না । গুরুদাসের বাবা ওদের সঙ্গে আমার যোগাযোগের আগে মারা গিয়েছিলেন । ছিলেন গুরুদাসের তিন দাদা,  মা, ঠাকুমা,  দিদি বোন  । দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছিল,  বোন তখন বেশ ছোট,  আর এক দাদা বাইরে থাকতেন । তাঁর এক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ।

                                                             ( চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...