কিছু বই কিছু কথা- ৩০৯। নীলাঞ্জন কুমার
স্তব্ধতার গান শোনো । শঙ্কর বসু । একুশ শতক , কলকাতা- ৯। মূল্য একশো টাকা ।
' রিমোট কন্ট্রোলে শাসন করছি/ তোমাদের আত্মাকে-
আজও এই মুহুর্তে.....' ( ভারতবর্ষ আজ), ' দু জনেই শরণার্থী শিবিরে বসে দাবার চাল/ আর ঘোরের ভেতর থেকে মুক্তির স্বপ্ন দেখছে । ' ( ' কাঁটাতার ও মন) কবি শঙ্কর বসুর 'স্তব্ধতার গান শোনো ' কাব্যগ্রন্থটি বারবার পড়ে দেখি তার ভেতর থেকে প্রায়শই সহজিয়া উচ্চারণ উঠে আসে । কিন্তু একটু মগ্ন হয়ে যদি দেখি তবে দেখতে পাবো তার ভেতর দিয়ে কত সাবলীলভাবে উঠে আসে উপরের পংক্তি দুটি । যা গোটা কবিতায় আলাদা মাত্রা দিয়ে যায় । কবি দীর্ঘদিন ধরে কবিতা যাপন করছেন ও তাঁর আরো পাঁচটি কাব্যগ্রন্থে র ভেতর কয়েকটি পড়ে বুঝি তিনি স্রেফ সাধারণ কবি নন । কবি তাঁর কবিতাতে এতটা মগ্ন থাকেন তার থেকে কখন অমোঘ পংক্তি উঠে আসে তা তিনি বোঝেন না প্রকৃত কবির মতো, তাই: ' উদাসী হাওয়ায়/ লাল পলাশের দল ছড়িয়ে আছে পায়ে পায়ে ' র মতো সাদাসিধে উচ্চারণের পর লিখে বসেন: ' চৈত্রের সন্ধানী মুকুল/ জননীর স্বপ্নের প্রতিটি বাঁকে/ শিল্প এঁকে দেয় ' ( জননী) মোহিত করে ।
সুখের কথা কবি সেভাবে কোনদিনও দুর্বোধ্যতার দিকে পা বাড়াননি । তবে কখনো সখনো কিছু কিছু সাদাসিধে উচ্চারণ বিবৃতি হলেও আমরা তারপরেই পাই সেই পংক্তি: ' পথ পালটিয়ে কবি চলে যায় কালপুরুষের আকাশে/ তীব্র অনুভবে হেঁটে যায়- সামনে জীবন ' যা মন ভালো করে দেয় । কবির ব্যঙ্গাত্মক অনুভূতি আমাদের বুঝিয়ে ছাড়ে তাঁর কাব্যিক মোচড়: ' কাঁধের ওপর বয়ে চলেছে অজানা শব / মোমবাতি জ্বালিয়ে বুদ্ধিজীবীরা সহযাত্রী, / গন্তব্য পড়শিনগর ...' ( ইউনিয়ন) ' শুখা মরশুমে আদিবাসীরা পাড়ি দেবে না/ প্রপাতের সন্ধানে/ আকাশের দিকে চেয়ে থাকে পুরুলিয়া ' ( পুরুলিয়া) ।
আসল কথা কবিকে পড়তে হবে মগ্ন হয়ে, রয়ে সয়ে না হলে তাকে ধরা কোন সমালোচকের পক্ষে সম্ভব নয় । শঙ্কর বসু সেই কবি যাঁকে রয়ে সয়ে পড়তে হয় । অনেক কথার ভেতর প্রকৃত কথা খুঁজতে হয় । নাহলে তাঁকে ভুল বোঝা হয় । প্রবীর আচার্যের প্রচ্ছদ শান্ত ও সুন্দর ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন