পাখিদের পাড়া পড়শী- ৯
পঙ্কজ গোবিন্দ মেধি
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ-বাসুদেব দাস,
Pankaj Gobinda Medhi, Pakhider para porshi
দ্বিতীয় অধ্যায়,
(নয়)
অবশেষে প্রকৃতি শিবিরের নির্দিষ্ট দিনটা এসে পড়ল। কম সময়ের মধ্যে শিবিরটা অনুষ্ঠিত করতে হলেও সুনন্দ, নব, কীচক এবং জ্যোতিপ্রসাদ সমস্ত ব্যবস্থা ভালোভাবে করে ফেলল। অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা পঞ্চাশজন অতিক্রম করার পরে তারা আর নতুন ছেলে মেয়ে নিতে পারল না। অধিক সংখ্যক ছেলে মেয়ের জন্য শিবিরে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাটাও কঠিন।
ভাঙরা গোঁহাই থানের বকুল গাছের নিচে ট্রিপাল পেতে একদিনের শিবিরের ব্যবস্থা করা হল।
দুপুরের খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করা হল পাগলা দিয়া নদীর তীরের বালুচরে, বনভোজের মতো করে। এই ব্যবস্থা কাকুর আগ্রহেই করা হল। কাকু বললেন যে সেদিন সবাই মিলে দুপুরের খাবার বনভোজের মতো করে খাওয়া ভালো। ছেলেমেয়েরা আনন্দ পাবে। আনন্দের মধ্য দিয়ে লাভ করা শিক্ষা সারা জীবন মনে থেকে যাবে।
কাকাবাবুর আগ্রহকে উদয়শঙ্কর এবং সুনন্দরা স্বাগত জানাল। তিনি বললেন যে চালটা তিনিই দেবেন। কাকাবাবুর নিজের ক্ষেতের চাল। প্রত্যেকেই বলল ভালোই হবে কাকাবাবু। উদয়শঙ্কর জানাল সে ডাল দেবে। বাকি জিনিসের সুনন্দ, নব এবং জ্যোতিপ্রসাদ দায়িত্ব নিল। পুরোহিত কৈলাস শর্মাকে উদয়শঙ্কররা ওদের আগ্রহ বিষয়ে বলায় তিনিও রাঁধুনির ভার নিলেন। পুরোহিত শর্মা রাধুনী দেবেন, বাপুটি কি বসে থাকবে। সে বলল চিনি এবং চা পাতার দায়িত্ব তার। উদয়শঙ্কর প্রথমে লাগবে না লাগবে না বলে ছিল যদিও বাপুটির আন্তরিকতা দেখে উদয়শঙ্কর চুপ করে রইল। মোটের উপর প্রত্যেকেই কাঁধ পেতে দায়িত্ব নেওয়ায় শিবিরটা যে সুকলমে সম্পন্ন হবে তা প্রত্যেকেই বুঝতে পারল। কোনো একজন উদ্যোগ নেওয়ার চেয়ে প্রত্যেকের সহযোগিতা থাকলে কথাগুলি সার্বজনীন হয়।
বাজারের দায়িত্ব সুনন্দ নিল। উদয়শঙ্কর সুনন্দকে বিশেষ করে প্লাস্টিকের থালা গ্লাস আনতে নিষেধ করল– ডিসপোজাল সামগ্রী গুলি কাগজের হলে পরিবেশ অনুকূল হয়। পরিবেশ শিবির অনুষ্ঠিত করলে এই ধরনের সাধারণ অথচ গুরুত্বপূর্ণ কথাকে অবহেলা করা যায় না।
থালা এবং গ্লাসের জন্য সুনন্দকে নলবাড়ি যেতে হল। বগলস চকে সস্তার প্লাস্টিকের থালা গ্লাস পাওয়া যায়। কাছের একটা টেন্ট হাউসে বলে সে একটা সামিয়ানা লাগাল। রন্ধন প্রকরণে ব্যবহার করা রান্নার বাসনগুলি গ্রামের নামঘর থেকে ন্যূনতম মূল্যে পাওয়া যায় বলে বাসনপত্রের সমস্যাটা এভাবেই সমাধান করা হল। দৈনিক হিসেবে হাজিরার কাজ করা বিষ্ণু সেগুলি একটি ঠেলায় তুলে নিয়ে গিয়ে নদীর পারের বালুচরে পৌঁছালো।
একদিকে শিবিরের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আর অন্যদিকে দিনের খাবার যোগার একসঙ্গে চলতে থাকল। সৌম্যদা সকালের প্রথম গাড়িতে এসে বগলস চকে পৌঁছাল। সৌম্যদার জন্য চকে উদয়শঙ্কর এবং সুনন্দ অপেক্ষা করছিল।নবজিৎরা আলাদা আলাদা ভাবে নিজের কাজে ব্যস্ত রয়েছে। উদয়শঙ্কর সৌম্যদাকে সুনন্দের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। সুনন্দের আগ্রহে তিনিও হরিণের দোকানে গরম গরম পুরি খেতে ঢুকলেন।
–তোমার কথা উদয় আমাকে ফোনে বলেছে। তোমার আগ্রহের জন্যই নাকি এই শিবিরটা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পরিবেশ সচেতনতা আগের দিনের ঋষি মুনিদের দিন থেকেই প্রচলিত হয়ে আসছে। তবে উত্তর আধুনিক সময়ে তার প্রয়োজনীয়তার দিকের প্রতি লক্ষ্য রেখে চর্চার ধারণা পরিবর্তিত করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। আমাদের প্রত্যেকেরই সচেতন হওয়ার সঙ্গে পরিবেশ শিক্ষিত ও হতে হবে।
সুনন্দ একান্ত মনে শুনে চলেছে।
সৌম্যদা কথাগুলি ধীরে ধীরে, থেমে থেমে বলে চলেছে।
– আমি নির্দিষ্ট জায়গাটা দেখিনি। উদয়শঙ্করের ধারণা থেকে জায়গাটা আমার কাছে পরিচিত হয়ে পড়েছে। এই অঞ্চলের পরিবেশ উন্নয়নের জন্য উদয় আমার সঙ্গে অনেক কথা বলেছে। সেইসব কার্য রূপায়িত করতে পারলে এই অঞ্চলটি এক অনন্য পর্যটন স্থান রূপে পরিগণিত হবে।পরিবেশ সংরক্ষণ এবং প্রকৃ্তি পর্যটনের ক্ষেত্রে কাজ করতে পারলে এক সঙ্গে দুটো সমস্যার সমাধান হয়।একদিকে প্রকৃ্তি যেভাবে নিরাপদে থাকে অন্যদকে প্রকৃ্তি একদল তরুণ তরুণীকে প্রযোজনার সুবিধা দেয়।ফলে অনেকটা পরিমাণে বেকার সমস্যারও সমাধান হয়। আজ এখানে দেরি করব না। শিবির শেষ হওয়ার পরে আমরা কথা বলব।
পুরি ডাল এবং একবাটি দৈ দিয়ে তিনজনেই রাতের আহার দ্রুত সম্পন্ন করে ভাঙরা গোঁহাইর থানে এল। পথে আসার সময় সুনন্দ উদয়শঙ্করকে সাক্ষাৎ করা হেমেনদার ঘরটা দেখিয়ে দিতে ভুলে গেল না।সৌম্যদা জায়গাটার গুণ-গরিমা ব্যাখ্যা করল । উদয়শঙ্কর প্রথম দিন আসার সময় লাভ করা অভিজ্ঞতার যতখানি সম্ভব ততখানি বর্ণনা করল। বাঁধটা পার হয়ে পাকা রাস্তাটার কাছে থাকা মরা নদীর বন্ধ জলের জলাশয়ের তীরের শিমুল গাছটা–যে গাছের নিচে প্রথম দিন এসে উদয়শঙ্কর বসেছিল সেটা দেখিয়ে দিল। তখন জলজ পাখি গুলি জলাশয়টার জলে জল কেলি করছিল। কিচিরমিচির শব্দ করে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিগুলি উড়ে যাচ্ছে এবং এসে জলে পড়ছে।
সৌম্যদা নিজের অনুভব ব্যক্ত করে বলল–অপূর্ব দৃশ্য। জায়গাটা যথেষ্ট ভালোলাগার মতো।
পর্যটন নিবাসের উদয়শঙ্কর থাকা ঘরে এসে সৌম্যদা পিঠে বহন করে আনা রুকসেকটা রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে চারপাশে একবার দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। কয়েক মিনিটের মত এভাবে চারপাশে দেখার পরে তিনি পুনরায় ঘরে এলেন। সুনন্দ এবং উদয়শঙ্কর তখনও ঘরটিতে বসেই ছিল।সৌম্যদার মুখের চাহনিতে ধন্যবাদ এবং সন্তুষ্টি মিশ্রিত হয়ে রয়েছে।
– নদীটা কত দূরে?
সৌম্যদা জিজ্ঞেস করা প্রশ্নের উত্তরে উদয়শঙ্কর বলল– একটু দূরে।
সৌম্যদা আসার খবর পেয়ে নব, কীচক, এবং জে পি ও ঘরটিতে বেরিয়ে এল। ওদেরকেও উদয়শঙ্কর সৌম্যদার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল।
– উদয়শঙ্করের মাধ্যমে তোমাদের প্রায় প্রত্যেকেরই নামের সঙ্গেপরিচিত। আজ তোমাদের প্রত্যেকের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেলাম। তোমাদের প্রস্তুতি কেমন? শিবির কটা থেকে শুরু হবে?
–সৌম্যদা প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হয়েছে। নটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে শিবিরের কাজ আরম্ভ করতে পারা যাবে।
– সঠিক সময়ে আরম্ভ করতে পারবে কি?
– হ্যাঁ সৌম্যদা পারা যাবে।
– সময়ের দিকে সব সময় নজর রাখবে। যে কাজ যখন আরম্ভ করবে বলে ভাবছ, সেই কাজ সেই সময়েই আরম্ভ করবে। শিবির থেকে অন্তত ছেলে মেয়েরা সময়ানুবর্তিতার কথা শিখতে পারবে। কতজন ছেলে মেয়ে শিবিরে অংশগ্রহণ করবে?
– পঞ্চাশ জন।
পঞ্জীয়ন মাশুল আদির কথা উদয়শঙ্কর বলেছে। উদয়শঙ্করের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে পুনরায় সৌম্যদা বলল– উদয়ের উপদেশ মতো কাজ করবে। সবকিছুই ভালো ভাবে করতে পারবে। সে এখন জ্যেষ্ঠ পরিবেশ কর্মী।
– হ্যাঁ সৌম্যদা, আমরা তার উপদেশ এবং নির্দেশ অনুসারে কাজ করতে শুরু করেছি।
সঠিক সময় নয়টার সময় প্রত্যেকে প্রস্তুত হল। ছেলেমেয়েরা প্রত্যেকেই এসে নির্দিষ্ট সময়ের আগে সারি সারি ট্রিপালে বসে নিয়েছে। কাকাবাবু এবং কাকিমার সঙ্গে বৌমা ও এসেছে। সুনন্দরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে সারি সারি পেতে রাখা চেয়ারে দুই-চার জন স্থানীয় ব্যক্তি ও এসে বসেছেন। বয়োজ্যৈষ্ঠ ব্যক্তি অন্তত কয়েকজন থাকলে অনুষ্ঠানের সৌষ্ঠব বাড়ে। পুরোহিত শর্মা আর বাপুটিকে কে পায়। সারাটা জীবন ধর্মের সঙ্গে লেগে থাকা মানুষ দুটি ধরিত্রী মায়ের সেবা করার সুযোগ পেয়ে নিজেকে শতকোটি সৌভাগ্যবান বলে ভাবছে। তারা দুইজন তার জন্য উদয়শঙ্করকে ভুরিভুরি আশীর্বাদ দিচ্ছে। দুজনেই অত্যন্ত আপ্লুত। নিজের কথা চিন্তা না করে পালিত ধরিত্রির কথা চিন্তা করা মানুষ ও পৃথিবীতে আছে। সেই আবেগ এবং উৎসাহেই বাপুটি ও চা চিনির খরচ দেবে বলে উৎসাহিত হয়ে কথা দিয়েছে। ব্যাংকে চাকরি করার সূত্রে উদয়শঙ্কর সম্প্রসারণ শিক্ষার বিষয়ে কিছু কথা জানে। এই শিক্ষার সুপ্রয়োগ করতে পারছে বলেই উদয়শঙ্করের এই বিশেষ সফলতা।
কাকাবাবুর আগ্রহ আরও বিশেষভাবে লক্ষ্য করার মতো। কাকিমা এবং বৌমাকে সঙ্গে নিয়ে আসা মানুষটি বৌমাকে কাজে হাত লাগাতে বলেছে– বৌমা এইসব সমাজ হিতৈষী কাজ। করতে পাওয়ার সুযোগ পাওয়াটাই বড়ো কথা, করাটা তার চেয়েও বড়ো কথা। তোমার সেই সৌভাগ্য ঘটেছে।
শ্বশুরের কথাতে সায় দিয়ে বৌমা ছেলে মেয়েদের বসার তদারক করছে। নতুন যারা এসেছে তাদের হাতের ইশারায় বুঝিয়ে দিচ্ছে। এক উৎসবমুখর পরিবেশের সাক্ষী হয়ে পড়েছে পরিবারটা। নিজের বাড়ির উৎসব-পার্বণের মতো বৌমা চেয়ারটা এগিয়ে দিচ্ছে।
সুনন্দের বোন জ্যোতিমালাকে উদয়শঙ্কর চিনতে পারেনি। জুলিয়েটের সঙ্গে মিলে সে চেয়ারগুলি মুছে দিচ্ছে।
সুনন্দ দূর থেকে উদয়শঙ্করকে বলল– ওই যে আমার বোন জ্যোতিমালা। নবম শ্রেণিতে পড়ে। আপনি আমাদের বাড়িতে গেলেই সে লুকিয়ে থেকে বলে– আমাকে যেন তোরা কেউ তার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য ডাকবি না! ডাকলে কিন্তু কথা খারাপ হবে।বড়ো লাজুক মেয়ে। তবে আজ সে লজ্জা না করে এগিয়ে এসেছে।
উদয়শঙ্কর সুনন্দের কথার সুবিধা নিয়ে তার কাছে এগিয়ে এল।
– কে এই মেয়েটি। উড়না সরিয়ে আজ এসেছে যে। ফোনে বড়ো বড়ো কথা বলতে পার কিন্তু একবার খবর নিতে পার না!
সমাজের মধ্যে এভাবে না না বললে হয়তো সে ইতিমধ্যে দৌড়ে পালাতো।আজ ও খুবই উৎসাহিত।
কিছু একটা বলবে বলে উদয়শঙ্কর তার কাছে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। সে আড় চোখে উদয়শঙ্করের দিকে তাকাল এবং কিছুক্ষণ পরে জিজ্ঞেস করল– দাদা, ভালো তো?
অতি নম্র এবং বিনয় দেখানো মেয়েটি কিন্তু একদিন ফোনেই উদয়শঙ্করকে সতর্ক করে দিয়েছিল।
উদয়শঙ্করের এটা ভেবে ভালো লাগল যে শিবিরটা এদের শিক্ষা দিক না দিক, সামাজিক প্রেক্ষাপটে কাজ করার জন্য এরা পরস্পর উৎসাহ অনুভব করছে। নির্দিষ্ট বৃত্তের সীমারেখা অতিক্রম করেছে। একে অপরের হাত ধরেছে। তাদের বক্তব্য অনুসারে সমস্ত বয়সের লোকের জন্যই এই অনুষ্ঠানটা গ্রহণযোগ্য হয়েছে।
ভোর বেলার কুয়াশা ভেদ করে বেরিয়ে আসা রোদ শিবির অনুষ্ঠিত করা জায়গাটিকে বিশেষ মাত্রা প্রদান করেছে। পরিবেশ উৎসবমুখর। উপস্থিত প্রত্যেকেরই মনগুলি রঙিণ। ঠান্ডার প্রকোপ আছে যদিও কেউ পরোয়া করছে না।
নিজেকে সতেজ করে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে সৌম্যদা। পরনে কোমরের নিচ পর্যন্ত সবুজ রঙের একটি জ্যাকেট। মাথায় সৈনিক ব্যবহার করা সবুজ রঙের টুপি। সবুজ জিন্স প্যান্ট। জুতো।সৌম্যদা এসে কাকাবাবুর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেছে। কাকাবাবু বৌমাকে সৌম্যদার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে কাকিমাকেও কাছে ডাকছে । নিজের মানুষটাকে সৌম্যদার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য কাকাবাবুর ইচ্ছা করছে এবং সঙ্গে সৌম্যদাকে রাতের খাবার জন্য তার বাড়িতে নিমন্ত্রণ জানিয়েছে ।সৌম্যদা প্রত্যুত্তরে কী বলল কিছুটা দূরে উপস্থিতদের জানার উপায় নেই।
দিপুলদার সঙ্গে আসা হেমেনদাও সৌম্যদার পাশে দাঁড়িয়েছে। দেখতে ছোটোখাটো দিপুলদা নলবাড়ি শহরের শঙ্করদেব একাডেমির ক্যান্টিনটা চালায়। উদয়শঙ্কর সুনন্দের সঙ্গে গিয়ে তাকে এই বিষয়ে অবগত করায় তিনি বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।দিপুলদা, হেমেনদারা উপস্থিত থাকা মানেই কোনো অনুষ্ঠানের সফলতা নির্ভর করে। বগলচকের দূর্গা পূজার সময় অন্যান্য সবার সঙ্গে তারা দুজন ভ্রাম্যমান থিয়েটারে কাউন্টারে বসা মানে হিসেবে অমিল হওয়ার প্রশ্নই উঠে না । সপরিবারে আসা হেমেনদার সঙ্গে তার পত্মী মৃনালী, দুই মেয়ে পূজা এবং প্রিয়াও এসেছে। তারা দর্শকের আসনে বসে কার্যসূচি আরম্ভ হওয়ার অপেক্ষা করছে । প্রকৃতি শিবিরের চেয়ে অনুষ্ঠানটা প্রকৃতপক্ষে প্রকৃতি উৎসবে পর্যপুষিত হওয়া যেন মনে হচ্ছে উদয়শঙ্করের। উদয়শঙ্কর এত ব্যাপক সাপোর্ট পাওয়া যাবে বলে ভাবেনি। নবজিৎ বৈশ্য এবং কীচকের যৎপরোনাস্তি চেষ্টার জন্য উপস্থিতির সফলতা সামাজিকভাবে প্রত্যেকেই দেখতে পেয়েছে ।
উপস্থিত প্রত্যেকেই উদয়শঙ্করকে চেনে না বলে তাদের সঙ্গে কথা বলার দায়িত্ব সুনন্দের। প্রথম প্রচেষ্টাকে মানুষ মন থেকে গ্রহণ করলে তবেই পরবর্তী কাজকর্ম এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় তাদের সাহায্য লাভ করবে বলে ভাবা যায়। সেই জন্য উদয়শঙ্কর চেষ্টার কোনো ত্রুটি করেনি।
প্রকৃতি কর্মীরা বসার জন্য মাটিতে ত্রিপাল পেতে তার উপরে পুনরায় কার্পেট পেতে দিয়েছে। কার্পেট পেতে দেওয়ার জন্য বসতে সুবিধা হয়েছে। নাহলে এত ঠান্ডায় কেবল ত্রিপালে বসা অসম্ভব কথা। প্রকৃতি কর্মীরা সামরিক বাহিনীর লোকের মতো সারি সারি ভাবে বসেছে বলে দেখতে সুন্দর লাগছে। কারও পরনে সোয়েটার, কারও আবার সোয়েটারের ওপরে গরম কাপড়। দুয়েকজন টুপি পরেছে।
নয়টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে উদয়শঙ্কর প্রকৃতি শিবির আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করার জন্য কাকাবাবু হরগোবিন্দ ডেকাকে আমন্ত্রণ জানাল। কাকাবাবু নির্দিষ্ট জায়গায় আসতে থাকা মুহূর্তে উদয়শঙ্কর কানে কানে বলল– কোনো মতেই দশ মিনিটের বেশি বলবেন না।
কাকাবাবু সম্মতি সূচকভাবে উদয়শঙ্করকে জানাল–' আমি কি কথা বলার মতো মানুষ নাকি হে.নবজিৎ বৈশ্য একটি গামছা দিয়ে কাকাবাবুকে বরণ করে নিল। কাকাবাবুর রং রূপ বদলে গেল। মানুষটা আবেগে উতলা হয়ে পড়লেন। হলে জনগণকে সম্বোধন করা স্বর হয়ে পড়ল অনুচ্চ। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে কাকাবাবু একজন সামরিক ব্যক্তির মতো সপ্রতিভ হয়ে পড়লেন– মাথা সোজা, স্ফীত বক্ষ, গম গম করা কণ্ঠ। মাত্র দশ মিনিটের ভেতরে কাকাবাবু প্রকৃতির প্রতি নিজের আনুগত্যতা নিবেদন করে এরকম একটি সাবলীল বক্তব্য রাখলেন যে উপস্থিত প্রত্যেকেই মৌন হয়ে একই ধ্যানে তার কথা শুনতে থাকল। উদয়শঙ্কর আগে বলে রাখা অনুসারে কাকাবাবু শেষে বলতে ভুললেন না‐ আজকের এই পবিত্র মুহূর্তে এই স্থানে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রকৃতি শিবিরের দ্বারাই আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন হল বলে ঘোষণা করা হল।
উপস্থিত প্রত্যেকেই হাততালি দিয়ে হর্ষোল্লাশ প্রদর্শন করল।
পরবর্তী কার্যসূচি হিসেবে উদয়শঙ্কর সৌম্যদাকে প্রত্যেকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তার সামাজিক কাজকর্মের একটি সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দিল সঙ্গে প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য তার অবদান এবং সাহিত্য কৃতির সম্যক পরিচয় তুলে ধরে বলল‐ সৌম্যদার দ্বারা রচিত গ্রন্থ অধ্যয়নের মধ্য দিয়ে আমরা প্রকৃতি বিষয়ক জ্ঞান আহরণ করতে সক্ষম হব। তোমরা সময় সুবিধা পেলে তার বইগুলো পড়ে দেখ।
সৌম্যদা প্রত্যেককে শুভেচ্ছা জানিয়ে নিজের দায়িত্ব গ্রহণ করল। নিজের দায়িত্ব কয়েকটি পর্বের মধ্য দিয়ে সমাপন করবে সৌম্যদা। প্রতিটি শিবিরেই প্রথম পর্ব হিসেবে পরস্পর সঙ্গে পরস্পরের পরিচিতি গ্রহণ। আজও প্রথমে পরিচয় পর্ব দিয়ে আরম্ভ হল। প্রথম সারির বাঁ দিক থেকে পরিচয় পর্ব আরম্ভ করে সৌম্যদা দেখতে পেল কাকাবাবুর বৌমা সেই স্থানে বসে আছে।
সৌম্যদা তার দিকে ডান হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল‐ হ্যাঁ আপনার থেকে শুরু । নিজের নাম ঠিকানা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা জানাবেন।
অপ্রস্তুত হয় পড়া বৌমা সম্ভ্রম এবং সচেতন ভাবে উঠে দাঁড়াল। তার শরীর থেকে খসে পড়া গরম কাপড়টা খামচে ধরে পুনরায় শরীরটা ঢেকে নিয়ে বলল ‐নমস্কার। আমি অনামিকা ডেকা। বরকুরিহা, অসমিয়াতে স্নাতকোত্তর।
‐- নমস্কার, আমি জুলিয়েট কলিতা, বরকুরিহা, স্নাতকোত্তর ছাত্রী ।
– নমস্কার আমি জ্যোতিমালা কলিতা,বরকুরিহা, নবমমান।
একজন একজন করে গিয়ে শেষের জন হল জ্যোতিপ্রসাদ। আমাদের জেপি।
– নমস্কার, আমি জ্যোতিপ্রসাদ কলিতা,অররা, টেট শিক্ষক।
উদ্যোক্তা হিসেবে সুনন্দ নিজের পরিচিতি জানিয়ে বলল– আমি সুনন্দ কলিতা,বরকুরিহা, টেট শিক্ষক।
– আমি উদয়শঙ্কর, ভারতীয় স্টেট ব্যাংকের কর্মচারী।
পরিচিতি পর্ব থেকে জানা গেল যে শিবিরে উপস্থিত অংশগ্রহণকারীরা নবম শ্রেণি থেকে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ। শিক্ষকতার বাইরেও কয়েকজন রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য অভিযান, রাষ্ট্রীয় নাগরিকপঞ্জি ইত্যাদি ছাড়াও ব্যক্তিগত সংস্থা আদিতে কর্মরত রয়েছে। সমস্ত শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রী যুবক যুবতির উপস্থিতির জন্য সৌম্যদা আপ্লুত হয়ে পড়ল। সৌম্যদার মুখমন্ডলে প্রতিভাত হয়েছে স্ফুট অস্ফুট আনন্দের লহর। শিবিরে এরকম বিভিন্ন ক্ষেত্রে জড়িত যুবক-যুবতির অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত বোধ করা সৌম্যদা মনের আনন্দ বাহ্যিকভাবে প্রকাশ না করে নিজের কার্যক্রমণিকা এগিয়ে নিয়ে গেল।
–এখন তোমরা বসে থাকা অবস্থায় ক্রম অনুসারে এক দুই তিন করে বলে যেতে থাকবে। বলার সময় হাতটা তুলতে ভুলে যেও না। তোমরা নিজের নিজের ক্রম সংখ্যাটা মনে রাখবে। পুনরায় প্রয়োজন হবে। তোমাদের এই ক্রম সংখ্যাটা আজকের শিবিরের রোল নাম্বার।
প্রথমে কাকাবাবুর বৌমা অনামিকা আরম্ভ করল–এক আর শেষ অংশ গ্রহণকারী প্রকৃতি কর্মী জেপি বলল–চুয়ান্ন।
– তোমরা চুয়ান্ন জন অংশগ্রহণকারী। আমরা এখন প্রকৃতিকর্মীরা কী রকম হওয়া উচিত সেই বিষয়ে কয়েকটি কথা আলোচনা করব। অরণ্যে প্রবেশ করলে আমাদের কী করা উচিত,কী করা অনুচিত। আমরা অরণ্যে প্রবেশ করার সময় কখনও অপরিপাটি কাপড় পরে যাওয়া উচিত নয়। পাতলা কাপড় ব্যবহার করলে তা বন্য লতা বা গাছের কাঁটায় লেগে থাকবে।একেবারে পাতলা কাপড় পরলেও সমস্যা হয়।গাছের-ডাল-পাতা-কাঁটা ত্বকের অনিষ্ট করতে পারে।গরমের দিনে লম্বা হাতা জামা এবং ঠান্ডায় সেরকম জ্যাকেট বা সোয়েটার পরা যেতে পারে।মাথায় এরকম একটি টুপি থাকলে -সৌ্ম্য পরে থাকা টুপিটা হাতে নিল-রোদ থেকে মাথা এবং চোখকে রক্ষা করতে পারা যায়।অরণ্যে জুতো ব্যবহার করাটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।দেখতে হবে যাতে জুতোজোড়ার নিচের সোলটা মিহি না হয়।মিহি সোলের জুতোয় পা টিপে রাখার অসুবিধা।মনে রাখবে অতিরিক্ত কাপড় তোমার বোঝা বাড়াবে,অরণ্যের ভেতরে প্রবেশ করলে শরীরে অতিরিক্ত বোঝা থাকলে তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়তে হতে পারে।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সৌ্ম্যদা প্রকৃতি কর্মীদের দিকে তাকাল।একটি ছেলের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে সৌ্ম্যদা জিজজ্ঞেস করল-‘তুমি কী চিবোচ্ছ?
ছেলেটি লজ্জিতভাবে মাথা নিচু করে বলল-তামোল স্যার।
-প্রকৃ্তি কর্মীদের এই বিষয়ে সাবধান হতে হবে।অরণ্যকে ভালোবাসা কোনো প্রকৃতি কর্মী তামোল-পান -সাদা সিগারেট-গুটখা-মদ ইত্যাদি কোনো নেশা জাতীয় অথবা বা অন্য কোনো মাদক দ্রব্য ব্যবহার করতে পারবে না। তোমাদের সেভাবেই চরিত্র গঠন করা শিখতে হবে।যাও,তুমি তামোলটা ফেলে দিয়ে এসো।
ছেলেটি মাথা নিচু করে মুখের মধ্যে চিবোতে থাকা গুটকাটুকু ফেলে আসার জন্য দৌড় লাগাল।দৌড়া্দৌড়ির জন্য কাছেই বসা ছেলেটির সঙ্গে তার ধাক্কাধাক্কি লেগে পড়ে যাচ্ছিল।তার ভয় হল সৌ্ম্যদাকে সে তামোল খাচ্ছে বলা মিথ্যা কথাটা যদি ধরা পড়ে যায় ,সবার সামনে যদি তাকে তিরস্কার করে!
-অরণ্যে থাকা জীবজন্তু নেশা জাতীয় সামগ্রীর গন্ধ অত্যন্ত সংবেদনতার সঙ্গে বুঝতে পারে।সেসব সেবন করে অরণ্যে প্রবেশ করা মানে তুমি তোমার উপস্থিতির কথা বন্যজন্তুকে জানিয়ে দেওয়া বোঝায়।বন্য জীবজন্তু মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে থাকতে চায়।তুমি যদি ওদের প্রত্যক্ষ করার জন্য অরণ্যে প্রবেশ করে থাক তাহলে তুমি কীভাবে সফল হবে।বন্য জীবজন্তু স্বভাবত হিংস্র নয়।ওদের অপছন্দের কাজ করে আমরা ওদের হিংস্র করে তুলি।ওরা হিংস্র হওয়া মানে আমাদের প্রাণের প্রতিই সংশয়।সেইজন্য অরণ্যে প্রবেশ করলে পারফিউম জাতীয় কোনো সুগন্ধি ও ব্যবহার করবে না।বুজেছ।এখন আসছি প্রকৃ্তির কাছাকাছি।তোমাদের মধ্য থেকে কোনো একজন বলতো প্রকৃতি মানে কী বোঝ?প্রকৃতি কাকে বলে।
অংশগ্রহণকারীরা নিশ্চুপ।এভাবে কয়েক মুহূর্ত পার হয়ে যাওয়ায় কাকাবাবুর বৌমা অনামিকা উঠে দাঁড়াল এবং বলতে লাগল-এই চরাচর পৃ্থিবীর দৈনন্দিন প্রাকৃতিক ঘটনাগুলি যে নিয়ন্ত্রণ করে সেই প্রকৃ্তি। রোদ-জ্যোৎস্না, বাতাস-বৃষ্টি আদির নিয়ন্ত্রক প্রকৃ্তি।
সৌম্যদা মাথা নেড়ে সায় দিল– ঠিকই আছে। তারপরে একজন বল?
কিছুক্ষণ কেউ দাঁড়াল না। মিনিটের হিসেবে সময় পার হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ জুলিয়েটের ভাই নেপোলিয়ন উঠে দাঁড়াল– গাছপালা, পাখ-পাখালি, জীবজন্তু–দাঁড়িয়ে নিজের কথাটা বলেই সে চট করে বসে পড়ল।
সৌম্যদা পুনরায় মাথা নেড়ে বলল–অন্য কেউ বল।
দু চারজন ছেলে মেয়ে ভয়ে ভয়ে তাদের মন্তব্য করল। বিদ্যালয়ের শ্রেণীতে শিক্ষক জিজ্ঞেস করলেও কিছুই বলতে না চাওয়া জনেও সাধারণ জ্ঞান থেকে দু একবার বলার চেষ্টা করছে। সুনন্দ সেরকম ছেলে মেয়েদের সচেতনতা দেখতে পেল। এটা শিবিরের ধনাত্মক দিক। অন্যদিকে সুনন্দদের গ্রামের মেয়ে যে সামাজিক কাজে এভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে আজকের আগে সুনন্দ তা ভাবতেই পারেনি। পূজা পার্বণে ওদের পোশাকের বিলাসিতা ছাড়া কোনোদিনই কোনো রকম সামাজিক তৎপরতা দেখা যেত না। পুজো কমিটি ইত্যাদিতে মেয়েদের নাম দেখাই যায়না। দুই একজন থাকলেও সভায় না আসা নামমাত্র কার্যনির্বাহক সদস্যা মাত্র। কিছুটা পরিবেশ পেলে প্রকৃতি সংরক্ষণের কাজে ওরা নিশ্চয় এগিয়ে আসবে এবং ভালোভাবে কাজ করবে।শিবিরের এটাও হয়তো একটি ধনাত্মক দিক ।
– প্রকৃতি বললে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত জিনিস যা মানুষের দ্বারা নির্মিত হয় না। অন্যদিকে মানুষের দ্বারা নির্মিত সবকিছুকে এক অর্থে সংস্কৃতি বলা হয়। এখন প্রশ্ন হল প্রকৃতি শিবির কেন অনুষ্ঠিত করা হয়? তোমাদের মাঝখানের দু একজন বল।
নিজের মন্তব্য এবং বক্তব্য এগিয়ে নিয়ে সৌম্যদা প্রশ্ন করে যেতে লাগল।
– মানুষের দ্বারা নির্মিত না হওয়া সম্পদ সমূহের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য এবং সম্পদ সমূহ রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য পদ্ধতিগত ব্যবস্থায় শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য প্রকৃতি শিবিরের আয়োজন করা হয়।
অনামিকার উত্তরে সৌম্যদা সন্তুষ্ট হল এবং জিজ্ঞেস করল –এটা আপনাদের নিজস্ব উত্তর না কোনো বিশেষজ্ঞের উদ্ধৃতি।
– সৌম্যদা নিজস্ব উত্তর। কোনো ব্যক্তি বিশেষের উদ্ধৃতি নয়।
অনামিকার উত্তরে সৌম্যদা প্রকৃতি সংরক্ষণের প্রতি উপস্থিত প্রত্যেকের সজাগতা এবং বুদ্ধিদীপ্ততা প্রত্যক্ষ করার সুযোগ লাভ করল। এই সময়ে চা বিরতির ব্যবস্থা করা হল। চা বিরতির সময়ে দুই একজনকে তাড়াহুড়ো করতে দেখে সৌম্যদা বলল– প্রকৃতিকে অপদস্থ করার আমাদের কোনো অধিকার নেই। এভাবে সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করারও আমাদের অধিকার নেই। তোমরা সারি পেতে খাবার জিনিস নাও। নির্দিষ্ট জায়গায় খাবার জিনিস খাবে এবং উচ্ছিষ্টটা পাশে রাখা কার্টুনে রাখবে। যেখানে সেখানে রাখা জিনিস ফেলা সহ্য করা হবে না। এখন যাও-চায়ের বিরতি- পনেরো মিনিট।
সৌম্যদা গিয়ে পাশের একটা চেয়ারে বসল।
সুনন্দ এগিয়ে এসে সৌম্যদাকে এককাপ চা এবং দুটি বিস্কুট এগিয়ে দিল। সৌম্যদা নিতে অস্বীকার করে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিল যে তিনি নিজে গিয়ে সেখান থেকে নেবেন।
উদয়শঙ্কর এগিয়ে এসে বলল– লাগবেনা সুনন্দ,সৌম্যদা সেখান থেকে নেবে। আমাদের শিবিরে সমস্ত প্রকৃতি কর্মী একই ধরনের আচরণ করার নিয়ম।
চা পর্বের পরে প্রত্যেকেই এসে পুনরায় এক জায়গায় মিলিত হল। তারপরে আরম্ভ হল প্রকৃতিকে আধার হিসেবে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা। প্রকৃতি সংরক্ষণের বিভিন্ন দিক, প্রকৃতি শিবিরে অংশগ্রহণকারীদের দায়- দায়িত্ব, প্রকৃতি আন্দোলনের বিভিন্ন খুঁটি-নাটি সবগুলি দিক নিয়ে আলোচনা চলল। কেউ প্রশ্ন করল,সৌম্যদা উত্তর দিল। শিবিরে উপস্থিত প্রকৃতি কর্মীরা অত্যন্ত নিষ্ঠা প্রদর্শন করল। বলতে গেলে আন্তরিকতা পূর্ণ একটি শিবির অনুষ্ঠিত হল।
দেড়টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে সৌম্যদা দুপুরের আহারের বিরতি দিলেন।
ঠিক তখনই কয়েকজন ব্যক্তি তার কাছে এগিয়ে এল। হেমেনদার পত্নী এবং মেয়ে দুটি এগিয়ে এসে বলল– ভালো লাগার চেয়েও বেশি ভালো লাগল।
কোথা থেকে যে বাপুটি এসে উপস্থিত হল। সে বলতে লাগল– আপনি আগে এলে আর ও ভালো হত। তাহলে বেকার ঘুরে বেড়ানো ছেলেমেয়েদের কাজে লাগানো যেত।
সৌম্যদা মুচকি হেসে বলল–আচ্ছা তাই নাকি?
কৈলাস শর্মা বলল –'আমরা পূজা-পার্বণ করা মানুষ। ভূভারতের এই সমস্ত খবরই পাইনা। আজ জীবন ধন্য হল। প্রকৃতিমাতাকে হাজার নমস্কার। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনি আসবেন। আমাদের অঞ্চলের ছেলেমেয়েদের মস্তিষ্কে সুবুদ্ধি দেবেন। ওরা ধরিত্রীমাতাকে পূজা করতে সাহস শক্তি জোগাড় করতে পারবে।
বরকুরিয়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নগেন্দ্র কলিতা এগিয়ে এসে বলল– যে শিক্ষা আমি বিদ্যালয়ের শ্রেণি কোঠায় দিতে পারিনি, আপনি সেই শিক্ষা খোলা মাঠে দিলেন।
উপস্থিত প্রত্যেকের মনে বোঝাতে না পারা ভাষা।
কাকাবাবু এগিয়ে এসে সৌম্যদাকে পুনরায় মনে করিয়ে দিল– আজ রাতে আমাদের বাড়িতে–
– চেষ্টা করে দেখব কাকাবাবু। না পারলে খারাপ পাবেন না।
– তুমি তো আজ এখানেই থাকবে।
– থাকব।থাকব।
কাকাবাবু সোজাসুজি উদয়শঙ্করের কাছে গিয়ে একই কথার পুনরাবৃত্তি করতে লাগল।
উদয়শঙ্কর বলল– কাকাবাবু শিবিরের কাজকর্ম তাড়াতাড়ি শেষ হোক! আশা নিয়ে কাকাবাবু সৌম্যদার কাছে দাঁড়িয়ে রইল– চলুন আমরা এখন ওখানে যাই। দুপুরের আহারের ব্যবস্থা যেখানে করা হয়েছে সেখানে।
সৌম্যদার পেছন পেছন ছোটো শোভাযাত্রা একটা এগিয়ে চলল।
খাওয়া-দাওয়া শেষ হওয়ার পরে সৌম্যদা বলল – তোমাদের অরণ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে ছিল । দলটি ভারী হওয়ার জন্য কিছুটা অসুবিধা হল। তবু আমরা এখন এদিকে এগিয়ে যাব । উদয়শঙ্কর কোন দিকে এগুলে আমরা অরণ্যে প্রবেশ করতে পারব।'
–সৌম্যদা । সামনের দিকে গেলেই পেয়ে যাব–
পুরো দলটাকে নিয়ে সৌম্যদা এগিয়ে গেল। বয়স্ক লোকরা তাদের পথ ছেড়ে দিয়ে প্রশিক্ষণের স্থানে ফিরে এল।
সৌম্যদা এবং অংশগ্রহণকারী প্রকৃতি কর্মীরা গিয়ে যে জায়গায় উপস্থিত হল, সেখানে কয়েকটি উঁচু উঁচু গাছ রয়েছে তার মধ্যে অশ্বত্থ,মজ,জরী ইত্যাদি গাছই বেশি।
– তোমাদের সামনে থাকা গাছগুলি দেখেছ? কয়েকটি গাছ আছে একডাল, দুই ডাল তিন ডাল ন ডাল মোট বারো ডালের গাছ আছে তোমরা বারো জন যাও। গিয়ে একই গাছের নিচে দাঁড়াও।
– তোমরা গাছ কয়টি ভালোভাবে দেখ– উপর থেকে নিচ পর্যন্ত। তারপরে মৌন হয়ে থেকে গাছ কয়টিকে জড়িয়ে ধর। ধীরে ধীরে গাছ কয়টির সঙ্গে তোমাদের নিজস্ব অনুভবের কথা বল তোমাদের পরিবারের কাউকে স্পর্শ করার মতো অনুভব হয় কি দেখ কয়েক বছর আগে কাজিরঙ্গায় অনুষ্ঠিত হওয়া প্রকৃতি শিবিরের কথা উদয়শঙ্করের মনে পড়ে গেল । প্রকৃতি প্রেমের সেটা ছিল প্রথম পাঠ ।
-হয়েছে, এসো এখন তোমরা এক সারি হয়ে দাঁড়াও এবং তারপেছনে বারো জন যাও । তোমরাও একই ধরনে কর।
প্রত্যেকের বৃক্ষ আলিঙ্গন শেষ হওয়ার পরে সৌম্যদা জিজ্ঞেস করল – তোমাদের অনুভব বল।
কীচক বলল– ভাষায় বোঝাতে না পারা অনুভব অনন্য ।নবজিত বলল জীবনে প্রথমবারের জন্য গাছের প্রেমে পড়লাম। আর কেউ কিছু বলবে নাকি সেই দৃষ্টিতে সৌম্যদা প্রত্যেকের দিকে তাকাল। তখনই দৃষ্টি পড়ল জুলিয়েটের উপরে।
– বল?
– গাছও এত সুন্দর করে কথা বলতে জানে। ভালোবাসতে জানে!
– আমি ধরে থাকা গাছটা কাকুতি মিনতি করে বলেছিল– আমাকে কেটো না নিঃশ্বাস নিতে অক্সিজেন দেব।
অনামিকা বলল।
বুকের উচ্চতায় দুহাত তুলে সৌম্যদা দশ আঙ্গুল মেলে দিল– সুন্দর ,কী সুন্দর অভিব্যক্তি। আমি অসমের বিভিন্ন জায়গায় প্রকৃতি শিবিরে বিভিন্ন প্রকৃতি কর্মীর সাক্ষাৎ করেছি, তার মধ্যে তোমরা প্রকৃত অর্থে প্রকৃতি প্রেমী। এতদিন কোথায় লুকিয়ে ছিলে তোমরা। তোমরা সক্রিয় হয়ে থাকলে অসমের বনজ সম্পদের উপরে কেউ লোলুপ দৃষ্টি দিতে পারবে না । উদয়শঙ্কর এদের মধ্যে প্রচুর সম্ভাবনা আছে। কেবল ব্যবহার করলেই হল ।
সৌম্যদা তাদের সঙ্গে এগিয়ে যেতে লাগল। যেতে যেতে তারা পাগলা দিয়া নদীর তীরে পৌঁছে গেল। মাঝেমধ্যে কাছে থাকা দু একজনের সঙ্গে দুই একটা কথা বলল। শীতকালের দিন, দুপুর দুটো বাজতেই বেলা পড়ে এল।
– নদীর তীর ধরে কিছুটা এগিয়ে গেলে আমরা একটা পাকা রাস্তা পাব। সেটা সোজাসুজি গিয়ে বগলচ চকে পৌঁছেছে।
উদয়শঙ্কর সৌম্যদাকে বলল।
–এভাবে গিয়ে আমরা শিবির পাতা জায়গাটা পাব কি?
উদয়শঙ্কর সায় দিয়ে বলল– হ্যাঁ। পাব।
– তাহলে আমরা এভাবেই যেতে থাকি।
কিছুটা দূরে এসে উদয়শঙ্কর উচু উঁচু শিমুল গাছ গুলির দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে বলল– সেই যে এখান থেকে আবছা ভাবে দেখতে পাওয়া শিমুল গাছ কয়টি আছে, কয়েকটিতেই সারস পাখির বাসা।
– আগামীকাল সকালে আমরা সেদিকে যাব।
সুনন্দ সৌম্যদার কাছে এসে বলল–দাদা, পাখির বিষয়ে কিছুটা–
-পাখি নিরীক্ষণের জন্য খুব শীঘ্রই আমরা একটা শিবিরের ব্যবস্থা করব।তখনই পাখির বিষয়ে সবিস্তারে আলোচনা করতে পারা যাবে।
সৌম্যদা সুনন্দকে পাখির শিবির অনুষ্ঠিত করার আশ্বাস দিল।
নদীর তীর ধরে গেলে রাস্তাটায় ওঠার জন্য একটা খাড়াই অতিক্রম করতে হয়। খাড়াইটা পরিহার করার জন্য উদয়শঙ্কর আগে গিয়ে একটা ছোটোখাটো রাস্তা দিয়ে দলটিকে এগিয়ে আনল। রাস্তাটার বিপরীত দিকের জলাশয়ে জলজ পাখিরা জলকেলি করছে। পাখিগুলির দিকে ইঙ্গিত দিয়ে সৌম্যদা পাখির শিবির অনুষ্ঠিত করার সময় এই পাখি গুলির বিষয়ে আলোচনা এবং অধ্যয়ন করার ইচ্ছা প্রকাশ করল।
এই জায়গাটা থেকে থানটা প্রায় সামনে। প্রত্যেকেই মৌন হয়ে হাঁটছে। শিবিরের জায়গায় পৌঁছে যাওয়ায় প্রত্যেকেই নিজের নিজের জায়গায় বসল।সৌম্যদা প্রত্যেকে উপস্থিত আছে কিনা দেখার জন্য এক দুই বলার সঙ্গে সঙ্গে একজন একজন করে নিজের নিজের ক্রমিক সংখ্যা বলায় শেষের জন জে পি চৌষট্টি বলে বলল।
– আজকের প্রকৃতির শিবির তোমাদের কেমন লাগল? তোমাদের কোনো কাজে এসেছে কি?
প্রত্যেকটি সমস্বরে বলল– ভালো লেগেছে। প্রত্যেকেই ভালো লাগল বলে বলবে সৌম্যদা সে কথা জানত। কিন্তু তাদের ব্যস্ত করে রাখার জন্য এবং উৎসাহিত করার মানসে প্রশ্নটা করায় সেই উত্তরটাই পেল। এখন তোমাদের জন্য আহার বিরতি। আধঘন্টা। তারপরে তোমরা পুনরায় এখানে আসবে আর আমি কিছুক্ষণের জন্য দু'চারটা কথা বলব।
আধঘন্টা পরে সৌম্যদা পুনরায় শিবিরের কাজ আরম্ভ করে গুনতি করল। প্রতিজন প্রকৃতি কর্মীই খাওয়া-দাওয়া করে উপস্থিত হয়েছে।
সৌম্যদা সবার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করল– খাওয়া-দাওয়া কী রকম হয়েছে?
– ভালো হয়েছে স্যার, পিকনিক খাবার মতো মনে হয়েছে।
উপস্থিত প্রকৃতি কর্মী একজন দলটির মাঝখান থেকে বলল।
– শিবির এবং বনভোজ দুটোই একসঙ্গে তাহলে। আমরা এখন কয়েকটি ছোটোখাটো কথা বলে আজকের জন্য বিদায় নেব। তার আগে উদয় তুমি আমার ব্যাগটাতে থাকা বই একটি একটি করে সবার মধ্যে বিলি করে দাও।
উদয়শঙ্করকে সুনন্দও সাহায্য করল। দুজনেই ব্যাগটিতে থাকা বই এক এক করে সবার মধ্যে বিলি করে দিল।
– এই বইটির মূল্য পঞ্চাশ টাকা। তোমাদের কাছ থেকে নেওয়া পঞ্জীয়ন মাসুলের জন্য এটা দেওয়া হল।
বইটা হাতে নিয়ে প্রকৃতি কর্মীরা সেটা নাড়াচাড়া করে দেখতে লাগল।
– তোমরা বইটি পরে দেখবে। ধৈর্য ধরে কিছু সময় আমার কথা শোনো। প্রকৃতি কর্মীরা বইটা সামনে রেখে সৌম্যদার কথা শুনতে লাগল।
– আশা করি তোমরা বই পড়ার অভ্যাস করবে। গ্রন্থ অধ্যয়ন তোমাদের জ্ঞান ভান্ডার বিকশিত করে তুলবে। সব ধরনের বই পড়লে তোমাদের জ্ঞান বাড়বে কিন্তু বই নির্বাচন অতি গুরুত্বপূর্ণ কথা। আমাদের জীবনে বই পড়ার জন্য যতখানি সময় পাই তার হিসেবে আমাদের পড়ার বইয়ের সংখ্যা অত্যন্ত বেশি। আচ্ছা তোমাদের কাছ থেকে একটি কথা জানতে চাই, তোমাদের মধ্যে কতজনের পাখি সম্পর্কে জানার আগ্রহ আছে, তারা হাত তোল।
সৌম্যদা দেখতে পেল প্রায় প্রত্যেকেই হাত তুলেছে।
– ঠিক আছে হাত নামাও। এখন তোমাদের মধ্যে কতজনের প্রজাপতি বিষয়ে জানতে ইচ্ছা আছে, তারা হাত তুলো।
সৌম্যদা দেখতে পেল প্রায় কুড়িজন প্রকৃত কর্মী হাত তুলেছে।
– সাপের বিষয়ে কতজন জানতে চাও?
সৌম্যদা হিসেব করে দেখল, এবার বারো জন প্রকৃতি কর্মী হাত তুলেছে।
– ঠিক আছে। আমরা প্রথমে পাখি কীভাবে দেখতে হয় সেই উদ্দেশ্য সামনে রেখে পাখির নিরীক্ষণ শিবির একটা খুব শীঘ্রই আয়োজন করব। তারপরে পর্যায়ক্রমে প্রজাপতি এবং সাপের বিষয়ে দুটি শিবিরের আয়োজন করা হবে। তোমরা তাতে অংশগ্রহণ করবে। উদয়শঙ্কর– উদয় শঙ্করের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে সৌম্যদা বলল– তোমাদের 'গাইড' করবে। তার সঙ্গে তোমরা দু-একটা ছোটোখাটো শিবিরের আয়োজন করতে পারবে। ছোটো ছোটো শিবির মানে ১০-১৫ জন প্রকৃতি কর্মী একত্রিত হতে হবে। পাখি দেখবে, মাছ দেখবে, প্রজাপতি দেখবে, স্থানীয় গাছপালা দেখবে। এই সবই প্রকৃতির অংশ। ঠিক আছে। তোমাদের সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আজ এখানেই শেষ করলাম।
যাবার সময় প্রতিটি প্রকৃতি কর্মী সৌম্যদাকে বলে গেল। দুজন তার অটোগ্রাফ নিল। বৌমা অনামিকা বিদায় নেবার সময় বলল–'সৌম্যদা, আমাদের বাড়ি আসবেন কিন্তু। ভুলে যাবেন না।
তখন বিকেল চারটা বাজে। শীতের দিনের শিশিরসিক্ত অন্ধকারের রেশ ধরণীকে জড়িয়ে ধরার জন্য এগিয়ে আসছে।
সৌম্যদা শিবির সমাপ্ত করা হল বলে ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষক সাংবাদিক প্রদীপ কলিতা এবং দুজন সংবাদ কর্মী এগিয়ে এল। খবরের সন্ধানে তাঁরা সৌম্যদাকে বিভিন্ন কথা জিজ্ঞেস করল, প্রশ্ন করল। সৌম্যদা অতি সংক্ষেপে তাদের উত্তর সমূহ দিয়ে তাদের বিদায় জানাল। সারাটা দিন শিবিরের সঙ্গে ব্যস্ত হয়ে থাকা পুরোহিত শর্মা এবং তার সঙ্গে থাকা বাপুটিও সৌম্যদার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা হল। বয়োবৃদ্ধ লোকেরা দুপুর বেলার আহার বিরতির পরে শিবির ছেড়ে চলে গেছে।
শিবিরের সমাপ্তির পরে সৌম্যদা, উদয়শঙ্কর, সুনন্দ,নব,কীচক এবং জ্যোতিপ্রসাদরা পুনরায় মিলিত হয়ে অনুষ্ঠিত হওয়া শিবিরটার ভুলভ্রান্তিগুলি আলোচনা করে পরবর্তী শিবিরে সেই সব দূর করার প্রয়োজনীয়তার কথা জানাল। দিনটা দ্রুত গতিতে পার হয়ে গেল। কীভাবে রাত সাতটা বেজে গেল তারা বুঝতেই পারল না।
কাকাবাবু এবং পরিবারটিকে বিমুখ না করার জন্য উদয়শঙ্কর এবং সৌম্যদা কাকাবাবুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন