স্মৃতিকথা- ২৫
এই আমি চরিত্র
নীলাঞ্জন কুমার
( গত মাসের পর)
তখন আমার সবচেয়ে প্রিয় কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়। লাইব্রেরি থেকে তাঁর প্রায় তৎকালীন সময়ের সব কবিতা পড়ে ফেললাম । একদিন একটি কবিতাতে লিখলাম ' আমার চোখের পাতা সেঁটে আছে শক্তি চাটুজ্যের কবিতায় / আর একটু থাক , আর একটু নিজেকে ভেবে নিই । ' তখন বিভিন্ন লেখার ভেতর শক্তি চাটুজ্যে কথাটি উঠে আসতো । এই আধ পাগলা যেখানে সেখানে খোলা গলায় গান গাইতে বসে যাওয়া, পেন খাতা নিয়ে একটি সবুজ ঝোলা কাঁধে নিয়ে পাঁই পাঁই করে সাইকেলে করে মেদিনীপুর শহরে ঘুরে বেড়ানোর চরিত্রটিকে বাস্তববাদী, চতুর, পেছনে লাগা লোকতো শিকার করবেই জানা কথা । অবশেষে তাই হল, বেশ কয়েকজন আমায় টার্গেট বানিয়ে ফেললো ।
এই চতুরবর্গ আমায় দেখলে হাসাহাসি করত বিশেষ করে তাদের সঙ্গে সঙ্গিনী থাকলে । আমি মেয়েদের ব্যাপারে উৎসাহিত ছিলাম না । আমি মেয়েদের কাছে হাস্যকর হওয়ার জন্য কোন প্রতিক্রিয়া আসতো না । সব সময় কবিতা কবিতা আর কবিতা । কবিতাপ্রাণ হওয়া বোধহয় এই রকম । আমি তাদের পাত্তা দিতাম না। ভেবে নিতাম আর কিছু না পারি এদের এভাবে তো
আনন্দ দিচ্ছি !
আমার একটা বিশেষ দিক ছিল কেউ গান গাইতে বললে বসে যেতাম গান করতে । আমার চোখের আড়ালে অনেকে মুখ টিপে হাসত বুঝতে পারতাম । কিন্তু ওই যে গান গাওয়ার আনন্দ, তাতে মশগুল হয়ে থাকতাম । আসলে সে সময় আমার ভুল ধরার কিংবা আমাকে প্রকৃত ভাবে গঠন করার মতো মানুষ পাইনি ।হয় কেউ তাচ্ছিল্য নয়তো হিংসে করত । ফাস্ট ইয়ার থেকে মেদিনীপুর কলেজেএকটি বিষয় জোরদার দিক দেখতে পেয়েছি তা হল রাজনীতি । প্রথমের দিকে এই রাজনীতির বিষয়ে কোন পা বাড়াতাম না। আমার মনে হত রাজনীতি আমার কবিতা গান নষ্ট করবে । তার থেকে এই ভালো। কিন্তু ধীরে ধীরে দেখলাম এ কলেজে রাজনীতি ছাড়া এক পা এগোনো সম্ভব নয়। কলেজ ছাত্র সংসদ তখন কংগ্রেসের দখলে । বামপন্থী নেই বললেই চলে। ফলে আমার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ( কলেজ কেন্দ্রিক) র ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বাধা শুরু হয় । তখন ছাত্র সংসদের সঙ্গে কিছু মেলামেশা শুরু করতে হল । ফাস্ট ইয়ারের ছেলে পাগলা পাগলা, কবিতা নিয়ে থাকে । যেখানেই বসে সেখানে গান গায় , এরকম ছেলেকে কৃপা করা যায় ছাত্র সংসদের নেতৃবৃন্দ আমায় নিয়ে এরকম ভাবতে শুরু করলো । কর্ণেলগোলায় কিছু বন্ধু যেমন জুটল কিন্তু শত্রুও জুটে গেল । আমার বিরুদ্ধে যে শত্রুতা ছিল তা মারপিট কেন্দ্রিক নয়, ছিল ব্যাজস্তুতি কেন্দ্রিক । অথচ আমি কারো সঙ্গে কোন খারাপ ব্যবহার করতাম না । নিজের মতো থাকতাম । কেন যে এক শ্রেণীর মানুষ এমন ব্যবহার করতো তার সমাধান আজও করতে পারিনি । এর থেকে বোঝা যায় মানুষের মন কি বিস্ময় !
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন