শিক্ষক
নীলিম কুমার
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস
সব শিক্ষকই মন্দিরে বাস করে
সব শিক্ষকই ছাত্রকে আঙ্গুলে ধরে পার
করায় রাস্তা,
আর প্রাতঃকালের ঘন্টা বাজায়
অ-আ শেখায়
ক-খ শেখায়
মুখস্থ করায় নামতা
শ্রুতলিপি দেয়, শুদ্ধ করায় বানান
যাতে আমরা ভুল না করি শুদ্ধ করে লিখতে নিজের নাম,
আর শুদ্ধ করে আমাদের সই করা
হাজিরা বই নতুবা চুক্তিপত্রে
তিনিই শেখান আমাদের
একের সঙ্গে এক যোগ দিলে দুই
দুই থেকে দুই বিয়োগ করলে শূন্য।
তিনিই শেখান আমাদের– শূন্যের কী অসীম মূল্য,
শূন্যের কী নিদারুণ হাহাকার।
তিনিই শেখান আমাদের
সারা জীবন যোগ- বিয়োগ করতে
শূন্যের হাত থেকে বাঁচতে!
সেই শিক্ষকই শেখান আমাদের
ভূগোলের ক্লাসে ম্যাপ আঁকতে,
আঁকাবাঁকা ম্যাপ থেকে দেশটাকে বাঁচাতে।
ইতিহাসের ক্লাসে তিনিই শেখান-
পুরোনোর সঙ্গে যোগ দিতে বর্তমান
বর্তমানের সঙ্গে যোগ দিতে ভবিষ্যৎ।
তিনিই রচনায় রচনা করতে শেখান - জীবনের লক্ষ্য,
পরীক্ষার খাতায় নম্বর পাওয়া নয়
স্থির করতে ভবিষ্যতের স্বপ্ন…
তাই শিক্ষক দেখলে সমস্ত ছাত্রই
সাইকেল থেকে নামে,
যেভাবে মন্দির দেখলে সমস্ত মানুষের
মাথা নত হয়ে আসে।
একদিন একজন শিক্ষক বলেছিলেন–
ওই পাহাড়টি দেখ, পাহাড় আমার সহকর্মী শিক্ষক।
একদিন সেই শিক্ষকটি বলেছিলেন-
ওই বৃষ্টির ঝাঁক দেখ, বৃষ্টি আমার সহকর্মী শিক্ষয়িত্রী।
একদিন সূর্যকে দেখিয়ে শিক্ষক বলেছিলেন–
সূর্য আমার সহকর্মী শিক্ষক,
চাঁদ আমার সহকর্মী শিক্ষয়িত্রী।
আর আকাশকে দেখিয়ে বলেছিলেন–
এই আকাশ তোমাদের ব্ল্যাকবোর্ড…
সেদিন বুঝেছিলাম
কোনো শিক্ষকই বাস করে না মন্দিরে,
সব শিক্ষকই মানুষ ।
কেবল তাঁর দৃষ্টি অনন্য,
যে দৃষ্টি মানুষকে আঙ্গুলে ধরে
পার হতে শেখায় জীবনের কন্টকাকীর্ণ পথ…
যে আমাদের শেখায় জীবনের এই ধরনের কঠিন মন্ত্র,
সেই শিক্ষকের কাছে আমি মাথা নত করছি
সেই শিক্ষকের কাছে আমি মাথা নত করছি!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন