কিছু বই কিছু কথা-২৯৮ । নীলাঞ্জন কুমার
জলের তরঙ্গ তরঙ্গের জল । গৌতম দাশগুপ্ত । দিল্লি হাটার্স । একশো টাকা ।
কবি গৌতম দাশগুপ্ত- র অতি সাম্প্রতিক ক্ষীণতনু কাব্যগ্রন্থটি পড়তে পড়তে বিশেষ করে একটি কথা মনে আসে, তিনি কত সহজে অতি সাধারণ কথাবার্তার মাধ্যমে গোটা কবিতার ভেতরে কি আশ্চর্যভাবে জুড়ে দেন সেই সব অমোঘ শব্দ সমষ্টি যা হৃদয় দুলিয়ে ছাড়ে । যেমন: ' শাখারভের হাইড্রোজেন বোমের/ স্বপ্ন দেখতে দেখতে/ কুচি ট্যানেলে/ ভিয়েতকং- এর স্বপ্ন দেখতে দেখতে/ একদিন ঘুমিয়ে পড়ল/ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ' ( ' একদিন ঘুমিয়ে পড়ল ') , ' ভোর হতে না হতেই/ পাঁক থেকে পাঁকাল মাছ/ লাফিয়ে পড়ল শ্রী রামকৃষ্ণ কথামৃতে ' ( ' জ্যান্ত দুর্গা ') , শুধু অযুত নিয়ে/ ফ্রিজে টাটকা সব্জির মতন/ আজও তার মাথা কাজ করে । ' ইত্যাদি ইত্যাদি ।
এ কবির নাতিদীর্ঘ কবিতাগুলোর ভেতর যে শব্দবন্ধগুলি তিনি ব্যবহার করেছেন তা বলা যেতে পারে দক্ষতার গুণে । ফলে আলাদা করে পংক্তি খুঁজে তার বিশ্লেষণ করার বিশেষ প্রয়োজন না থাকলেও আলোচনা স্বার্থে তা করতে হয় ।তাঁর কবিতার ভেতরে সামাজিক বিরূপতা, ক্রোধ, ক্ষোভ ইত্যাদি যেভাবে তিনি এনেছেন, তা বড় সহজ করে যেন হাসতে হাসতে তিনি বলছেন : ' আজ পেট্রল বলছেন/ কাল ডিজেল বলবেন/ জ্বালানি কিছু জ্বালানিই দেখবেন/ সব কিছু জ্বলে উঠলে/ আর কলম খুঁজবেন না । ' ( ' কলম খুঁজবেন না '), 'প্রগতির নগররক্ষকের/ চিদাকাশ জুড়ে আইটেম বালিকা/ এখন মরে হেজে ভূত হয়ে যাওয়া/ বরাক চতুর্দশীর কমলা । ' ( ' কমলা ')।
দীর্ঘদিনের দিল্লি প্রবাসী এই কবি বাংলা সংস্কৃতির বাইরে থেকে যেভাবে নিজেকে বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত রাখতে পেরেছেন তার জন্য তিনি ধন্যবাদার্হ ।কবিতা তাঁর আকর্ষণ করলেও কবিকৃত প্রচ্ছদটি দাগ কাটলো না ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন