কিছু বই কিছু কথা-২৯৭ । নীলাঞ্জন কুমার
নাভিকুন্ডের স্বরলিপি । বিমল রায় । কবিতা সীমান্ত । আশি টাকা ।
জরা বিসর্জনের লগ্ন । বিমল রায় । একুশ শতক । দেড়শ টাকা ।
কবি বিমল রায়ের কবিতার দুটি সাম্প্রতিক কাব্যগ্রন্থ
' নাভিকুন্ডের স্বরলিপি ' ( জানুয়ারি, ২০২০) ' জরা বিসর্জনের লগ্ন ' ( ' ফেব্রুয়ারি, ২০২২) আদ্যোপান্ত পড়ে এক কথায় বলা যেতে পারে প্রথম কাব্যগ্রন্থ থেকে কিভাবে তিনি দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থে নিজেকে উত্তরিত করেছেন তা দেখে ভালো লাগে । সত্যি বলতে কি তাঁর
' নাভিকুন্ডের স্বরলিপি ' সেই লক্ষ্যে পোঁছোতে পারেনি যা নিয়ে কোন সুন্দর বিশেষণে বইটি ভূষিত করা যায় ।
প্রায় প্রতিটি কবিতার ভেতরে পাঠককে ধরে রাখার মুন্সিয়ানা অনুপস্থিত । অতি আবেগীয় শব্দচয়ন, বিবৃতিমূলক কবিতার ধরণ আজকের পাঠকের বিরক্তির কারণ হতেই পারে । তবু খুঁজে পেতে কয়েকটি পংক্তি নাড়া দেয় । যেমন: ' মাঝরাতে কোন কোন শুকনো বেসিনে/ কান্নারা বাষ্প হয় । মৃত মাছেদের পোড়া গন্ধে/ শ্মশানের সুবাসে উড়ে যায় প্রেম ও নিয়তি ।' ( ' শিরোনাম ছেঁড়া সুতোয় লটকে আছে ') , ' আপনি মুখোশের ইতিহাস বলেছিলেন/ আমি মুখোশ ছেঁড়ার ইতিবৃত্ত খুঁজছি । ' ( ' ইতিহাসের ইতিহাস ')।
পাশাপাশি তাঁর পরবর্তী কাব্যগ্রন্থ ' জরা বিসর্জনের লগ্ন ' র বেশির ভাগ কবিতা পাঠককুলকে ধরে রাখতে পারবে বলে বিশ্বাস । প্রথম কাব্যগ্রন্থের পানসে ও বৈচিত্র্য বর্জিত কবিতাগুলোর পর এই কাব্যগ্রন্থের কিছু কবিতায় চমক লাগে । যেমন: ' সারাক্ষণ শিস দিয়ে বকুলের ডালে/ কথকতা বুনে দেব পাখিদের ঠোঁটে/ ভাষারা থাকবে ছুঁয়ে প্রেমের অধরে '
( ইশ...) , ' দেখে মনখারাপের বোতলে ঢুকঢুক পান করি/ আদেখলাপনা আর লালমিরচির ঝাল ঝোল '
( ' আলোকুচি ') যা পড়ে কবির অনুভবী দিক প্রত্যক্ষ করে আনন্দ পাই ।
আবার দুঃখ পাই যখন দেখি কবিতাটি শেষ হয়ে যাবার পরও তিনি কবিতাটি ব্যাখ্যা করতে শুরু করেন । যেমন 'শ্লোক ' কবিতায় ' মাটি ধুয়ে ধুয়ে ওড়না ওড়াবে আকাশে/ আর আমরা মুখোশ পরে ফিরে যাব যে যার ঋতু ' র পরের লাইনে অহেতুক 'সন্তর্পণে বলবো ভালো থেকো ' কি পাঠককে বোকা ভাবা নয়? যখন এর আগেই সব বলে দেওয়া হচ্ছে । পাশাপাশি কবিতা ঝাড়াই বাছাই এর ক্ষেত্রে কিছুটা কঠোর হলে কাব্যগ্রন্থটি আরো গতিশীল হত। দুটি কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদের মধ্যে ' জরা বিসর্জনের লগ্ন ' ( মনীষ দে কৃত) র প্রচ্ছদ মুগ্ধতা আনে ।
অসাধারণ আলোকপাত।
উত্তরমুছুন