বুধবার, ৬ এপ্রিল, ২০২২

স্মৃতি কথা - ১৭ ।। এই আমি চরিত্র ।। নীলাঞ্জন কুমার , Nilanjan Kumar ( গত সংখ্যার পর)

 স্মৃতি কথা  - ১৭                



                       এই আমি চরিত্র  

                       নীলাঞ্জন কুমার

                    ( গত সংখ্যার পর)




   রাধানগর নামের   গন্ঞ্জের মতো শহরটি গড়বেতার আমলাগোড়া অন্ঞ্চলে পড়ে । অজিত গনের  ( শুনেছি তিনি প্রয়াত হয়েছেন)  বাড়িটি ছিল রাধানগর হাটের এলাকার লাগোয়া । সম্ভবত শুক্রবার হাট বসতো । এছাড়া আর কোন নিয়মিত বাজার ছিল না। । ফলে এক সপ্তাহের সবজি মাছ আমাদের ওই দিন তুলে নিতেহত। ওই বাড়িতে বেশ কয়েকজন সহ ভাড়াটে ছিল। তারা মানুষ হিসেবে মন্দ ছিল না । বেশ মিলমিশ হয়ে গিয়েছিল। আমাদের ভাড়া নেবার দিকটিতে ছিল দুটি বড় বড় ঘর,  একটি ছোট ঘর যেটি আমার জন্য ধার্য করা হয়েছিল । বাবা অফিসার পর্যায়ের লোক বলে অজিত গন কোনদিনও ভাড়া চাইতে আসেননি । বাবা তার দুই ছেলেকে  ( যাদের নামেই বাড়িটি ছিল)  ২৫ টাকা করে ৫০ টাকা  জোর করে পকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে আসতো ।
            রাধানগরের বাড়ির পেছনে ছিল বিশাল মাঠ ।সেখানে বাচ্চা ও তরুণরা গরমকালে ফুটবল,  শীতে ক্রিকেট ও ভলিবল খেলতো । আমিও খেলতাম বাচ্চাদের সঙ্গে । ক্রিকেটে বাঁ হাতে বল করতাম । কিছুটা জোরেই করতাম । ব্যাটে ছিলাম একেবারেই গবেট । যা হোক প্রথমের দিকে স্কুলে যাবার ক্ষেত্রে বেশ কষ্ট হতো । বাবা আমাকে রডে বসিয়ে সাইকেল চালিয়ে নিয়ে যেত । যখন স্কুলে  নামতাম তখন পা দুটো ঝিনঝিনেতে অবশ । প্রথমের দিকে একটি মাত্র বাস চলতো গড়বেতা থেকে রাধানগর পর্যন্ত । মাঝে মধ্যে স্কুল থেকে ফেরার সময় সেই বাস পেতাম  নাহলে হেঁটে যেতাম মাইল তিনেক রাস্তা । হাঁটতে লাগতো প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট । রাধানগরের গড়বেতা হাইস্কুলের কয়েকজন মাস্টারমশাই থাকতেন যেমন বন্দিরাম সরকার,  অমিতমাধব সেন । এঁরা আমাকে খুব ভালোবাসতেন । অমিত বাবু ভালো গান করতেন । আমি একবার ওঁর সঙ্গে স্কুলের বাৎসরিক ফাংসনে উদ্বোধনী সঙ্গীত গেয়েছিলাম রবীন্দ্র সংগীত ' সবারে করি আহ্বান ' । কিছু ছাত্র ও শিক্ষক বাহবা দিয়েছিল ।অমিত বাবু ও বন্দিরাম বাবু ছিলেন বাবার বন্ধু বিশেষ । রাধানগরে থাকাকালীন বন্দিরাম বাবু ও আরও কিছু মানুষ মিলে অভিনয়ের আয়োজন করতো ।হাটতলায় একটি মন্ঞ্চ ছিল  ( সেখানে দুর্গা পূজাও হতো ) সেখানে নাটক হতো । বাবার পরিচালনায় জোছন দস্তিদারের ' দুই মহল ' নাটকটি খুব নাম করেছিল । এছাড়া বাবার আয়োজনে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নবরন্ঞ্জন শাখা ' রাজা রামমোহন ' নাটক ওখানে আয়োজন করেছিল ।
           গড়বেতা স্কুলে রাধানগর থেকে আর একজন সহপাঠী যেত । তার ডাকনাম ছিল কাতু । আমি কাতু বলেই ডাকতাম । ওদের রাধানগরে বিরাট ওষুধের দোকান ছিল । আমরা বিকেলে খেলাধুলা করতাম । এসব নিয়ে রাধানগরে বেশ ছিলাম । আমাদের বাড়ির একটু দূরে' চন্ডিদাস চিত্র মন্দির ' নামে তাঁবুর সিনেমা ছিল । অস্থায়ী এই সিনেমা বর্ষাকালে বন্ধ থাকতো । প্রতিদিন ভালো ভালো গান বাজতো সিনেমা শুরুর আগে ।আমি আমার স্বভাবসুলভ দিক দিয়ে ওই সিনেমায় স্টিল ফটো দেখে আসতাম নতুন সিনেমা এলে । প্রায় দেড় বছর এই রাধানগরে থাকার সময় এক কলেজ পড়ুয়ার কাছে টিউশন পড়তে পড়তে যেতাম । তার বাড়ি আমার বাড়ির   পাশেই ছিল ।
               রাধানগরে দেখেছি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রেষারেষি । সে সময় গরীব মানুষদের  মাইলো নামে এক ধরনের আমেরিকান শস্য রেশনে দেওয়া হতো ।সে নিয়ে রাজনৈতিক জটিলতা প্রত্যক্ষ করেছি । মাইলো নিয়ে হাজারো অভিযোগ করতো বিরোধীরা। অথচ এখন দেখি মাইলো হেল্থ ড্রিঙ্ক হিসেবে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ।বোঝা যায় দিন কিভাবে বদলে যাচ্ছে ।
       
                                              ( আগামী সংখ্যায়)




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...