কিছু বই কিছু কথা -২৯৩ । নীলাঞ্জন কুমার
শারজাতে লেখা কবিতা ও গান । কমল তরফদার । সন্নিধি প্রকাশনী , কলকাতা- ৮৪। একশো দশ টাকা ।
কবি কমল তরফদার সেই ধরনের কবিতা লেখক যিনি ভুলেও কবিতায় অহেতুক শৈল্পিক করার চেষ্টায় কোন পাণ্ডিত্য প্রকাশ করার চেষ্টা করেন না ।সম্প্রতি তাঁর প্রকাশিত বই ' শারজাতে লেখা কবিতা ও গান ' তে বিশেষত ৫২ টি কবিতার ক্ষেত্রে এ কথা নির্দ্বিধায় বলতেই হয় । কবি আরবের শারজাতে যান বারবার আর ফিরে এসে আমাদের দেন তাজা ফসল যেমন পেয়েছি আগের কাব্যগ্রন্থ ' জাগর মরুভূমি ' তে । কবি এই বইটিতে কবিতা গান ছাড়াও কিছু ছড়া প্রকাশ করেছেন যা তিনি লিখেছেন শারজায় । তা অনেকটা শিশু উপযোগী বলে বোধ হয়েছে । সে কারণে বইটির শিরোনাম আমার মতে হওয়া উচিত ছিল ' শারজাতে লেখা কবিতা, গান ও ছড়া ' । যা হোক এখানে গান ও ছড়ার থেকে অনেক বেশি উৎকর্ষ বহন করে তাঁর কবিতা গুলি । বারবার পড়তে পড়তে এসব পংক্তি মনে ধরে যায় : ' এমন সুন্দর মুখ- কোন্ দেশ তোমার? / প্রশ্ন করি মনে মনে । চোখ টানা , নাক চোখা, / ছোট হাঁ- মুখ , ঠোঁটের সূক্ষ্ম হাসি- এ মেয়ে তো/মোনালিসার বোন । আমার বয়েস আরও কম হলে পাগল হতাম ।' ( 'বিদায় ') , ' কে আছ? আমায় একটা তলোয়ার দাও । সহিস ঘোড়া সাজিয়ে আনো।/ ক্লিওপেট্রার রক্ত আমার শরীরে / যাই একবার নীল নদের পাড়ে । দেখব কাকে বলে ডেমোক্রেসি! ' ( ' মিশরের রাজকন্যা ') , ' জমানা বদলে গেছে ভাই । পোশাক বদলে গেছে । আঁচল কোথায়? ' ( ' জমানা বদলে গেছে ')।
কবির প্রায় সব কবিতায় পাই মজার ছলে কিছু ব্যঙ্গ, আন্তরিক উচ্চারণে কবজির মোচড়ে তিনি যে স্বাদ দেন তা তাকে কবিদের ভেতর আলাদা করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি কোন নারীর দুঃখে চোখে জল আসে তাঁর উচ্চারণে: ' মেয়ে প্রতিদিন চোখের জল ফেলে । / ভারতে ফিরতে পারে না, পাসপোর্ট নেই ।/ আধুনিক দাস ব্যবসায়ী/ অন্যায়েরপয়সা জমায় ।' ( দাস ব্যবসায়ীর বেড়াজালে ')।
৯৬ পৃষ্ঠার এই বইটির আদ্যোপান্তে কমল তরফদারকেই খুঁজে পাওয়া যায় বলে তাঁকে ধন্যবাদ । সত্য কত সহজ করে বলতে পারা যায় তা এই গ্রন্থটি শিক্ষা দিয়ে যায় । অর্জুন বসু রায়ের প্রচ্ছদ বেশ আলাদা ।যা চোখ ও মনকে তৃপ্তি দেয় ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন