স্মৃতিকথা - ১৬
এই আমি চরিত্র
নীলাঞ্জন কুমার
।। ১৬।।
( গত সংখ্যার পর)
স্মৃতিকথা এমনই একটি বিষয় যার ভেতর থেকে নিজেকে আবার নতুন করে আবিষ্কার করা যায় । মনে রাখতে হবে সবার স্মৃতিকথা সমান হয় না ।সবার সমস্যা, সমাধান, হতাশা, আনন্দ এক নয় । ঈশ্বরের এই অনবদ্য উপহার আমাদের ভাবায় শেখায় আর পরিশিলিত করে । গড়বেতার স্মৃতিকথা একটু বেশি করে মনে আছে কারণ এখানে আনন্দের থেকে দুঃখের ঘটনার সংখ্যা বেশি । যে ছ বছর আমি ওখানে ছিলাম তা কোনদিনও দুঃখহীন ছিল না । আর তা সহপাঠীদের কারণে । আমি যত তাদের জড়িয়ে ধরবার চেষ্টা করতাম তারা আমাকে বিচ্ছিন্ন করে চলে যেত । তারা আমার নানারকম ব্যঙ্গাত্মক নামকরণ করেছিল । মাঝেমধ্যে মনে হত আমাকে কি তারা ক্লাউন ভাবতো ? অথবা মানসিকতার দিক দিয়ে একদম তাদের আলাদা চরিত্র হওয়ার কারণেই কি ? আমাদের পরিবারটিকে এলাকার মানুষজন নানারকম সঙ্কটে ভোগানোর চেষ্টা করতো। এই পরিবারটি আলাদা রকমের ছিল বলে এক অদ্ভুত ঈর্ষা অনেকের চোখে মুখে দেখেছি । এর ফলশ্রুতি কোন পর্যায়ে যেতে পারে তা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি ।
একথা সত্যি যে, পন্ঞ্চুবাবুর বাড়িতে এসে কিছুটা আরামেই ছিলাম । যদিও আমাদের পাশের সহ ভাড়াটেদের সঙ্গে মনোমালিন্য শুরু হয়েছিল ।পরে মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয় । বাড়িওয়ালার সঙ্গে বেশ মিলমিশ হয়েছিল । বাড়িওয়ালার মনি নামে এক বাচ্চা মেয়ে আমাদের ঘরে আসতো । আমরা তাকে বেশ ভালোবাসতাম। এই বাড়িতেই আস্তে আস্তে বুঝে উঠতে শুরু করি মানুষ কতটা নির্মম ও নিষ্ঠুর হতে পারে ।গড়বেতা শহর বড় বেশি বাস্তব চিনিয়েছে আমাকে । এতে ভবিষ্যতে আমার কিছু লাভ হলেও আমার তৎকালীন মন মানতে চাইতো না । প্রতিবেশীদের ভেতর রেষারেষির জীবন আমায় হতাশ করতো । তখন আমায় আনন্দ দিতো পোষা পাখিটি । বুঝতে পারতাম সে আমাকে ভীষণ ভালোবাসতো । কিন্তু দুর্ভাগ্য তাকে বেশিদিন বাঁচানো গেল না । পাশাপাশি সহপাঠীদের আমার ওপর বিদ্বেষ কমলো না । কোন একটা বাহানা বানিয়ে তারা আমায় নাস্তানাবুদ করে আনন্দ পেতো । আমি পারতপক্ষে তাদের এড়িয়ে চলতাম । আশ্চর্যের কথা এক কাল্পনিক মেয়েকে নিয়ে তারা আমার সঙ্গে জড়িয়ে রসালো গল্প ফেঁদেছিল ও প্রচার শুরু করেছিল । তখন আমার নারী পুরুষের শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে কোন জ্ঞান ছিল না । সহপাঠীরা এই গল্প সত্যি ভেবে নিয়ে এক আদিম আনন্দের চোখে আমার দিকে চেয়ে থাকতো । মুখে থাকতো ব্যঙ্গের হাসি । এর কারণ আমার এ নিয়ে কোন চিন্তাভাবনা না করা । যা ওদের হিংসে আরো বাড়িয়ে দিতো ।
আসলে ওদের কাছে এটা প্রধান ছিল আমি গড়বেতার ভূমিপুত্র নই । তাই মানসিক নির্যাতন করে আশ মেটানো তাদের কাছে খুব সহজ ব্যাপার ছিল । জীবনের ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করতে করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়া এই আমি দেখলাম বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা। এই ভয়াবহ রাত কোনদিনও ভুলতে পারবো না । বাবা মা যে ঘরে থাকতো সে ঘরে চড়াও হল কিছু ডাকাত । তারা শাবল দিয়ে দরজা ভাঙতে শুরু করলো । বাবা মা কোনক্রমেভেতরের দালানে এসে চিৎকার শুরু করলো । চিৎকারে কিছু লোক জড়ো হয়ে তারা হৈ হুল্লোড় শুরু করলে ডাকাত দল ভয় পেয়ে মায়ের কয়েকটি সোনার বালা হাতিয়ে পাশের ফাঁকা মাঠ দিয়ে বেরিয়ে গেল । পরের দিন পুলিশ এলো । কেউ ধরা পড়লো না । আমাদের ট্রমা হয়ে গেল । শেষে বাবা মা স্থির করলো এ বাডিতে থাকা অসম্ভব । বাবা আবার বাড়ির খোঁজ করতে লাগলো । গড়বেতা থেকে মাইল তিনেক দূরে রাধানগরে ( যেখানে গড়বেতা স্টেশনটি আছে) সেখানে অজিত গনের বাড়িতে চলে যাওয়া স্থির হল ।
আমার স্যামসাং গ্যালাক্সি স্মার্টফোন থেকে পাঠানো হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন