কবি অজিত গগৈ ।। অনুবাদ কবিতাগুচ্ছ ।। অনুবাদ করেছেন বাসুদেব দাস
কবি পরিচিতি–১৯৬৮ সনে কবি অজিত গগৈ জন্মগ্রহণ করেন।'অরণ্যর শোভাযাত্রা' কবির প্রথম কাব্য সংকলন।২০০৬ সনে মুনীন বরকটকী পুরস্কার লাভ করেন। কবির একাধিক কাব্য সংকলন প্রকাশিত হয়েছে।'জীবনর সুরীয়া বাঁহী' কবির একমাত্র গল্প সংকলন।
ঘুম
অজিত গগৈ
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ- বাসুদেব দাস
উঠ ঘুম
কত পড়ে থাক বিছানায়
রাত দুপুর হল
মিনতি করছি– উঠ,
তুমি উঠলেই অর্থময় হবে অন্ধকার।
এই অন্ধকারে বাস্তবের স্বপ্নে মত্ত একদল মানুষ
রক্তিম চোখ ,শ্বাপদের মতো আচরণ
নিজের ছাল ছাড়ানোর জন্য প্রায় প্রস্তুত!
ঘুম... তোমার মধ্য দিয়ে দেখা স্বপ্ন সুন্দর
বাস্তবে দেখা স্বপ্ন ভয়ঙ্কর।
ভয়ংকর স্বপ্ন দহন করছে সময়
হে ঘুম, তুমি উঠ; উঠ…
উজাগরি মানুষের চোখে চোখে গড়িয়ে যাও
সপ্তসুর হয়ে বেজে উঠ বুকে
স্বপ্ন হয়ে নেচে উঠ আত্মায়।
মানুষগুলি ঘুমিয়ে পড়ুক
নতুন করে জেগে উঠার জন্য।
কবিতার শব ব্যবচ্ছেদ
অজিত গগৈ
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস
মর্গ থেকে তুলে এনে
সুতীক্ষ্ণ ছুরিতে ব্যবচ্ছেদ করছি এই কবিতার শব।
জাঁকজমক পোশাক পরিয়ে উলঙ্গ করেছি কবিতাকে,
শব্দালঙ্কার, অর্থালঙ্কারকে;
' কবিতা' শব্দকে মুক্তি দিয়েছি আভিধানিক অর্থ থেকে।
কবিরা বারবার চুম্বন করায় অঙ্গারের মতো কালো হয়ে পড়েছিল
কবিতার দুটি ঠোঁট,
জান্তব আচরণে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল শরীর...।
( কবিদের অনেকেই ইতিমধ্যে কবিতা কে ধর্ষণ করে পালিয়ে গেছে
খ্যাতির শীর্ষবিন্দুতে,
অনেককে আটক করা হয়েছে পুরস্কারের বন্দিশালায়!)
ঘৃণ্য হয়ে কবিতা গন্ধ ছড়াচ্ছে,
আমি বিদীর্ণ করেছি কবিতার বক্ষস্থল;
ছিন্নভিন্ন করেছি জরায়ু, হাতুড়ি মেরে ভেদ করেছি
মগজ।
অক্ষরে
অজিত গগৈ
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস
স্বপ্নের চারা- অঙ্কুর খুঁজে বেড়াচ্ছি অক্ষরে
অক্ষরের চিপরাং নিয়ে খুঁড়ছি পাথর
অক্ষরের মৈ বানিয়েছি আকাশের চাঁদ- সূর্যের জন্য
তোমার-আমার দুই গ্রামের মধ্যে সেতু বেঁধেছি
অন্ধকারকে অন্ধকার বলে দেখাতে চাইছি,
আলোর সবাক ছবি আঁকতে চাইছি
অক্ষরে…
অক্ষরের শিকল দিয়ে বাঁধার কথা ভাবছি একে অপরকে
অক্ষরগুলি মাটিতে ছড়িয়ে দিয়েছি
গজিয়ে উঠুক…
বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিক
অক্ষরের দীর্ঘ হাতগুলি মানুষের হাত হোক,
অক্ষরের পা দিয়ে মানুষ লাফিয়ে পার হোক খারাপ সময়
সমূহ বই থেকে, কম্পিউটারের স্টোরেজ থেকে দলে দলে
বেরিয়ে আসা অক্ষর একদিন
আকাশ থেকে ছোঁ নেমে আসা তারার সঙ্গে অন্তরঙ্গ
আলাপ করবে…
চোখ দিয়ে আমি এরকম একটা স্বপ্ন দেখেছি।
------
টীকা -
চিপরাং–মাটি খনন করার এক ধরনের লোহার অস্ত্র।
পলু -জীবন
অজিত গগৈ
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস
আত্মগোপন?
না। নিজের পথ বন্ধ করে
তোমার জন্য একটা পথ কেটেছি?
তপস্যা?
হতে পারে। এই মহাশূন্যতায় নিজের মুখের আঁশে
নিজেকে বেঁধে ফেলেছি,
তোমাকে মুক্ত করার জন্য।
নিজেই নিজের পক্ষ আর বিপক্ষ হয়ে
এক ভয়ঙ্কর খেলা খেলছি ।
নিজেকে হারাচ্ছি
আবার জেতাচ্ছি…
দক্ষ খেলোয়াড় হয়েছি,
তোমার সঙ্গে না হারা- না জেতা খেলা একটা খেলার জন্য
আর বাতাসের বাগানে মরার জন্য!
-------
টীকা-
পলু-পাট,মুগা,এণ্ডি আদির পোকা।
শরীর
অজিত গগৈ
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস
শরীরের জন্যই ক্ষুধা আর বিদ্রোহ,
শরীরের জন্যই প্রার্থনা;
শরীরের জন্যই অমরত্ব আর নির্বাণ
'...মধ্যে ক্ষমা চকিত হরিণী প্রেক্ষণা নিম্ন নাভি…'
––--------আর ––-------
'বুক খাল , চোখ লাল…'
––------ তারপরে–---–-----
' অস্থির এই সংসার!'
ক্ষণভঙ্গুর বলে জানার পরেও
শরীর ডাকে শরীরকে,
শরীর খুঁড়ে শরীরকে;
শরীর মারে শরীরকে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন