মঙ্গলবার, ৯ নভেম্বর, ২০২১

অসমিয়া কবিতা ।। নীলিম কুমার- এর কবিতা ।। মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ--বাসুদেব দাস, Translated Poems,

নীলিম কুমার- এর কবিতা 

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ--বাসুদেব দাস




একটা কবিতা মরতে শুরু করেছে



একটা কবিতা মরতে শুরু করেছে

কীভাবে ছটফট করছে কবিতাটা!প্রথম দুই সারি এলিয়ে পড়েছে।

মাঝের স্তবকটা ব্যথায় বিকল| শরীর থেকে শব্দগুলির

রক্ত বের হচ্ছে।কিছু শব্দ বালির মতো শুকিয়ে গেছে,

কাগজপগুলি ভালোবাসায় টুকরো টুকরো হয়ে যাবে যেন!

ধোঁয়া বের হচ্ছে,আগুন লেগেছে ঐসব শব্দের শরীরে

আর কিছু শব্দ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন,যেন মরছে

ওরা কিছুই জানতে পারে নি। কিছু শব্দ

পালাতে চাইছে,কাগজটা পার হয়ে যেতে পারছে না।

কিছু নিজেই নিজের গায়ে ছুরি মেরে মুর্চ্ছা গেছে রক্তক্ষরণে।

কবিতার শেষের সারিটা ভিজেছে রক্তের বৃষ্টিতে


কে লিখেছে এই ভূতে পাওয়া কবিতা



মোম


জ্বলছিস তুই

আমার বুকের অন্ধকার পোড়ানোর জন্য


তোর অর্ধেক জীবন চলে গেল

বিন্দুমাত্র অন্ধকার দূর হল না

গলে গলে এখন দেখছি তুই-ই শেষ হবি


নিজে দেখছি ডুবে যাবি

অন্ধকারে


কেবল ঈশ্বরই তোর খোঁজে আসবে 

তিনিও তো খুঁজে পাবেন না

এত অন্ধকারে তোর আত্মা


তোকে খুঁজতে এসে আবার তোকেই জ্বালাব

ঈশ্বরও

হে অবোধ মোম

তোকে দেখে

অন্ধকারও বিগলিত


আমি এবং রাধা


এখানে আমরা শুয়ে আছি। আমি এবং রাধা

নদীর তীরে নয়। পাহাড়ের নিচে নয়

গাছের নিচে নয় সবুজ অরণ্যে নয় 

এখানে আমরা শুয়ে আছি,কংক্রীটের ঝুপড়িতে,

শীতের সাদা ঠাণ্ডা এক বিছানায়।

মাথার ওপর আকাশ নেই,ঈষৎ সাদা এক সিলিং

জ্যোৎস্না নেই,বিজলিবাতি,তারা নেই

দুই-একটা মাকড়সা।


এখানে আমার উন্মুক্ত বাহু পড়ে আছে তাঁর উন্মুক্ত পিঠে।


এখানে দুটো শ্বেতপন্ম ফুটে উঠেছে

তাঁর বুকের ক্ষীর সাগরে।

এখানে আমরা শুয়ে আছি আমি আর রাধা

আলো আর আঁধারে আঁকা জ্যামিতির শয্যায়।


জানি না এখানে আমরা শুয়ে আছি কিনা

আমি আর রাধা ।



ঘুম


রাস্তার মাঝখানে আমি গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে পড়লাম। আর দেখলাম যে

আমাকে ঘিরে মানুষগুলি জট পাকাচ্ছে রাস্তায়। ওদের চিৎকার টেচামিচি

আর ফিসফিসানিতে আমি আরও বেশি ঘুমিয়ে পড়লাম।

গমগম করে একটা ট্রাক এল হর্ণ বাজাল এবং

ভেঙ্গে গেল মানুষের ভিড়। পড়ে থাকলাম কেবল

ঘুমিয়ে পড়া আমি রাস্তার মধ্যে |

ট্রাকের পেছন পেছন বাসের সারি,তিনচাকার দুই চাকার সারিগুলি এল

আর যখন আমার ওপর দিয়ে পার হয়ে গেল সেগুলি

যখন আমি গুড়ো হয়ে গেলাম তখন আমি গভীর নিদ্রায়।

একটা কুকুর আমাকে টেনে নিয়ে যাবার সময়,তার দাঁত

আমার শরীরে বসানোর সময় আমি ভাবলাম কুকুরটাও

ঘুমিয়ে পড়বে এখন।


অজস্র সূর্যোদয় আর সূ্র্যাস্তের আস্তরণ পড়েছে আমার ঘুমে…

আমার এত ঘুম দেখে আমি ভাবলাম কিন্তু

আমি ভাবতে পারলাম না নিদ্রায়



হাঁটুর বিষয়ে একটি কবিতা


হাঁটু ভাঁজ করে না ঘুমোলে

কারও ভালো ঘুম হয় না।

ভালো স্বপ্নও দেখেনা কেউ

হাঁটু ভাঁজ করে না ঘুমোলে।

হাঁটু সোজা করে ঘুমোলে

যদি কেউ স্বপ্ন দেখে,তা দুঃস্বপ্ন


হাঁটু গাড়া মানে হার মানা।

আমাদের ব্যক্তিত্ব বলে যদি কিছু থাকে

তা হাঁটুর ওপরে ভর না দিলে হবে না।


কিন্তু আমরা এই হাঁটুকেই করি

বেশি অবহেলা।

আমরা যত্ন নিই চুলের,চোখের

নাক মুখের গলার হাতের আঙ্গুলের

এমনকি হাত পায়ের নখেরও যত্ব নিই আমরা

কিন্তু হাঁটু?

আমরা কি কখনও আমাদের হাঁটু দুটোর দিকে তাকাই?

মশা কামড়ালে চুলকানো ছাড়া

আমাদের হাঁটুর প্রতি ভ্রূক্ষেপ নেই


এই হাঁটুর ওপরে ভর দিয়ে

আমি কোথায় যে যাই নি

সমুদ্রের জলে নেমেছি

পাহাড়ের টিলায় উঠেছি 

দৌড়েছি,লাফিয়েছিল,চলন্ত রেলগাড়িতে উঠেছি 

হাঁটুতে হাঁটু তুলে বসে যোগ করেছি

মন্দিরে প্রার্থনায় বসেছি


সেই হাঁটু একদিন

বিদ্রোহ করে বসল

নিচে নামা সিড়ি দিয়ে নামব না বলে

প্রতিবাদ করে উঠল

হাঁটু ভাঁজ করিনা বলে ফুলে উঠল

আর বলল হাঁটুর নিজস্ব ভাষায় 

যে ভাষায় বললে আমরা বুঝি,সেই

যাতনার ভাষায় ঘোষণা করল 

“আমি একটু বিশ্রাম নেব,

আর বিছানায় সেই যে পড়ল পড়লই।


আমি এখন

সকাল-বিকেল সেই হাঁটু দুটোর দিকে তাকিয়ে থাকি 

এত ধীরে ধীরে পিষে পিষে

হাঁটু দুটোকে ভালোবাসি যেন

যেন একটা অনাথ শিশুকে

আমি ঘুম পাড়াতে চাইছি। আর

যেন খুঁজে বেড়াচ্ছি কেউ রচনা না করা

ঘুমপাড়ানো গান।

আমি ব্যথা কমানোর মলম মাখিয়ে দিয়েছি

হাঁটু দুটিতে,আর জিজ্ঞেস করছি 

ঠাণ্ডা খাবে না গরম?

আইস না হট ওয়াটার।

আমার ভেতরে থাকা সমস্ত ভালোবাসায় 

আমি হাঁটু দুটোকে চুমু খাই

আর ভূল স্বীকার করি

ওদের প্রতি করা অবজ্ঞার জন্য


ঝরাপাতাগুলির ওপর দিয়ে হাঁটতে

আমার হাঁটতে ভালো লাগে না

আমি হাঁটু দুটোকে অনুনয় করি

আমাকে বাতাসের মধ্য দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে যাবার জন্য

কোনো অপরিচিত অরণ্যে

যেখানে হারিয়ে ফেলি সবুজ গন্ধে

ঘরে ফেরার সমস্ত পথ ।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...