রাজীব কুমার ফুকন
অসমিয়া কবিতার অনুবাদ
অনুবাদ: বাসুদেব দাস
কবি পরিচিতি-১৯৬০ সনে কবি রাজীব কুমার ফুকনের জন্ম হয়।১৯৮৪ সনে প্রকাশিত হয় কবির কাব্যগ্রন্থ ‘বাজি আছে গরখীয়া বাঁহী’।কবির অন্য একটি সুপরিচিত কাব্যগ্রন্থ ‘গছবোর এতিয়া টোপনিত’২০১১ সনে প্রকাশিত হয়।আকাশবাণীতে কর্মরত শ্রী ফুকন একজন চিত্রনাট্য রচয়িতাও।
গাছগুলি এখন ঘুমে
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস
গাছগুলি এখন ঘুমিয়ে পড়েছে
গভীর রাতে ঝুঁকে পড়া পাতার নিচে
নিস্তব্ধ হয়ে রয়েছে নীড়ের পাখি।
ঘুমিয়ে পড়লেও গাছগুলি মোহনীয়
কেবল মানুষই জানে না
ঘুমিয়ে পড়ার পরে
কীভাবে ধরে রাখবে সৌন্দর্য
কিছুই না পরলেও গাছগুলি মসৃণ
সুন্দর
বস্র অলঙ্কারে ঢেকে রাখলেও
মানুষগুলি সব সময় উলঙ্গ
ছন্দবিহীন।
উলঙ্গতা ঢাকার জন্য মানুষগুলি কত কষ্টই যে না করে!
কত অভিনব পোশাকই যে না পরে।
অথচ আজ পর্যন্ত নিজেকে ঢাকতে পারেনি
বারবার উলঙ্গ হয় মানুষ
মিথ্যা যুক্তিতে ঢাকতে চায় লজ্জা, সভ্যতা।
কেবল জন্তুই
উলঙ্গ হয়েও সুন্দর
কেবল শিশুই উলঙ্গ হয়েও লজ্জা ঢাকতে পারে
রাতে অন্তত গাছগুলোকে ঘুমোতে দাও
দিনে মানুষের উলঙ্গতা দুর্বল করে
অরণ্যের সভ্যতা।
সাবান
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস
তোমার যে কোনো মূল্য আছে
ভাবি নি
ভাবি নি তুমি হতে পার সভ্যতার সঙ্গী
নিষ্ঠাবান সেনার মতো উৎসর্গ কর নিজের জীবন।
অত্যন্ত সুন্দর সোফা চিত্রশিল্পে সাজানো ড্রয়িং রুম
শোবার ঘরের পালঙে কারুকার্যের মোহনীয় শীতলতা
সেখানে তুমি বর্জনীয়
সুস্বাদু আহারের জন্য রান্নাঘরের কত দেখাশোনা।
সুন্দর করে সাজালাম ঘর
তোমার জায়গা হল না কোথাও।
তুমি কাক ভেজা হয়ে থাক
বাথরুমের এককোণে
তোমার কাছে আবর্জনা মাখা দেহগুলি আসে
তুমি ধুয়ে পরিষ্কার করে
একটা পরিস্কার কাপড় পরিয়ে পাঠাও
সকালের ফিকা চায়ের কাপ
রাতের অবসাদ ভাঙ্গে
সুগন্ধি চায়ের চুমুকে জটিলতার বিশৃঙ্খলা ভাঙ্গে
তখন মনে পড়ে কি
কোন হাত রোদ-বৃষ্টি অবহেলা করে
ছিঁড়ে যায় বাগানের পাতা
ভোরবেলা উঠে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কারখানায় কাজ করে
কোন ক্লান্ত শ্রমিক
রুটি রুটি বলি কাঁদতে থাকা ছোট মিনিকে জড়িয়ে ধরে?
একমুঠো শস্যের জন্য হাড়ভাঙ্গা কাজ করে
অপুষ্টিতে ভুগছে কত কৃষক
পুষ্টিকর খাদ্য পাওয়া সবাই রাখে কি খবর?
সাবান!
তোমার মতই কৃষক শ্রমিক
নীরবে কাজ করে করে
ক্ষয় করে নিজের জীবন
আকালে আমরা মনে করি।
জ্যোৎস্না বিষাদ পথ
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস
ঢল নেমেছে
জ্যোৎস্নার
ঢেকে দিয়েছে কুয়াশা
একটি চাদর।
বুক থেকেই জ্যোৎস্না
সীমান্তে
অনন্ত অন্ধকার
অস্পষ্টতায় অপেক্ষা করছে
নিস্তব্ধ মা
আত্মীয় স্বজন শূন্য
ঘর ছেড়ে খুঁজছে
ফিরে আসার পথ।
জ্যোৎস্না
আমার বিষাদের পথ।
শুভ্র ঐরাবতে উঠে
এই পথ দিয়েই চলে গেল
আমার মা আমার বাবা
অজানা নির্জনতায়।
ঘন্টা বাজানো ছেলেটি
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ- বাসুদেব দাস
ঘন্টা বাজিয়ে ছেলেটি চলে গেল
সঙ্গে নিয়ে গেল গ্রামটির কণ্ঠস্বর
আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে
আমাকেও নিয়ে গেল।
সোনালি আকাশ লতা
ঘিরে ধরেছে ঝুপড়ি শেওড়া গাছ।
চাল কুমড়ো রোদে জ্বলজ্বল করছে
মৃদু বাতাসের ঝির ঝিরে গুণগুণ অশ্বত্থের পাতায়।
কানের পাশ দিয়ে ফুরুৎ করে
একটা শালিক উড়ে গেল।
শূন্য পুষ্করিণী
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ- বাসুদেব দাস
নিজের অজান্তে
নদীটা শুকিয়েছে
বুকে বালুচর বেড়েই চলেছে।
তোমার পুষ্করিণীতেও জল নেই
ফিরে এলাম
আমি
আর
আমার শূন্য কলশ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন