বৈদ্য ব্রাইট বুঢ়াগোহাঁই
অনুবাদ কবিতা
অনুবাদ : বাসুদেব দাস
কবি পরিচিতি–১৯৯২ সনে কবি বৈদ্য ব্রাইট বুঢ়াগোহাঁইর জন্ম হয়। ডিব্রুগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অসমিয়া সাহিত্য এবং শিক্ষাতত্ত্বের স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। প্রকাশিত কাব্য সংকলন ‘নিজানত নিজকে’ (২০১৪)। ডিব্রুগড়ের পারিজাত একাডেমী শিক্ষক শিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ে প্রবক্তা হিসেবে কর্মরত। সাতসরী,গরীয়সী, প্রান্তিক, প্রকাশ ইত্যাদি সাহিত্য পত্রিকায় নিয়মিতভাবে কবিতা লিখে থাকেন।
অতীত বিষয়ক
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ–বাসুদেব দাস
অতীত বলে বললেই দৌড়ে যাওয়াটা আমাদের স্বভাব
অতীত বলে বললেই হেসে কেঁদে উঠে বসে পড়াটা আমাদের চরিত্র
অতীত মানে বাতাবী লেবু অথবা ফুল প্রজাপতি
অতীত মানে হাফ প্যাডেল অথবা নৃত্যরত পুতুল
আমাদের অতীতের নাম মার্বেল অথবা চোর পুলিশ
আমাদের অতীতের নাম বর-কনে অথবা বালি ঘর
অতীত আমাদের উত্তেজনা হোক বুদ্ধি উদয়ের পথ
অতীত আমাদের উন্মাদনা হোক এবং চিন্তা–
চেতনার দুয়ার
অতীত মানে না হোক কেবল মিষ্টি স্মৃতি
অতীত মানে না হোক কেবল মাত্র স্মৃতি নামের একটা নাম
অতীত মানে না হোক প্রিয় মুখের ছায়াছবি
অতিশয় অতীত প্রীতি আমাদের ক্ষতি করেছে
পরিক্রমা
বৈদ্য ব্রাইট বুঢ়াগোহাঁই
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ–বাসুদেব দাস
গাছগুলি হেলে পড়েছে। হেলে পড়া গাছগুলি
ছুঁতে চাইছে মাটিকে। মাটি ছুঁতে চাইছে
গাছের শিকড়কে। শিকড়গুলি জলকে
জল আকাশকে।
আকাশে বৃষ্টি হয়ে অথবা রোদ
ছুঁয়ে থাকি গাছের ফল- ফুল-ডাল-পাতা-গাছ-গাছালি।
এভাবেই গাছগুলি হেলে থাকে
মানুষগুলি মরে থাকে।
প্রতিটি মানুষ শিমুল পলাশ
বৈদ্য ব্রাইট বুঢ়াগোহাঁই
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ–বাসুদেব দাস
ঝরা পাতা এবং ধুলো ফাগুনের উপহার
পাগলা হাওয়ায় বিশীর্ণ গাছ
যেভাবে বরষায় বৃষ্টি গ্রীষ্মে গরম
একই পৃথিবী তবু পৃথক
গাছকে জিজ্ঞেস কর না এখন সবুজের কথা
ফাগুনের বদনাম পুরোটা নেশা
কেবল চোখের জল মুছে ধুলো আর ধুলো
জানলে জীবন কেন প্রেম কাতর
যদিও ফুল ফুটে না সমস্ত ঋতুতে
ফুটলে ফুল না ফুটলে গাছ
প্রতিটি মানুষ শিমূল পলাশ
ফুলে উঠে হঠাৎ লাল করে আকাশ…
মাটি এবং পাথর বিষয়ক
বৈদ্য ব্রাইট বুঢ়াগোহাঁই
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ–বাসুদেব দাস
এক
জ্ঞান হওয়ার পর থেকে মাটিতে আসন পেতে বসি
মাটি আত্মা শরীর
মাঠ শস্য সোনালি স্বপ্ন
মাটিকে দাঁড় করিয়ে করলাম মূর্তি
লিপি লিপি ভিন্ন ভঙ্গিমায়
লোককথার দীর্ঘ গীতে
মাটি কুমোরের
তৈরি করে কলস
জল ভরবে
স্নান করবে
শেষ পর্যন্ত একই পুরাতন গান
মানুষ মাটির সন্তান…
দুই
পাথরকে হাতে তুলে নিয়ে করলাম শিল্প
সিঁদুর মাখিয়ে করলাম ভগবান
পাথর অন্ধকার
উপাসক আলোর
পাথরের জামা পরে খোদিত হল ইতিহাস
আমরা
বেচারারা বর্ণ খুঁজি পাথরে…
অরাজনৈতিক
বৈদ্য ব্রাইট বুঢ়াগোহাঁই
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ–বাসুদেব দাস
আর ফুল ফোঁটার জন্য যে আয়োজন ছিল।
যে জাগন জাগিয়ে দিয়েছিল তোমাকে আমাকে আমাদের।
অথচ এখন আর কেউ ফুলের সমাহিত সৌন্দর্যে ভুলে না। যে ভুলের জন্য
ফুটে উঠেছিল ফুল সেই ফুলে এখন
কেবল চোখের জল। আর ফুল ভালোবাসা
মানুষগুলি ধীরে ধীরে সোজা করছে নিজেদের
হাতগুলি। বুঝে উঠেছে না ফোঁটা ফুলগুলি
ছিড়ে ফেলতে হবে। হাত-ই এই কাজ
করতে পারে। আমাদের হাতেই আমাদের
ভবিষ্যৎ....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন