পাখিদের পাড়া পড়শী - ৩
পঙ্কজ গোবিন্দ মেধি
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ-বাসুদেব দাস
(তিন)
মায়ের মুখটার স্মৃতি আমাকে মাঝেমধ্যে আমাকে বিশেষ অসুবিধায় ফেলত। মায়ের মুখের ধূসর ছবিটা মায়ের প্রকৃত মুখটি আমার মনের মধ্যে অংকন করতে সুবিধা দেয় নি। ধূমায়িত একটি মুখকে আমি আমার মায়ের মুখ হিসেবে পরিচয় দিতে কুণ্ঠাবোধ করছিলাম। এবং অবশ্যই আমি মায়ের এরকম একটি মুখ আমার মনের মধ্যে দৃঢ়তার সঙ্গে অঙ্কন করে নিয়েছিলাম যে তরুণী মুখ ছিল লাবণ্য মাখা এবং ভালোবাসার । একটা অস্ফুট মুচকি হাসি এবং ডালিমের গুটির মতো দুপাটি দন্ত-সজ্জায় মা ছিল পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম সুন্দরী নারী। আমি অনবরত মায়ের আঁচল ধরেই থাকতে চেয়েছিলাম।চাদরের আড়ালে মা একগুচ্ছ চাবি এবং কয়েকটি টাকা বেঁধে রেখে ছিলেন। চাদরের সেই গিঁটটা আমার কাছে ছিল সারথি।মা সেভাবে কল্পনা করে যেতে যেতে একটা সময়ে আমি ভেঙ্গে পড়েছিলাম। দুচোখ দিয়ে নিঃসঙ্গতার অশ্রু নেমে এসেছিল। আমি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেছিলাম।
কিন্তু চাকরির ব্যস্ততার তাগিদে থেকে আমি যেন সেই মাকে ভুলে থাকতে শিখেছিলাম। মায়ের সঙ্গে সম্পর্কহীনতার মধ্য দিয়ে আমার জীবন যাপন অতিবাহিত হতে শুরু করেছিল। অপরিচিত অজানা যন্ত্রণা মাঝেমধ্যে আমাকে দহন করছিল। ছাত্র অবস্থার কথা আলাদা ছিল। দিনরাত বন্ধুদের সাহচর্যে আমি আমাকে ভুলে থাকতে পারছিলাম। কিন্তু ধীরে ধীরে আমার অনুভব হচ্ছিল কোথাও কারও অনুপস্থিতি । আমি সেই সম্পর্কহীনতার সূত্র উপলব্ধি করতে পারিনি।জানা ছিল না কী শূন্যতায় আমি হারিয়ে যাচ্ছিলাম।
আমি এ কথাও জানতাম না কার জন্য আমি চাকরি করছিলাম।
চাকরি জীবনের প্রতি বছর একবারের জন্য আমি আমার পড়া বিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। আমার উপার্জনের একটি অংশ আমি অনাথ এবং সাহচর্যহীন ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিচরণ করেছিলাম এবং তার জন্য আমি নিশ্চিত হয়ে পড়েছিলাম যে আমি এর জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ধন্যবাদের পাত্র। এই কথাগুলি জীবন অতিবাহিত করার জন্য আমার কাছে উৎসাহের কারণ হয়েছিল।
হঠাৎ একদিন সৌম্যদার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। খবরের কাগজের পৃষ্ঠা এবং টিভির পর্দায় মানুষটাকে আমি বিচ্ছিন্নভাবে দেখে থাকার জন্য মানুষটার মুখটা আমার কাছে কিছুটা পরিচিত ছিল। তিনি কী কারনে খবরের কাগজের পৃষ্ঠা এবং টিভির পর্দা দখল করেছিলেন আমার জানা ছিল না। আমার জানার কোনো প্রয়োজন হয়তো ছিল না।
সৌম্যদা, ষাঠের অনুর্দ্ধের সৌম্যদা। পোশাক-পরিচ্ছদে একজন সফল যুবক। নীল রঙের একটি জিনস প্যান্ট। সৈনিকদের মতো একটি শার্ট। বুকের উপরে দুটি পকেট। শার্ট সেলাইও সৈনিকদের জামার মতো। মাথায় একটি টুপি। দেখলে কোনো বিদ্রোহী সংগঠনের নেতার মতো মনে হয়। টুপিটা খুলে রাখলে ছোট করে কাটা সোনালি চুল গুলি মানুষটার দুধে আলতা মুখটিকে উজ্জ্বল করে তোলে। আমার বয়সের হিসেবে তার সঙ্গে বয়সের পার্থক্য প্রায় কুড়ি বছরের কাছাকাছি হবে। কিছুটা কম ও হতে পারে। তবু তার মুখটা আমার মুখের চেয়ে আনন্দমুখর বলে মনে হয়েছিল।
সৌম্যদা মানুষটি ধীর-স্থির। হিসেব করে কথা বলে। তার সঙ্গে দেখা হওয়াটা আমার কাছে ছিল কাকতালীয় সংযোগ। তিনসুকিয়া থেকে রাজধানী এক্সপ্রেস আসার সময় তিনি আমার এক রাতের সহচর হয়েছিলেন। কোথা থেকে কিভাবে আমরা কথাবার্তা শুরু করেছিলাম এখন আর আমার মনে নেই। কেবল মনে আছে তিনি বলেছিলেন তিনি সুন্দরবনে যাবেন।
আমি অবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম– সুন্দরবন? সেখানে মানুষ যায় নাকি?
আমার নির্বুদ্ধিতাকে সৌম্যদা তিরস্কার বা উপহাস করেননি। অত্যন্ত সাধারণ ভাবে তিনি বলেছিলেন– যায়। এইতো আমিই তো যাচ্ছি।
সৌম্যদা আমার সামনে সুন্দরবনের একটি সুন্দর প্রতিচ্ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন এবং সফল হয়েছিলেন।
কথা বলার সময় আমার মনে হচ্ছিল আমি জিম করবেটের সঙ্গে কথা বলছি।
অনুভব করেছিলাম স্টিম ইঞ্জিনের রেলে উঠে উগান্ডার গভীর অরণ্যে আমার সঙ্গে তিনি জন হান্টার। সিংহ শিকার করতে যাওয়ার সময় অরণ্যের সান্নিধ্য লাভ করা অভিজ্ঞতা মানুষটি আমার সামনে বর্ণনা করে চলেছেন ।
অরণ্য সম্পর্কে এতগুলি কথা জানার আছে বলে আমি কখনও ভাবি নি। পাখ-পাখালি, জীবজন্তু, গাছ-পালা, বন-লতা– এটা তো দেখছি একটি মনোরম পৃথিবী!সৌম্যদার ব্যক্তিত্ব আমাকে খুব আকর্ষণ করল। তার কথাবার্তা এবং ধ্যান ধারণায় আমি আকৃষ্ট হলাম। মানুষটা এত সরল ভাবে কথা বলে যেতে পারে। কথা বলার সময় তার মুখে সৃষ্টি হওয়া ভঙ্গিমা আমি বিচক্ষণতার সঙ্গে লক্ষ্য করতে লাগলাম। কথা বলার মধ্যে মধ্যে তিনি হাত এবং শরীরের বিভিন্ন ধরনের ভঙ্গিমা প্রদর্শন করেন। তার কথা শুনে এবং ভঙ্গিমা দেখলে আমার উনিশ শতকের ইংরেজি উপন্যাস পড়ছি বলে মনে হতে লাগল।
সাধারণত কোনো মানুষের ব্যক্তিগত ধ্যান-ধারণাকে নিয়ে আমি খুব বেশি স্পর্শকাতর নই। কিন্তু কেন জানি না সৌম্যদার ব্যক্তিগত ধরনের কথাগুলিও আমার ভালো লাগল।
কথা প্রসঙ্গে তিনি বললেন– পরশু নামচাং থেকে এসেছিলাম, আবার সুন্দরবন যাব।
নামচাং – নামচাং বলায় আমি প্রথমে বুঝতেই পারিনি। আমার সন্দিহান মুখের দিকে তাকিয়ে সৌম্যদা বলল – নাম চাং অসম অরুণাচলের সীমান্তবর্তী একটি বর্ষারণ্য।
–বর্ষারণ্য!
সৌম্যদা বলে যাওয়া অনেক শব্দ আমি বুঝতে পারিনি। বর্ষারণ্য কী সে কথা বলার আগে তিনি হাসিমুখে বলেছিলেন–' নাম চাঙে আমার ঘর নেই কিন্তু নামচাং আমার কাছে ঘরের চেয়েও আপন ঘর। রূপকথার রাজকুমারের কাহিনি শোনার মতো আমি সৌম্যদার কথাগুলো শুনে যাচ্ছিলাম।
সৌম্যদা পাখি তার প্রিয় বিষয় বলায় আমার হাসি পেয়েছিল। কিন্তু সৌম্যদাকে আমার সেই প্রতিক্রিয়া দেখাইনি। অভিনীত একটি চরিত্রের মতো অভিনয় করে সৌম্যদার কথার গতির অনেক লেখ নিয়ে তাকে প্রশ্ন করে গিয়েছিলাম, একের পরে অন্য প্রশ্ন। তিনি কী জানি আমাকে একজন বন্ধু শ্রোতা হিসেবে গণ্য করেছিলেন। প্রকৃতির মনোরম জগতের কথা বলে যাচ্ছিলেন। তার কথা শুনে মাঝেমধ্যে আমার ধারণা হয়েছিল তিনি প্রকৃতির হয়ে ওকালতি করা কোনো একজন অধিবক্তা। প্রকৃতির আদালতে নির্ভীকভাবে যুক্তি এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য একজন দক্ষ প্রকৃতিবিদ।
সৌম্যদা আমাকে প্রকৃতির প্রতি মোহিত করার প্রচেষ্টা সেই মুহূর্তে কতটা সফল হয়েছিল, এখন আমার মনে নেই। কিন্তু আমার মনে আছে তার প্রতিটি কথাই আমাকে স্পর্শ কাতর করে তুলেছিল। গন্ডার হত্যার নেপথ্যে থাকা সরকারি এবং বেসরকারি ক্রিয়া-কলাপের বিষয়ে মানুষটা আমাকে আদ্যোপান্ত বলেছিল। কয়লার মুক্ত খনন প্রকৃতির সংরক্ষণের স্লোগান দিয়ে বেসরকারি সংস্থার অর্থ উপার্জন করা এবং অরণ্য সংরক্ষণের জন্য প্রদত্ত ধনের সরকারি বিভাগের দ্বারা , কোনো কথাই আমাদের আলোচনার কার্যসূচি থেকে বাদ পড়েনি।
জানিনা কেন, সৌম্যদাকে আমার বড় ভালো লেগে গিয়েছিল। তার সঙ্গে অরণ্যের মোহ স্পর্শ করার প্রতি আমি ক্রমশ আগ্রহান্বিত হয়ে পড়েছিলাম।
ধীরে ধীরে সময় অতিক্রান্ত হচ্ছিল।
সৌম্যদার সঙ্গে বলা কথা বার্তাগুলি বিস্মৃতির গর্ভে হারিয়ে যেতে লাগল। আমার চাকরির ব্যস্ততা এবং অহেতুক নিঃসঙ্গতার মধ্যে আমি অসংলগ্ন ভাবে দুলতে দুলতে ঝুলেছিলাম। কোনো কথা, কোনো কাজ আমার দ্বারা সুকলমে করা সম্ভব হচ্ছিল না। ব্যাংকের কাজ ছাড়া আমি কোনো কাজেই মনোনিবেশ করতে পারছিলাম না।
সেই সময় একদিন সৌম্যদার ফোন এল– কেমন আছ? ব্যস্ত নাকি? ফোনে কিছুক্ষণ কথা বলা যাবে কি?
সৌম্যদার কণ্ঠস্বর শুনে আমি চঞ্চল হয়ে পড়লাম। অনেকদিন পরে একজন নিজের মানুষের সঙ্গে কথা বলার আনন্দে।
– হে সৌম্যদা, ভালোই আছি । আপনার খবর কি ? কুশলে আছেন তো ?
– আছি আছি। সবাই জিজ্ঞেস করে ভালো আছেন তো, তুমি যে জিজ্ঞেস করলে কুশলে আছি কিনা। কুশল শব্দটা শুনে ভালো লাগল।
– হ্যাঁ সৌম্যদা, আমি মানুষের কুশল কামনা করি ।
নামচাং যেতে পারবে? চল।
আমি এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম। হ্যাঁ যাব। কবে? কতদিনের জন্য?
– দু'একদিনের মধ্যে তারিখটা তোমাকে জানিয়ে দিচ্ছি।
–দুই দিন, খুব বেশি হলে তিন দিন।
– একটু তাড়াতাড়ি জানাবেন দাদা। আমাকে ছুটি নিতে হবে।
– নিশ্চয় জানাব।
সৌম্যদার নিমন্ত্রণ আমাকে সুখী করে তুলল। আমি আপ্লুত হয়ে পড়লাম। তার আহ্বান আমাকে পুলকিত করে তুলল।
আমার নৈমিত্তিক ছুটি জমা ছিল বলে আমি দ্রুত সেই ছুটি গ্রহণ করার জন্য আবেদন করলাম। আবেদনপত্রটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করে উত্তরের অপেক্ষায় আমাকে অনাবশ্যক বসে থাকতে হল না। আমি ভাবার চেয়েও দ্রুত উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছুটি মঞ্জুর হয়ে এল। আমার আর আনন্দের সীমা রইল না। জীবনে প্রথমবারের জন্য আমি অরণ্যে প্রবেশ করার সুযোগ-সুবিধা লাভ করব। এটা আমার কাছে এক নতুন এবং একক অভিজ্ঞতা হবে।
– জীবনে প্রথমবারের জন্য আমি অরণ্য দেখতে পাব।
কখন ও কিছু কথা জীবনে এভাবে আসে যে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় না।সৌম্যদার সঙ্গে দেখা না হলে আমি অরণ্য সম্পর্কে কোনো ধারনাই করতে পারতাম না। কাজিরাঙ্গার মাঝখান দিয়ে বাস অতিক্রম করে আসার সময় দু'পাশে দেখতে পাবা গাছপালা বন জঙ্গলকে আমি অরণ্য বলে ভেবেছিলাম। সেইজন্য তোর সঙ্গে কথা বলার সময় অরণ্যের প্রতি থাকা আমার সামান্য জ্ঞানকেই ব্যবহার করেছিলাম। এখন সে কথা ভাবলে লজ্জাবোধ করি।সৌম্যদা আমার মনের অরণ্যের গভীরতা ধরতে পেরেছিলেন বলে, আমাকে ধীরে ধীরে প্রকৃত অরণ্যের জ্ঞান দিতে প্রয়াস করেছিলেন। আমি তাঁর বাকচাতুর্যতায় মুগ্ধ হয়েছিলাম এবং অরণ্যের প্রতি মোহিত হতে শুরু করেছিলাম ।সৌম্যদা ধীরেসুস্থে আমার সেই দুর্বলতার সুবিধা গ্রহন করতে সক্ষম হয়েছিলেন ।
― তোমাকে নাহারকাটিয়া আসতে হবে। দুলিয়াজানেও আসতে পার। এটা বিকাশের ফোন নাম্বার– ফোন নাম্বারটা লিখে নাও–সৌম্যদা কয়েকটি গাণিতিক সংখ্যা একের পর এক বলে গেল। সৌম্যদা নাম্বার বলে গেল আমার মগজে ঢুকল না। আমি সৌম্যদাকে পুনরায় নাম্বারটা বলার জন্য অনুরোধ করলাম।
সৌম্যদা দেওয়া বিকাশের নাম্বারটায় আমি বিকাশকে ফোন করলাম।
বিকাশ বরদলৈ তিনসুকিয়া সংস্করণের একটি দৈনিক খবরের কাগজে চাকরি করে। ফোনে তার কণ্ঠস্বর শুনে ফোনটা সজোরে খামচে ধরলাম। এত কোমল কণ্ঠস্বর।তাঁর আতিথেয়তায় ভরা কণ্ঠস্বর শুনে আমার এরকম মনে হল, ফোনটা যেন এখনই আমার হাত থেকে খসে পড়বে।সৌম্যদার সহচর যে– সেই জন্যই নাকি! জিজ্ঞেস করতে চেয়েও জিজ্ঞেস করলাম না।
বিকাশ একটা নাম্বার দিয়ে বলল– আপনি নাহারকাটিয়া স্টেশনে নেমে এই নাম্বারে ডায়াল করবেন। গাড়ির সঙ্গে একজন চালক অপেক্ষা করবে। তিনি আপনাকে আমাদের নামফাক ইকো ট্যুরিজম ক্যাম্পে নিয়ে আসবে।
গ্লোবাল ওয়ার্মিং, ইকো ট্যুরিজম, অরিন্থোলজিস্ট – নতুন নতুন শব্দের সঙ্গে আমার পরিচয় হচ্ছে। নির্দিষ্ট কয়েকটি শব্দে অতিবাহিত করা ব্যাংকের ব্যস্ততাপূর্ণ জীবন। সেভাবেই চলছিল এবং ভেবেছিলাম এভাবে বাকি জীবনটা চলে যাবে। রামমোহন রেঁধে রাখা ভাতগুলি, ডিক্স টিভি সকালের খবরের কাগজ , পরিচিত অড়হড়ের ডাল এবং বিলাস পাশওয়ানের লন্ড্রি– আমার পৃথিবীটা ততটুকুই। এস বি আইর পরিচিত পোর্টালে সারাদিন ঘুরে বেড়ানো। সন্ধ্যে হলে তিন বছরের সান্নিধ্য লাভের জন্য সুবিধা করে নেওয়া ঘরটিতে ফিরে আসি। টিভির সূইচটা অন করে অলস ভাবে বিছানায় গড়িয়ে পড়ি। মনের দিগন্তে ঘরমুখো গরু গুলি ধুলো উড়িয়ে, পাখিগুলি কলরব করে উড়ে বেড়ায়। যতসব বিশ্রী চিন্তা। কখনও এভাবেই শুয়ে পড়ি। গভীর রাতে ক্ষুধা পায়। আবোল তাবোল বকতে থাকা টিভিটার সুইচ অফ করে দিই। দিনের চঞ্চল পৃথিবীটা রাত হলে এত গভীর হয়ে পড়ে। রাতের পৃথিবীকে সময়ের বার্ধক্য পঙ্গু করে। রাতের অসহায় অবস্থা দেখে রাতের প্রতি আমার করুণা জন্মে। হঠাৎ আমার টিনের চালে ধাক্কা খাওয়া কোনো নিশাচর পাখির ধুকধুক শব্দে আমি শিহরিত হয়ে পড়ি। নিজের অজান্তে আমি আমাকে জড়িয়ে ধরার ব্যর্থ প্রয়াস করি। এই নিঃসঙ্গতার সঙ্গে আমার কি জানি জন্মজন্মান্তরের পরিচয়। আবছা ভাবে আমার মায়ের মুখ মনে পড়ে। মায়ের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা করে। ভেজা চোখ দুটিকে প্রবোধ দিয়ে ঠান্ডা হয়ে যাওয়া ভাগগুলি গালে মুখে পুরে আমি বিছানায় উঠি। যখন জেগে উঠি হয় ভয়াতুর বৃদ্ধ নিশা তখন রৌদ্রস্নাত সফল যুবক
নাহরকটিয়া স্টেশনে নামার আগে বিকাশের দেওয়া ফোন নাম্বারটায়। বার দুয়েক ফোন করায় ফোনটা রিসিভ করে বিপরীত দিকে থাকা ব্যক্তি বললেন–' স্যার, আমি নেওগ। প্রবাল নেওগ । আমি স্টেশনে আপনার জন্য অপেক্ষা করছি ।
প্রবাল নেওগ আমাকে তার গাড়ির নম্বরটা বলে দিল। অন্যমনস্কতার জন্যই হয়তো গাড়ির নাম্বারটা আমার মনে রাখা হল না। হবে। চলে যাবে। ফোন করলেই তো পেয়ে যাব। নিজেকে প্রবোধ দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রেলগাড়ি থেকে আমি ধীরে ধীরে স্টেশনে পা রাখলাম। আমাকে ছেড়ে রেলটা চলে গেল। স্টেশন ছেড়ে চলে যাওয়া রেল গাড়িটার দিকে আমি কিছুক্ষণের জন্য তাকিয়ে রইলাম। কেন জানি আমার মনে প্রশ্ন এল–' প্রত্যেকেই আমাকে ছেড়ে এভাবে একদিন চলে যাবে নাকি?
না না। আমি তো আমার পড়া বিদ্যালয়টিকে ছেড়ে এসেছি। বিদ্যালয় মানে বিদ্যালয়ের ঘরগুলি। আমাদের সময়কার কেউ এখন সেখানে নেই। স্যার, দিদিমণি, সমবয়সী এমনকি রাধুনী কয়েকজনও। আমার সময়ে চাকরিতে প্রবেশ করা এক দুজন রয়েছে । তাদের সঙ্গে আমার সম্পর্কও খুব একটা নেই বা কখনও ছিল না । তাই সেই পুরোনো সম্পর্ক ও এখন অর্ন্তহিত।
– স্যার।
শূন্য স্টেশনটাতে আমার সামনে একজন লোক।
–আমি নেওগ স্যার। আপনার জন্য বাইরে অপেক্ষা করছিলাম।
নিজের কাছ থেকে তক্ষুনি আমি নেওগের কাছে ফিরে এলাম।
নাহরকটিয়ার কোনো অপরিচিত পথে অত্যন্ত সাবধানে দশ কিলোমিটার পথ গাড়ি চালিয়ে এনে আমাকে নেওগ 'টাই ফাকে ইকো ট্যুরিজম ক্যাম্প'এ নিয়ে এল। এই ধরনের ক্যাম্পে আমি প্রথমবারের জন্য এসেছি। সেই জন্য আমার মনে উৎসুকতার অন্ত নেই। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এবং কম্পিউটারের মনিটরে চোখ রেখে রেখে যান্ত্রিকতায় অথর্ব হয়ে পড়তে চলা চোখ জোড়া নতুন জলের ঢলে ছটফট করা মাছের ঝাঁকের মতো উতলা হয়ে পড়লাম । সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশ, নতুন যাত্রা।
আমাকে রেখে নেওগ কপালে নমস্কার ঠুকে নিজের পথে চলে গেল। বুড়িদিহিং নদীর পারের শান্ত সৌম্য পরিবেশে টাই ফাঁকে ইকো-ট্যুরিজম ক্যাম্পটি অবস্থিত । ক্যাম্পের মূল দরজাটা খুলে আমি ভেতরে প্রবেশ করলাম । আমাকে দেখে ক্যারমবোর্ড খেলা ছেড়ে দিয়ে হাসতে হাসতে এগিয়ে আসা সুন্দর সুঠাম ছেলেটাকে আমি চিনি না। সে দূর থেকেই হাতদুটো আমার দিকে এগিয়ে দিল। আমার কাছে পৌছানো মাত্র আমার হাতদুটি ছেলেটির হাত দুটোর মধ্যে জড়িয়ে ধরায় পরিচিতির সূত্রপাত ঘটল।
– আমি জয়ন্ত। জয়ন্ত দত্ত।
নিজের পরিচয় দিয়ে জয়ন্ত আমাকে একটি মাত্র রুমের একটি ঘরের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেল। সিড়ি দিয়ে আমি জয়ন্তের পেছন পেছন চাংঘর টার উপরে উঠে গেলাম । ছোট বারান্দায় সাজিয়ে রাখা দুটো চেয়ারের একটিতে আমি আমার রুকসেকটাকে বসিয়ে দিলাম ।
– দাদা, এদিকটাতে বাথরুম । আপনি কিছুটা ফ্রেশ হয়ে নিতে পারেন। আমি এক কাপ চা পাঠিয়ে দিচ্ছি। লাল ফিকা চা হলে হবে কি?
জয়ন্তের কথার সম্মতি জানিয়ে আমি মাথা নাড়লাম।
বারান্দার চেয়ারটাতে বসে আমি জয়ন্তের যাওয়া পথটির দিকে তাকিয়ে রইলাম। ছেলেটি বেশ লম্বা। মুখের হাসি আর গায়ের রং জনকে ভালো মানিয়েছে। স্টেট ব্যাংকের কাউন্টারে দাঁড়িয়ে থাকলে হয়তো আমি জয়ন্তের দিকে ব্যস্ততার মধ্যেও একবার তাকাতাম। জয়ন্ত রান্নাঘরের দিকে গিয়ে আমার জন্য চায়ের ফরমায়েশ দিল।
এখানে বসে থেকে ভালো লাগছে। আমার সামনে দিয়ে বয়ে চলেছে বুড়িদিহিং নদীটা। আমি একদৃষ্টে নদীটার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার সামনে কম্পিউটারের মনিটরে জ্বলজ্বল করছে নদীটা। নিঃসঙ্গতার বিননিকে নদীটি উপহাস করে আমাকে ডাকতে শুরু করেছে।
– এক মিনিট।
নদীটির কাছ থেকে আমি সময় চেয়ে নিলাম।
ছোট বারান্দাটিতে পেতে রাখা চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে আমি বাথরুমে মুখ হাত ভালো করে ধুয়ে নিলাম। মুখে জল ছিটিয়ে দিয়ে নিজেকে যথেষ্ট সতেজ বলে মনে হল। রাতের রেলযাত্রার ক্লান্তি জল নর্দমায় ধুয়ে নিল এবং নর্দমাটা ক্লান্ত হয়ে পড়ল। বাথরুম থেকে জল যাওয়ার রাস্তাটা যথেষ্ট সংকীর্ণ নর্দমায় ক্লান্ত জল এগিয়ে যেতে পারছে না।
বাথরুমটা বেশ বড়সড়। সুন্দর। প্রাকৃতিক পরিবেশ বাথরুমে ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কাপড় রাখার জন্য একটা রড রয়েছে। তার মধ্যে শুধু একটা সাদা টাওয়েল। টাওয়েলটা টান মেরে এনে তারমধ্যে মুখটা গুঁজে দিলাম। ন্যাপথালিনের সুশ্রী একটা গন্ধ হুড়মুড় করে নাকের ভেতরে ঢুকে পড়ল। টাওয়েলটা পুনরায় সেখানেই মেলে দিয়ে পুনরায় বারান্দায় এসে বসলাম।
এটা জয়পুরের টিপামফাকে গ্রাম। প্রাকৃতিক শোভায় ঘিরে রাখা নদীতীরের অঞ্চল।
একটি ছেলে এসে আমার সামনের টেবিলে রেখে যাওয়া ভোট দেওয়া লাল চায়ের কাপে জোরে চুমুক দিলাম। চায়ের কাপটির প্রয়োজন বেশ ভালোভাবেই অনুভব করছিলাম। গরম ধূমায়িত চা আমার মনটাকে রঙ্গিন করে তুলল। চায়ের কাপ মহাআয়াশে গলাধঃকরণ করে হাতি ক্যামেরাটা নিয়ে নদীর তীরে তীরে ঘুরে বেড়ানোর জন্য বেরিয়ে এলাম। মাথার উপরে বসন্তের উদ্ধত রোদ। নদীর দুই পার এবং ' টাইফাকে ইকো ট্যুরিজম ক্যাম্পের টোকো পাতা দিয়ে তৈরি কুঁড়েঘর গুলির দিকে সেই রোদে তাকালে চোখ গুলি জ্বলজ্বল করে উঠছে।
নদীর তীর ধরে বেশ দূর পর্যন্ত এগিয়ে যেতে লাগলাম।
অসংলগ্ন কিছু চিন্তা এসে মনের মধ্যে যাওয়া আসা করছে। কিছুক্ষণ হাঁটার পরে বেশ ক্লান্ত লাগল। পেটের মধ্যে কড়কড় করছে। মনে নেই, কতদিন হল, এভাবে হাঁটি নি। ব্যাংক থেকে কিছুটা দূরে বাড়ি থেকে যে ব্যাংকে হেটে যাই, কেবল ততটুকুই আমার হেঁটে যাওয়ার অভ্যাস। পায়ের হাঁটায় ক্লান্তির সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা গরম ও লাগছে। রাত্রের দিকে ঠান্ডা পড়লেও দিনের রোদ কিছুটা কড়া। ঠিক মাথার উপরে উত্তাপ ছড়ানো সূর্যটা আমাকে কেমন যেন অস্থির করে তুলেছে ।
আমি ফিরে এসে পুনরায় বারান্দার চেয়ারটাতে বসে পড়লাম । গেঞ্জিটা ছিপছিপে ঘামে ভিজে গেছে ।
সামনের বুড়ি দিহিং নদীটাকেও হয়তো প্রখর রোদ ঘামে স্নান করিয়ে দিচ্ছে। আমার কাছে এই পরিবেশ-পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অপরিচিত। মনটা কেমন যেন পরিচিত-অপরিচিত ভাবে আলোড়িত হয়ে চলেছে। চেয়ারে বসে বিশ্রাম নেবার সুবিধা পাওয়ায় আমার শরীরে পরিচিত ক্ষুধা জেগে উঠল।
ওদিক থেকে জয়ন্ত এগিয়ে আসছে। সে বোধহয় আমাকে কিছু একটা বলবে। আমি তার দিকে আমার দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম।
– দাদা, ক্ষুধা লাগেনি?
আমি জয়ন্তের কথাটা শেষ হতে দিলাম না, বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম এবং তার দিকে এগিয়ে যাবার জন্য চাং ঘর থেকে এক পা দু পা করে নেমে এলাম । আমাকে এগিয়ে নিয়ে যাবার মতো করে জয়ন্ত আগে আগে এবং আমি পেছন পেছন ।
– আসুন ভাত খাই ।
জয়ন্ত আমাকে নিয়ে ভাত খাবার ঘরের দিকে এগিয়ে গেল।
ভাত পর্বের আয়োজন দেখে আমার মনটা ভালো হয়ে গেল।নানা ধরনের তরকারি। জয়ন্ত ও আমার সঙ্গে ভাত খাবে। দুজনের ভাতের থালায় দুটো ভাতের পুঁটুলি । আমি ভাতের পুঁটুলির কথা শুনেছি, দেখিনি। জয়ন্ত পাতা দিয়ে ঘিরে রাখা ভাতের পুটলিটা কীভাবে সরায় তা দেখে নিয়ে আমিও সেই ভাবে করতে লাগলাম । ভাতের ফুরফুরে সুস্বাদু গন্ধ আমার নাকে এসে লাগল। আমার থালাটিকে ঘিরে থাকা বাটি গুলিতে সাজিয়ে দেওয়া সমস্ত খাদ্য সামগ্রী আমার কাছে অপরিচিত। বন্য পাতা দিয়ে সিদ্ধ করা কিছুটা জলীয় তরকারি আমি ভাতের উপর ঢেলে দিলাম । জলীয় তরকারিটা ভাতের ভেতর নিমেষের মধ্যে লুকিয়ে পড়ল এবং শাকপাতা গুলি কোমলভাবে ভাতটাকে ঢেকে দিল। সেই শাকপাতা দিয়ে মাখানো ভাতের গরাস আমাকে খুব তৃপ্তি দান করল । সত্যিই এর স্বাদ আলাদা। এই স্বাদ এর আগে আমার জিহ্বা কখনও স্পর্শ করেনি।
– এটা উরিয়াম পাতা দিয়ে ভাজা বাদাম ।
আমি বাটিটার থেকে একটা চামচ দিয়ে জয়ন্ত বলা উরিয়াম পাতার গুঁড়ো দিয়ে ভাজা বাদাম একটু থালায় এনে রেখে তার থেকে কিছুটা আমার মুখে দিলাম ।
– অপূর্ব।
আমার অজান্তে আমার মনের প্রফুল্ল অবস্থা প্রকাশ পেল। আমি চামচ দিয়ে এবার বাটি থেকে বেশিরভাগ ভাজা এনে থালায় রাখলাম এবং নিমেষের মধ্যে মুখে ভরিয়ে তা শেষ করলাম। পুনরায় ভাজা নিতে যেতেই জয়ন্তের চোখে চোখ পড়ল।
– নিন। নিয়ে নিন। শেষ করে ফেলুন।
অধিক উৎসাহে চামচটা আমি উরিয়াম পাতার সঙ্গে ভাজা বাদামের গুড়োর বাটিটাতে ঢুকিয়ে দিলাম। ভাজাটা সত্যিই ভালো লেগেছিল। আলু মাখা আমি সবসময়ই
খাই।কখনও কখনও রামমল আমার রাতের খাবার রান্না করতে না এলে আমার ভাত খাওয়ার পর্ব সংক্ষিপ্ত করার জন্য আমি রাতের বেলায় ভাত, একটি আলু এবং একটি ডিম দিয়ে মেখে নিই। আমার ব্যস্ততার দিনের ভাত পর্ব এভাবেই সমাপ্ত হয়। তবে এই আলু মাখারও একটা আলাদা স্বাদ পেয়েছি। আলুটা একেবারে মিহি করে মাথা হয়নি। টুকরো টুকরো করা হয়েছে। তারমধ্যে ভাজা পেঁয়াজ, আদা, রসুন এবং নরসিংহের পাতা মিশিয়ে দিয়েছে। আলু মাখার নতুন স্বাদ পাওয়া গেল।
ভাত খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে জয়ন্ত আমাকে' নামফাকে ইকো-ট্যুরিজমের ক্যাম্পের বিষয়ে একটা ধারণা দিতে চেষ্টা করল। কীভাবে এই প্রজেক্টটা আরম্ভ করা হল, কেন করা হলো ইত্যাদি অনেক কথা। জয়ন্তের কথা শুনে আমি উপলব্ধি করলাম যে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অনেকগুলি কথারই পরিবর্তন হয়ে গেছে। পুরোনো কালের ধ্যান ধারণা গুলি পরিবর্তিত হতে শুরু করেছে। মানুষ অরণ্যে বেড়াতে আসতে শুরু করেছে। ভালো কথা।
' ইকো ট্যুরিজম বা ইকো টুরিস্ট বললে আমরা কিছুই বুঝতে পারতাম না। পর্যটকের সেই ধরনের ধারনা আমাদের মনের মধ্যে ছিল না। ধীরে ধীরে কথাগুলি আমাদের মতো ন্যূনতম উৎসাহী সবারই বোধগম্য হতে লাগল।' ইকোটুরিজম' বা 'ইকোটুরিস্ট' বললেই আমরা সাধারণভাবে বুঝি পরিবেশ সাপেক্ষ পর্যটন বা পর্যটক। অন্যথা প- পর্যটন এবং প-পর্যটক।
' ইকো ট্যুরিজম' এবং' ইকোটুরিস্ট'এর অসমিয়া প্রতিশব্দ হিসেবে প- পর্যটন এবং প-পর্যটক ব্যবহার করা যেতে পারে। সেই ধারণার বশবর্তী হয়েই জয়ন্তরা তৈরি করেছে 'ইকো ট্যুরিজম ক্যাম্প। স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা বাঁশ কাঠ বেত দিয়ে তৈরি করেছে ঘরগুলি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি। প্লাস্টিক বা প্রকৃতি ধ্বংসকারী কোনো সামগ্রী এখানে ব্যবহার করা হয় না। গাছের গুঁড়িতে চূণের প্রলেপ মাখানো হয় না।
– এখানে নিয়মিতভাবে পর্যটকরা আসে কি?
আমার প্রশ্নটি জয়ন্তকে অসুবিধায় ফেলল বলে মনে হল।
– হ্যাঁ হ্যাঁ আসে। আবহাওয়ার উপরে কম বেশি হয়। গরমের বন্ধে সুবিধা দিতে পারি না। একটু-আধটু প্রচার হয়েছে।
– তারা যেহেতু তোমার গ্রাহক তাদের সন্তুষ্ট করায় কোনোরকম কৃপণতা কর না।
– নিশ্চয় নিশ্চয়। আমরা সবাইকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করি।
আমাদের ভাত খাওয়া হয়ে গিয়েছিল।
আমার ক্লান্ত লাগছে। সেই জন্য মনে মনে আমি শোবার কথা ভাবছি। জয়ন্তকে আমি আমার মনের ভাব জানালাম। জয়ন্ত বলল- হ্যাঁ, আপনি কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিলে মনটা হালকা লাগবে। জয়ন্তের কথায় সায় দিয়ে আমার জন্য নির্দিষ্ট করা রুমে আমি ফিরে এলাম ।
পড়লাম উৎসাহ নিয়ে। ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুন