সংরক্ষণের অভাবে
—
নদিগর্ভে বিলীন হতে বসেছে বলদঘাটার দ্বাদশ শিবালয়
মঙ্গলপ্রসাদ মাইতি
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা-১ ব্লকের অধীন বলদঘাটা গ্রামের সবচেয়ে বড়ো ঐতিহ্য হল এখানকার দ্বাদশ শিবালয়। যার ধ্বংসাবশেষ বর্তমানে পূরাতাত্ত্বিক নিদর্শনের সাক্ষ্য বহন করছে। কিন্তু উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে এই পুরাতত্তিক নিদর্শন সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে বসেছে। মালবান্দি হয়ে বলদঘাটা গ্রামে ঢোকার ঠিক আগে বামদিকে শিলাবতী নদীর একেবারে পাড় ঘেঁষে এই দ্বাদশ শিবালয়ের অবস্থান। ১২ টি বিশাল বিশাল মন্দির নিয়ে এককালে গড়ে উঠেছিল এই দ্বাদশ শিবালয়। পশ্চিম দিকে ছ’টি মন্দির এবং পূর্ব প্রান্তে ছ’টি। মাঝখানে মূল প্রবেশদ্বার। যা অত্যন্ত সুদৃশ্যভাবে তৈরি করা হয়েছিল। এই বারোটি মন্দিরের মধ্যে পশ্চিম প্রান্তের চারটি এবং পূর্ব প্রান্তের দু’টি মন্দির ইতিমধ্যে শিলাবতী নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। ভাঙাচোরা অবস্থায় যে ছ’টি মন্দির অবশিষ্ট আছে অর্থাত্ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে তাও অচিরেই যে শিলাবতী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে তা সহজেই অনুমেয়। বর্তমানে মানুষ এখানে ঢোকে না। যত সব বিষধর সাপ, শিয়াল, বেজি আর চামচিকের বাস। যেন শ্মশানপুরীর চেহারা নিয়েছে।
কথিত এখানকার তত্কালীন জমিদার কালাচাঁদ সামন্ত অনেককাল আগে এই দ্বাদশ শিবালয়ের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শিব ছাড়াও বিষ্ণু, গঙ্গা ও অন্যান্য দেবদেবীর পূজার্চনা এখানে হত। এইসব দেবতারা ছিলেন সামন্ত বংশের কূলদেবতা। সেই সময় এই দ্বাদশ শিবালয়ে বারামাসে তেরো পার্বণ লেগেই থাকত। রসমেলা, বারুণীমেলা, লক্ষ্মীপুজো, সরস্বতী পুজো সব জাঁকজমকভাবে অনুষ্ঠিত হত। অনুষ্ঠিত হত নবকুঞ্জ। এককালে এই দ্বাদশ শিবালয়কে ঘিরে এলাকাবাসীর আনন্দের সীমা-পরিসীমা ছিল না। কিন্তু আজ তা কালের গর্ভে তলিয়ে গেছে। এখন এখানে পুজো হয়না, সন্ধ্যায় বাতি জ্বলে না। নি:সীম-নি:সাড়ে পড়ে থাকে এই ভগ্ন দেউল। বর্তমানে সামন্ত বংশের কেউ এখানে থাকেন না। কর্মসূত্রে অন্যত্র গিয়ে বসবাস করছেন। যাইহোক নিশ্চিতভাবে বলা যেতে পারে এই দ্বাদশ শিবালয়টি বলদঘাটা গ্রামের পুরাতাত্ত্বিক সম্পদ। এই সম্পদকে বাঁচিয়ে রাখতে অবিলম্বে সরকারি উদ্যোগের প্রয়োজন আছে বলে এলাকাবাসী দাবি করেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন