রবিনসন ক্রুসো
হোমেন বরগোহাঞি
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ -বাসুদেব দাস
আমি যখন হাই স্কুলের ছাত্র তখন অষ্টম শ্রেণির ইংরেজি পাঠ্যপুঁথিতে একটি কবিতা ছিল–The solitude of Alexander Selkirk। পাঠ্যপুথিটিতে আরও কিছু কবিতা ছিল ।কিন্তু বাকি কবিতাগুলির নাম পুরোপুরি ভুলে গেছি। চেষ্টা করলেও মনে করতে পারছিনা । কিন্তু চেষ্টা করলেও ভুলে যেতে পারিনা আলেকজান্ডার সেলকার্ক নামের কবিতাটি ।কবিতাটির প্রথম পংক্তিটি স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে আমার মনে আসতেই থাকে ।
I am monarch of all I survey ;
My right there is none to dispute:
From the centre all round to the sea,
I am lord of the fowl and the brute
কবিতাটি কেন মনে থেকে গেল তার কারণটা আমি জানিনা। একটি কারণ হতে পারে কবিতাটির অদ্বিতীয় বিষয়বস্তু। সে কথায় একটু পরে আসছি। কিন্তু কবিতাটি ভুলতে না পারার সঙ্গে আমার একটি ক্ষুদ্র ব্যক্তিগত কথাও জড়িত হয়ে রয়েছে। অষ্টম শ্রেণিতে আমাদের ইংরেজি পড়িয়েছিল পীর জাহান আলি স্যার। আমার জীবনে তিনি একজন ভুলতে না পারা মানুষ। তাঁর কথা আমি আমার আত্মজীবনীতে লিখেছি।সে যাই হোক না কেন একদিন স্যার কবিতাটা পড়িয়ে শেষ করে পরের দিন তার সারাংশ লিখে আনার জন্য আমাদের নির্দেশ দিলেন। ইংরেজি কবিতাটির সারাংশও লিখতে হয়েছিল ইংরেজিতে।পরের দিন স্যারের নির্দেশ মতো আমি কবিতাটির সারাংশ লিখে স্কুলে নিয়ে গেলাম। শ্রেণির প্রত্যেকেই লিখে নেওয়া সারাংশ স্যারের টেবিলে জমা দেওয়া হল। কয়েকটি সারাংশ পড়ে শেষ করার পরে স্যার আমার সারাংশটা পড়তে শুরু করলেন। আমরা প্রতিটি ছেলেই লক্ষ্য করলাম যে স্যার আমার লেখার সারাংশটা পড়ে থাকার সময় আড়চোখে মাঝে মধ্যে মাথা তুলে আমার দিকে তাকাতে লাগলেন ।আমরা তার অর্থ বুঝতে পারলাম না। সারাংশটা পড়ে শেষ করে স্যার আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছুটা রাগতভাবেই বললেন–' তুই এই সারাংশটা কোনো একটি নোট বুক থেকে নকল করেছিস? অথবা বড় কেউ তোকে লিখে দিয়েছে?''
স্যারের অভিযোগ শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। অভিমানে আমার দু'চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠল। প্রায় কাঁদো কাঁদো স্বরে আমি বললাম –'স্যার, কোনো বই থেকে সারাংশটা আমি নকল করিনি। প্রতিটি নোট বই আপনি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। আমি সারাংশটা নিজেই লিখেছি।'
স্যার নীরবে কিছুক্ষণ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। ক্রমে ক্রমে তাঁর মুখের ভাব পরিবর্তিত হতে লাগল। কোমল কন্ঠে তিনি আমাকে কয়েকটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন। অবশেষে তিনি বিশ্বাস করলেন যে কবিতাটির সারাংশ আমি নিজেই লিখেছি।পীর জাহান আলি স্যার ছিলেন অত্যন্ত স্নেহশীল মানুষ। এই ধরনের স্নেহশীল মানুষ আমি খুব কমই পেয়েছি। এই কথাগুলি লিখতে গিয়েও স্যারের সরল এবং স্নেহশীল মুখটা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠেছে। আমাকে অবাক করে দিয়ে তিনি বললেন–' ইংরেজি কবিতার এত সুন্দর ইংরেজি সারাংশ আমি নিজেও লিখতে পারব না। তুই লেখা সারাংশটা আমি এখন জোরেজোরে পড়ে শোনাব। তোরা প্রত্যেকেই সারাংশটা লিখে নে। আমি ‘এ’ সেকশনেও এই সারাংশটা শ্রুতলিপি দেব।'
আলেকজান্ডার সেলকার্ক নামে কবিতাটি আমি আজও কেন ভুলতে পারিনি তার কারণটা বোঝার জন্য ওপরের কথাগুলি আপনাদের নিশ্চয় কিছুটা সাহায্য করবে।
স্কটল্যান্ডের মানুষ আলেকজান্ডার সেলকার্ক ছিলেন জাহাজের নাবিক।১৭০৪ সনে জাহাজটা বিদেশ অভিমুখে যাবার সময় জাহাজের ক্যাপ্টেনের সঙ্গে আলেকজান্ডারের ঝগড়া হয়েছিল। সেলকার্ক তখন ক্যাপ্টেনকে নিজেই অনুরোধ করে যে তাকে সাগরের মধ্যে কোনো একটি দ্বীপে নামিয়ে দেওয়া হোক।তাঁর যা হবার হবে। কিন্তু সেই ক্যাপ্টেনের সঙ্গে নাবিক হয়ে ভ্রমণ করাটা তাঁর পক্ষে অসম্ভব। সেলকার্ককে জোয়ান ফার্নান্ডেজ নামের একটি জনমানবহীন দ্বীপে নামিয়ে দেওয়া হল। দ্বীপটি ছিল দক্ষিণ আমেরিকার চিলি থেকে প্রায় চারশো মাইল দূরে। এরকম একটি নির্জন আর দুর্গম দ্বীপে আলেকজান্ডার সেলকার্ককে নামিয়ে দিয়ে জাহাজটা চলে গেল। অবশ্য সেলকার্ককে যথেষ্ট কাপড় চোপড়, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি এবং কিছু অস্ত্রশস্ত্র দেওয়া হল।
সেই নির্জন দ্বীপটিতে আলেকজান্ডারকে চার বছর থাকতে হল(আমার গ্রন্থাগারে থাকা অন্য একটি গ্রন্থের মতে চার বছর নয়– চার মাস। কিন্তু পরবর্তী ঘটনাবলীর দিকে লক্ষ্য রেখে তিনি সেখানে চার বছর ছিলেন বলেই মনে হয়)। চার বছর হোক বা চার মাসই হোক, এক সময় একটি ইংরেজ জাহাজ তাঁকে দ্বীপ থেকে উদ্ধার করে ইংল্যান্ডে ফিরিয়ে আনল।
আলেকজেন্ডার সেলকার্ক সুদীর্ঘ চার বছর কাল একটি নির্জন দ্বীপে একা বাস করা কথাটা যখন খবরের কাগজের মাধ্যমে এবং মানুষের মুখেমুখে প্রচার হল তখন স্বাভাবিকভাবেই ইংল্যান্ডে একটা বিপুল চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হল। এই সত্য কাহিনিকে অবলম্বন করে উয়িলিয়াম কাউপার নামের একজন কবি লিখলেন ওপরে উল্লেখ করা কবিতাটি আর ড্যানিয়েল ডিফো নামের একজন লেখক লিখলেন রবিনসন ক্রুসো নামে একটি অমর উপন্যাস।
উইলিয়াম কাউপার এবং ড্যানিয়েল ডিফো– দুজনেই ইংরেজি সাহিত্যের অত্যন্ত বিখ্যাত লেখক।
আমার শৈশবে আমাদের বাড়ির গ্রন্থাগারটিতে আমি যে সমস্ত বই আবিষ্কার করেছিলাম তার মধ্যে একটি ছিল Lahiri's Select Poems। আমার কয়েকজন কাকা হাইস্কুলে পড়ার সময় বইটি ছিল তাদের ইংরেজি পাঠ্যপুঁথি। কাকাদের Lahiri's Select Poemsটি একটি বৃহৎ কলেবর গ্রন্থ। কিন্তু একই নামের আমরা পড়া বইটির কলেবর ছিল অত্যন্ত ক্ষুদ্র। অর্থাৎ আমাদের ছাত্রাবস্থায় মূল বইটির একটি ক্ষুদ্র অংশ আমাদের পাঠ্যপুঁথি করা হয়েছিল । সে যাই হোক না কেন, আমাদের বাড়ির গ্রন্থাগারে Lahiri's Select Poems আবিষ্কার করার সময় আমি ছিলাম হাই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ; অর্থাৎ ইংরেজি কবিতা বোঝার মানদন্ডে ইংরেজি ভাষা জ্ঞান তখনও আমার আয়ত্ত হয়নি। কিন্তু আমার শৈশবে ছাপা অক্ষরের নেশা আমাকে এতটাই মাতাল করে তুলেছিল যে বোঝার চেষ্টা না করে আমি কেবল মুদ্রিত শব্দের মোহিনী শক্তির দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে শুয়োপোকা এঁড়ির পাতা খাওয়ার মতো বইয়ের এক দিক থেকে অপরদিক নিরবচ্ছিন্নভাবে পড়ে গিয়েছিলাম । আমার এখনও মনে আছে যে টেনিসনের Lotus Eaters নামের দীর্ঘ কবিতাটি আমি প্রায় চিৎকার করে করে আবৃত্তি করেছিলাম । কিছুটা বুঝতে পেরেছিলাম কিন্তু বেশিরভাগ কথাই কিছুই বুঝতে পারছিলাম না ।Lahiri's Select Poems এর অন্য যে কবিতাটি আমাকে মোহাবিষ্ট করেছিল, সেটি হল উইলিয়াম কাউপারের 'On the Receipt of my Mother"s Picture'।
উইলিয়াম কাউপারের নামটির সঙ্গে সেটাই ছিল আমার প্রথম পরিচয়।
ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে পরবর্তীকালে অবশ্য আমি তাঁর বিষয়ে অনেক কথাই জানতে পেরেছিলাম, বা জানতে হয়েছিল। উইলিয়াম কাউপার ইংরেজি সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ কবিদের তালিকায় স্থান পাওয়ার যোগ্য নিশ্চয় নয়। কিন্তু তিনি একাধিক ঐতিহাসিকের মতে One of our finest writer । তাঁর জীবনটা ছিল অত্যন্ত করুণ এবং বিষাদ পূর্ণ। যৌবনে পা রাখার আগেই তিনি হিস্টোরিয়ার দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন। হিস্টোরিয়ার পরপর আক্রমণ তাঁর জীবনটা দুঃখে পরিপূর্ণ করে তুলেছিল। বিমর্ষতাও ছিল তাঁর চির সঙ্গী। মাঝ বয়স থেকেই তিনি আক্রান্ত হলেন ধর্মীয় উন্মাদনার দ্বারা। কিন্তু তিনি ছিলেন একজন প্রতিভাবান কবি। তিনি জীবনের সার্থকতা লাভ করেছিলেন কয়েকটি অবিস্মরনীয় কবিতা সৃষ্টির মধ্যে। সেগুলির মধ্যে On Receipt of my Mother's Picture এবং The Task নামের দীর্ঘ কবিতাটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।The Task কবিতাটি পড়ে রবার্ট বার্ণস তাঁর একজন বন্ধুকে লিখেছিলেনঃ' Is not the Task a glorious Poem?It's religion ,barring a few scraps of Calvinistic divinity ,is the religion of God and Nature;the religion that exalts and ennobles man.' এখানে বলে রাখা উচিৎ হবে যে ইংরেজি সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ কবিদের মধ্যে রবার্ট বার্ণস হলেন একজন। ঠিক একইভাবে ইংরেজি সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ রচনা লেখক চার্লস ল্যাম্ব তাঁর একজন বন্ধুকে লিখেছিলেন–' মিল্টনকে পছন্দ না করা একজন মানুষকে আমি ক্ষমা করতে পারি; কিন্তু উয়িলিয়াম কাউপারের The Task পড়ে মুগ্ধ না হওয়া কোনো মানুষকে আমি ক্ষমা করতে পারিনা।'
উইলিয়াম কাউপারের কবি প্রতিভার বিষয়ে এর চেয়ে বেশি কথা বলার প্রয়োজন নেই।
কোমল বয়সে পরিচিত হওয়া উইলিয়াম কাউপারকে আমি দ্বিতীয়বারের জন্য আবিষ্কার করি অষ্টম শ্রেণির ইংরেজি পাঠ্যপুঁথিতে সন্নিবিষ্ট Alexander Selkirk নামের কবিতাটিতে ।
উইলিয়াম কাউপারের জন্ম হয়েছিল ১৭৩১ সনে। সেই বছরেই মৃত্যু হয়েছিল ইংরেজি সাহিত্যের অন্য একজন বিখ্যাত লেখক ড্যানিয়েল ডিফোর। ড্যানিয়েল ডিফোর জীবন ছিল বিচিত্র অভিজ্ঞতা এবং ঘাত-প্রতিঘাতের পরিপূর্ণ।Alexander Selkirk এর চাঞ্চল্যকর কাহিনিটি শুনে উইলিয়াম কাউপার যেভাবে The Solitude of Alexander Selkirk নামে একটি কবিতা লিখেছিলেন, ঠিক সেভাবেই একটি সত্য কাহিনিকে অবলম্বন করে ড্যানিয়েল ডিফো লিখেছিলেন একটি উপন্যাসঃ রবিনসন ক্রুসো। ড্যানিয়েল ডিফোকে ইংরেজি উপন্যাসের জন্মদাতাও বলা হয়ে থাকে।১৭১৯ সনে প্রকাশিত রবিনসন ক্রুসো নামে বইটি লেখার আগে ড্যানিয়েল ডিফো ২৫০টির মতো বই লিখেছিলেন। দুটি বই ছাড়া বাকি সমস্ত বই বিস্মৃতির গর্ভে চিরকালের জন্য হারিয়ে গেছে। ইংরেজি সাহিত্যের সিরিয়াস পাঠক ছাড়া এখন আর কেউ সেই সমস্ত বইয়ের খবর রাখে না। কিন্তু গত ৩০০ বছর ধরে ক্রুসোর জনপ্রিয়তা ক্রমান্বয়ে এভাবে বাড়তে শুরু করেছে যে আরব মরুভূমির বেদুইনরাও তাদের তাঁবুতে বসে বিশ্রাম নেওয়ার সময় রবিনসন ক্রুসো পড়ে থাকে। সভ্য জগতের প্রায় প্রতিটি ভাষাতেই বইটির অনুবাদ হয়েছে। অসমিয়া ভাষাতেও হয়েছে। কিন্তু রবিনসন ক্রুসোর ক্ষুদ্র অসমিয়া সংস্করণে কেবলমাত্র মূল বইটির কঙ্কালটিকেই পাওয়া যায়।
রবিনসন ক্রুসো লেখার সময় ড্যানিয়েল ডিফোর বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর। ইতিমধ্যে তিনি জীবনের বহু ঘাত-প্রতিঘাত অতিক্রম করে এসেছেন। এমনকি তাকে জেলের ভাত ও খেতে হয়েছে। তিনি জীবনে ব্যবসা-বাণিজ্য করে বিপুল পরিমানের ধন সম্পত্তি অর্জন করেছেন, সেভাবে হারিয়েছেনও। ঋণ শোধ করতে না পেরে তাকে মহাজনের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা থেকে তিনি অনেক মূল্যবান শিক্ষাও আহরণ করেছেন। চারবছর নির্জন দ্বীপে নিঃসঙ্গভাবে বাস করতে বাধ্য হওয়া আলেকজান্ডার সেলকার্কের কাহিনি লিখতে বসে তিনি আবিষ্কার করলেন যে তার নিজের জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতাগুলি এখন তার ভালোভাবে কাজে আসবে। কিন্তু যে বইটি তাকে অমরত্ব দান করল, আর যে বই বিশ্ব সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং মৃত্যুহীন কাহিনি গুলির মধ্যে একটি বলে পরিগণিত হয়েছে, সেই বইটি প্রকাশ করার জন্য প্রথম অবস্থায় কোনো প্রকাশক এগিয়ে আসেনি। একের পর এক প্রকাশক তাকে বিমুখ করে পান্ডুলিপি ফেরত পাঠিয়েছিল। কিন্তু অবশেষে একদিন ড্যানিয়েল ডিফোর ছেলের বয়সী উইলিয়াম টেইলর নামের একজন যুবক প্রকাশক বইটির পান্ডুলিপি পড়ে তার মূল্য আবিষ্কার করে।১৭১৯ সনের এপ্রিল মাসে বইটির প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। মাত্র চার মাসের মধ্যে বইটির আরও তিনটি সংস্করণ প্রকাশ করতে হয়। অবশেষে এরকম অবস্থা হল যে প্রতিটি বুড়ি ইংরেজ মহিলা জন বুনিয়ানের Pilgrim's Progress এর সঙ্গে ড্যানিয়েল ডিফোর রবিনসন ক্রুসোকেও তার ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে যেতে হল।
রবিনসন ক্রুসোর এই অসামান্য জনপ্রিয়তার কারণ কী? কেন প্রতিটি মানুষেরই এই বইটি পড়া উচিত? ওপরে ওপরে দেখতে গেলে এটা একটি চাঞ্চল্যকর অভিযান- কাহিনি। সাগরের একটি জনহীন দ্বীপে একজন মানুষকে এক বছর নয়, দুই বছর নয় সুদীর্ঘ চার বছর কাল একা বাস করতে হয়েছিল । কখনও যে তিনি সেখান থেকে উদ্ধার পাবেন সেরকম কোনো আশাও ছিল না । অর্থাৎ মানুষের মুখ না দেখে সেই নির্জন দ্বীপে মৃত্যুর জন্য প্রতীক্ষা করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না । কিন্তু একটি নির্জন দ্বীপে একজন মানুষ একনাগাড়ে কয়েক বছর কাটানোর ঘটনাটি কাহিনির মূল বা প্রধান আকর্ষণ নয়। প্রধান আকর্ষণ হল এটাই যে রবিনসন ক্রুসোকে নিজের প্রাণ রক্ষার জন্য নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে নিত্যনতুন কৌশল বের করতে হয়েছিল । সব সময় তাকে কাজ করে যেতে হয়েছিল ।The charm of the story really lies not in adventure, but in its picture of a man forced to live the simple life ,to build ,to bake,to contrive ,and to preserve his cheerfulness and piety.
রবিনসন ক্রুসোর কাহিনি আমাদের এই শিক্ষাই দেয় যে মানুষ সাহস ধৈর্য এবং বুদ্ধির সাহায্যে সমস্ত বাধাবিঘ্নকে জয় করতে পারে। যে মানুষ হার মানতে চায় না জয় তার হবেই। প্রত্যেক মানুষের জীবনে এই ধরনের সাহস, ধৈর্য এবং মনোবলের খুব প্রয়োজন। রবিনসন ক্রুসোর কাহিনি থেকে মানুষ এই সমস্ত শিক্ষা পায় বলেই কাহিনিটি পড়তে মানুষ কখনও বিরক্তিবোধ করে না।
আমি নিজে অনেক সময় রবিনসন ক্রুসোর কাহিনিটিকে প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করি। সাগরের মাঝখানে জনহীন দ্বীপগুলিরগুলির কথা , অসংখ্য মানুষের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে সমাজে বাস করা মানুষগুলি কখনও বা সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ হতে পারে, সর্বস্বান্ত হতে পারে, সর্বব্যাপী হতাশা তাকে গ্রাস করে ফেলতে পারে। কিন্তু তা বলে সে ভাগ্যের কাছে অসহায় ভাবে আত্মসমর্পণ করবে না কি? দ্বিতীয়তঃ বেশিরভাগ মানুষই নিজের নানাবিধ জটিল সমস্যা সমাধানের খোঁজে বা সমাধানের জন্য উপদেশ চেয়ে অন্যের কাছে যেতে চায়। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে মানুষের সমস্ত সমস্যার সমাধান তার ভেতর থেকেই আসা উচিত। যেভাবে রবিনসন ক্রুসো তাঁর সমস্ত সমস্যার সমাধান খুঁজে পেয়েছিল নিজের মনের মধ্যে। মানুষকে হতে হবে সম্পূর্ণ অর্থে স্বাবলম্বী। যে ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছিল নির্জন দ্বীপে নিঃসঙ্গ অধিবাসী রবিনসন ক্রুসো। মানুষকে সবসময়ই কাজ করে থাকতে হবে আর সেই কাজই তাকে জীবনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। রবিনসন ক্রুসো হল একজন চির -অপরাজেয় এবং চির- আশাবাদী মানুষের স্বাবলম্বী জীবনের কাহিনি। এই কাহিনি সমস্ত মানুষের জন্যই অন্তহীন প্রেরণার উৎস।
-----------
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন