ম্মৃতিকথা ১২ :: এই আমি চরিত্র || নীলাঞ্জন কুমার (গত মাসের পর) || Autobiogrphy, Nilanjan Kumar
ম্মৃতিকথা ১২
এই আমি চরিত্র
( গত মাসের পর )
গড়বেতা শহরের যে জায়গায় আমার প্রাইমারি স্কুলটি,বিরাট বিরাট পাথরের মাঝখানে ছিল । দেখতে লাগতো দারুণ । ছোট্ট টালির স্কুলে ছিল তিনটি ঘর একটিতে বসতো ওয়ান ও টু , মাঝের ঘরে থ্রি আর সামনের ঘরে ফোর । আমাদের স্কুলের হেড মাস্টারের নাম ছিল নন্দ কিশোর লাহা । আমরা বলতাম হেড স্যার । শনিবার শনিবার দুপুরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত স্কুলের লম্বা দালানে । আমি মাঝেমধ্যে করতাম আবৃত্তি গান। হেড স্যারের হাতের লেখা ছিল মুক্তর মতো । সেই হাতের লেখাতে তিনি পোগ্রাম লিখতেন । তাছাড়া প্রতি মাসে একবার করে মন্ত্রী নির্বাচিত করা হত । যেমন সাংস্কৃতিক মন্ত্রী , সাফাই মন্ত্রী এই রকম । টিফিনে খেলতাম ডাংগুলি । ছুটির পর বাড়ি ফিরে আর এক প্রস্থ খেলাধুলা । মাস তিনেক পরে আমরা উঠে গেলাম
গড়বেতার প্রাণকেন্দ্র চটিতে । রাস্তার পাশেই । বাড়ির মালিকের নাম করালী দত্ত । তাঁর সোনার দোকান ছিল
আমাদের ভাড়া বাড়ির সামনে । দোতলা বাড়ির নিচে থাকতাম আমরা । এখানে এসে দু - একজন বন্ধু গড়ে
উঠলো । তার মধ্যে সুব্রত ছিল বিশেষ বন্ধু । ওদের ছিলআয়ুর্বেদিক ওষুধ দোকান ।
গড়বেতার চটি এলাকা ষাটের দশকেছিল
জমজমাট গন্ঞ্জ এলাকা । রাস্তার ধারে সারি সারি দোকান আর কিছু ঘরবাড়ি নিয়ে এলাকাটি । বাবার অফিস আর আমাদের স্কুল কিছুটা দূরে হল। দিদিদের
স্কুল উমাবতী গার্লস স্কুল আমার প্রাইমারি স্কুলের বিপরীতে ছিল । বাবা আমাকে স্কুলে পৌঁছাতে গোবিন্দ নামে এক বাবার অফিস পিওন নিযুক্ত করেছিল ।
দেখতে দেখতে ক্লাস ফোরের বৃত্তি পরীক্ষা এসে গেল । একটি কথা স্বীকার করতেই হবে এই প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনা দারুণ হত ।সে কারণে বৃত্তিপরীক্ষাতে
ফাস্ট ডিভিশনে পাস করেছিলাম । এরপর ক্লাস ফাইভ তে গড়বেতা হাইস্কুলে ভর্তি হয়ে গেলাম ।
পড়াশোনার সঙ্গে খেলাধুলা চলতে লাগল । বিকেলে সুব্রতদের সঙ্গে ফুটবল খেলতাম । মাঝে মাঝে ম্যাচ হত অন্য দলের সঙ্গে । তখন খাতা বাজী রেখে খেলা হত । অর্থাৎ খেলায় চুক্তি হত যে দল হারবে তাকে নির্দিষ্ট সংখ্যক খাতা জয়ী দলকে দিতে হবে । আমরা প্রায় হারতাম ও খাতা জয়ী দলকে দিয়ে আসতাম ।
মাঝেমধ্যে আমার সপরিবারে রায় পাড়াতে যেতাম সর্বমঙ্গলা মন্দির ।এই গড়বেতায় লোকমুখে একটি কথা প্রচলিত আছে যে এখানে মহাভারতের
ভীমের সঙ্গে বকাসুরের যুদ্ধ হয়েছিল ।তার হাড়ও নাকি এই এলাকায় পাওয়া গিয়েছিল । তাছাড়া সেখানে আছে গনগনির মাঠ । যাকে ওখানে খুলা বলা হয় । এ এক আশ্চর্য জায়গা । শিলাবতী নদীর পাড়ে আসা অসাধারণ মনোময় জায়গাটিতে সপরিবারে বাবা নিয়ে যেত । এখান থেকে কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিস পাওয়া গেছে।
গড়বেতায় যেহেতু বাবাকে নাটক যাত্রা নিয়ে ব্যস্ত হতে হয় না তাই বাবা আমাদের সময় দিতে পারতো। তবে বাবা মাঝেমধ্যে মেদিনীপুরে এসে অভিনয় করে যেতেন নাট্যরূপা সংস্থার হয়ে ।
খুব ভাল লাগছে
উত্তরমুছুন