নস্টালজিয়া ৪৫
পৃথা চট্টোপাধ্যায়
ছোটবেলা থেকে দেখেছি আমাদের ওখানে হিন্দু মুসলিম বরাবরই মিলেমিশে থাকতো। আমাদের বাড়িতে বাবার বন্ধু, অফিসের স্টাফ, প্রতিবেশী অনেকেই আসতেন তাঁরা হিন্দু না মুসলিম এই নিয়ে আলাদা করে কিছু ভাবনা ছিল না। তবে আমার রক্ষণশীল পরিবারের মা বাইরের লোকজন চলে যাবার পর চারিদিকে গঙ্গাজল ছিটিয়ে দিতো। বাবা খুব রসিক মানুষ ছিলো, দূষিত গঙ্গা জলের পবিত্রতা নিয়ে মায়ের সঙ্গে ঠাট্টা করতো আর মা তাতে খুব রেগে যেতো।
ছোটবেলায় নবাব পরিবারের মুসলিম মেয়েদের দেখতাম তারা সচরাচর কোথাও যেতো না।সন্ধ্যে হলে খুব সাজগোজ করে নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে কাছাকাছি এ বাড়ি ও বাড়ি যাওয়া আসা করতো। আমাদের বাড়ির সংলগ্ন গলিতে তাদের চলাচল অনুভব করতে পারতাম কাচের চুড়ির শব্দে , বেল জুঁইয়ের মালার সুগন্ধিতে অথবা টুকরো টুকরো উর্দু কথায় । গ্রীষ্মকালে চুলে তারা বেল- জুঁই ফুলের মালা জড়াতো। খুব আতর মাখতো। তারা যে সবাই বোরখা পরতো তা নয়, তবে ওড়না দিয়ে নিজেদেরকে ঢেকে রাখতে অভ্যস্ত ছিল। এইসব ক্ষীণকায় মেয়েদের সাদা মোমবাতির মতো সুন্দর লাগত আমার। আমাদের বাড়িতে বাবার কাছে বিভিন্ন কাজের প্রয়োজনে যাঁরা আসতেন তাঁদের কাকু, জেঠু , দাদা বলতাম। বাবা খুব ভালো উর্দু জানতো। নবাব পরিবারের অনেকের সঙ্গে বাবা সুন্দর উর্দুতে কথা বলতো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন