অণুগল্প
ফাঁকে ফাঁকে
বিনোদ মন্ডল
দশ বছরের ধিঙ্গি মেয়ে বাংলায় পেয়েছে পঞ্চাশে পাঁচ। স্কুল থেকে ফিরে একটু ফ্রেশ হয়ে সবেমাত্র সোফায় সেঁটে বসেছে আনন্দী। বাংলার দিদিমণি। প্রিয় সিরিয়াল হাঁ করে গিলবে টানা ঘন্টা দুই। তার আগেই মেয়ের হাতবোমায় হাঁ হয়ে গেল সে।
টিভি'র সাউন্ড মিউট করে দিলো সে। পোস্ট মর্টেম শুরু করলে খাতাটার। মাথায় ঝড়। উঠোনের কাঁঠাল গাছে কাল-
পেঁচার পাখশাট।
এই একরত্তি মেয়ে জন্মানোর পর টানা ছ'মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি নেয় আনন্দী। মেয়াদ শেষে সবে চালু হওয়া সি সি এল আবার তিন মাস। এইভাবে এপ্রিল থেকে নভেম্বর প্রায় সারা সেশান স্কুল যেতে হয়নি সেবার। তবে বার্ষিক পরীক্ষার খাতা দেখে দিয়েছিলো যেচে।
সেদিনের একটা ঘটনা চকিতে ভেসে উঠলো মনে। সোমা নামের একটি মেয়ে নব্বুইয়ের মধ্যে নয় পেয়েছিলো। তার গার্ডিয়ান কল হয়। ক্লাস নাইনে। কেন এত কম নম্বর পেয়েছে জিগ্যেস করায় মেয়েটি বলেছিলো, বাংলার ক্লাশই তো হয়নি! আর তার বাবা বলেছিলো -- হাড় হিম করা কয়েকটি কথা। আমাকে স্কুলে না ডেকে, আপনারই তো আমাদের বাড়িতে ক্ষমা চাইতে যাওয়া উচিত ছিলো! বুঝবেন, যখন নিজের বাচ্চা একই গাড্ডায় পড়বে। কারণ, তার কপালেও তো আপনার মতো কেউ জুটবে!
মা বাংলার দিদিমণি। শহরের নামজাদা সরকারি স্কুলে। তার দশ বছরের মেয়ে মাতৃভাষায় পেয়েছে পঞ্চাশে পাঁচ। বিজ্ঞাপণের ফাঁকে ফাঁকে এক চিলতে রোদের মতো সিরিয়াল শেষ হয়ে যাচ্ছে আনন্দী সেনের।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন