বিয়ের আগে "থ্যালাসেমিয়া টেস্ট", পোস্টার চিটাচ্ছেন শিক্ষক
নিজস্ব প্রতিবেদন
ঝাড়গ্ৰাম জেলার গোপীবল্লভপুর ২ নম্বর ব্লকের বেলিয়াবেড়া কৃষ্ণ চন্দ্র মেমোরিয়াল উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়এর সহকারী প্রধান শিক্ষক সুব্রত মহাপাত্র এই সচেতনতামূলক কাজ টি করে চলেছেন নিরবে। স্কুল ছুটির পর একজন ছাত্রের সাইকেল নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে মানুষজন দের বোঝাচ্ছেন কেন বিয়ের আগে "থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা " করা উচিত। এর জন্য সুব্রত বাবু তিন দিন স্কুলের একটা রুমে থেকে যান, বাড়ী ফেরেন না মেদিনীপুর শহরে।
সুব্রত বাবু নিজের গাঁটের টাকায় পাঁচ হাজার পোস্টার ছাপিয়েছেন, নিজে পোস্টার চিটারচ্ছেন, এক হাতে আঠার ব্যাগ ও অন্য হাতে পোস্টারের ব্যাগ নিয়ে দোরে দোরে ঘুরছেন যাতে বিবাহ যোগ্য ছেলে বা মেয়ে বিয়ের পিড়িতে বসার আগে কুষ্ঠি বা ঠিকুজি বিচার নয়, থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা অতি- অব্যশই করায়।
সুব্রত বাবুকে প্রশ্ন করা হয় কেন তাঁর এই উদ্যোগ? উত্তরে মাস্টার মশাই জানান" তাঁর এক প্রিয় ছাত্রের পুত্র থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্ম নিয়েছে, ওরা দুজনেই বাহক ছিল,সেই ছাত্রের করুন কাহিনি শুনে তিনি এই সমাজ সচেতনতার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন,যাতে তাঁর কোন ছাত্র বা ছাত্রীর বা অন্য কারোর জীবনে এই অন্ধকার না নেমে আসে।"
সুব্রত বাবু তাঁর স্কুলে প্রতি বছর এই "থ্যালাসেমিয়া বাহক নির্ণয় শিবির "করেন কিন্তু লক ডাউন এর জেরে স্কুল বন্ধ থাকায় গত বছর এই শিবির করতে পারেন নি, আর এখন স্কুল খুললেও সব ক্লাস খুলে নি, তাই তিনি স্কুল ছুটির পর মানুষ জন কে বোঝাবার জন্য পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে সচেতন করার কাজ টা করে চলেছেন।
সুব্রত বাবুর কথায় -" এর জন্য হয়তো আমার অর্থ ও শ্রম দিতে হচ্ছে ঠিকই কিন্তু কিছু জন যদি সচেতন হয় ওটাই আমার সার্থকতা।"
এর আগেও সুব্রত বাবু নিজের টাকায় " মদ/চোলাই মদের বিরুদ্ধে" একই ভাবে পোস্টার ছাপিয়ে আদিবাসী গ্রাম গুলোতে স্কুল ছুটির পর লাগাতার সচেতনতা মূলক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
কইমা, ভাদুয়া, মুচিনালা, শাকরারী, ভান্ডারডিহা, নারানপুর, মহাপাল, তপশিয়া প্রভৃতি গ্রামে গেলে দেখা যাবে মাস্টার মশাই এর পোস্টার।
গোপীবল্লভপুর ২ নম্বর ব্লকে এর সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক শ্রী অর্ঘ্য ঘোষ বলেন - সুব্রত বাবুর এই উদ্যোগ অকল্পনীয়। সমাজের মানুষজন যাতে ভালো থাকেন তাঁর এই প্রচেষ্টা কে আমরা কুর্নিশ জানাই।"
বেলিয়াবেড়া থানার ওসি সাহেব শ্রী সুদীপ পালোধী বাবু বলেন - মাস্টার মশাই এর এই প্রচেষ্টা কে স্যালুট জানাই। উনি কোন সহযোগিতা চাইলেন আমরা দিতে প্রস্তুত।"
বেলিয়াবেড়া চক্রের এস.আই. শ্রী তমাল দাস জানান - " সুব্রত বাবু স্কুলে পড়ানোর পাশাপাশি যেভাবে সমাজের কথা ভাবেন, খুব কম জনই তা ভাবেন বা করেন। উনার কাজই উনাকে আর পাঁচ জনের থেকে আলাদা করেছে। উনার এই ধরনের কাজ কে সন্মান জানাতেই হয়।"
সুব্রত বাবু এক ছাত্র সুখেন্দু খিলাড়ি র কথায় - সুব্রত স্যার একজন আদর্শ শিক্ষক, আমরা উনার ছাত্র হিসেবে গর্ব অনুভব করি"।
ভুষিমাল ব্যবসাই ধরণিধর করণের কথায় - সুব্রত বাবু আমাদের জেলার গর্ব।
কিন্তু মাষ্টার মশাই এর কোন বিকার নেই। শুধু বলেন_ "কর্মই ধর্ম। ভালো কিছু করতে পারলে নিজেকে ভালো লাগে, সেই ভালোলাগা থেকে এই কাজ।"
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন