নস্টালজিয়া ৩৮
পৃথা চট্টোপাধ্যায়
নস্টালজিয়া ৩৮
পৃথা চট্টোপাধ্যায়
পুজোর ছুটির পরে স্কুল খুললে আমাদের শিক্ষিকারা তখন বেশ গল্প করতেন ক্লাসে। জিজ্ঞেস করতেন ছুটি কেমন কাটল, কোথাও বেড়াতে গেছিলাম কিনা, পুজোয় কেমন আনন্দ হলো,মা দুর্গার সঙ্গে আর কোন্ কোন্ ঠাকুর থাকে , তাদের কার কী বাহন -এইসব অনেক প্রশ্ন। আমাদের শিক্ষিকা মিত্রাদি , ঝর্ণাদি খুব বেড়াতে যেতেন। সেই সব বেড়ানোর গল্প বলতেন আমাদের। খুব ভালো লাগত আমার শুনতে। শেফালিদির মুখটা সবসময় বিরক্তিতে ভরা থাকত কেন জানি না। তবে একবার তিনি বেশ হাসি খুশি ভাবে তাঁর বেড়াতে যাওয়ার গল্প করেছিলেন মনে আছে। আমি পুজোর ছুটিতে বাড়িতেই থাকতাম। বাবা মায়ের সঙ্গে লালবাগে আর বহরমপুরে ঠাকুর দেখা ছাড়া কোনো কোনো বছর মোরগ্রামে মামার বাড়িতে যেতাম। এর বাইরে অন্য কোথাও বেড়াতে যাওয়া হত না আমাদের। বাবার মাইনে পত্র তখন এত বেশি ছিল না যে সংসার চালিয়ে কোথাও বেড়াতে নিয়ে যাবে আমাদের।আর এ ভোজন রসিক ছিল আমাদের বাবা কাকা, তাই খাওয়া দাওয়ার জন্য অনেক খরচ করে ফেলত মনে হয়। একথা অবশ্য আমি বড় হয়ে বুঝতে পেরেছিলাম। বন্ধুরা যখন বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার গল্প বলত তখন খুব ভাল লাগত শুনতে। টিফিন টাইমে তার কাছে যেতাম আরো গল্প শোনার জন্য। 'চাঁদের পাহাড়' বইটা পড়েছিলাম ক্লাস এইটে পড়ার সময়। মুগ্ধ হয়ে গেছিলাম, আর কতবার যে বইটা পড়েছিলাম বলতে পারব না।
স্কুলে আমার বন্ধু ছিল নিষ্কৃতি, জয়ন্তী, তপতী, মানসী, শুভ্রা । তখন সব প্রাণের বন্ধু । অনেক গল্প হত তাদের সঙ্গে।স্কুল থেকে একসঙ্গে গল্প করতে করতে বাড়ি ফিরতাম আমরা। আমার বাড়ি ছিল সবচেয়ে দূরে। কতদিন এমন হয়েছে স্কুল ছুটির পরে ফেরার পথে ওদের বাড়িতে জল খেতে ঢুকতাম। ওদের মাও আমাকে খুব ভালোবাসতেন এবং না খাইয়ে কখনো ছাড়তেন না। এদিকে আমার বাড়ি ফিরতে দেরি হলে মা খুব চিন্তা করত।আমরা তখন হেঁটে একসঙ্গে দলবদ্ধভাবে স্কুল থেকে ফিরতাম। বয়েজ স্কুলেরও ছুটি হত একই সময়ে। আমাদের স্কুলের কাছেই ছিল 'লালবাগ সিংহী বয়েজ হাই স্কুল'। ছেলেরা অধিকাংশই সাইকেলে ফিরত। ক্লাস এইট নাইন থেকে প্রেমের মুকুলিত অনুভব ছুঁয়ে ছিল আমার মন। ক্রমশ একটু একটু করে অনুভব করতে শিখেছি ভালবাসার অপূর্ব সৌন্দর্য। তখন ছেলেরা যে যাকে পছন্দ করত তার পিছনে অথবা পাশে পাশে সাইকেল চালিয়ে যেত স্কুল ফেরত। চিরকুটে ভালবাসার কথা লিখে বন্ধুর মারফত দিত পছন্দের মেয়েটিকে। এইসব নিয়ে অসাধারণ একটা রোমাঞ্চ ছিল আমাদের মধ্যে। স্কুলে আসার সময় কেউ কেউ প্রেমপত্র পেলে তার চোখমুখের চেহারা অন্যরকমহয়ে যেত। যে যার প্রিয় বন্ধুকে এসব বলত। খুব উৎসাহ ছিল তখন এইসব নিয়ে। কিভাবে যেন শিক্ষিকাদের স্টাফরুম পর্যন্ত পৌঁছে যেত সে খবর। ডাক পড়ত সেই মেয়েটির। বন্ধুদের মুখে মুখে আমাদের কাছে পৌঁছে যেত সে কথা। আমরা টয়লেটে যাবার অজুহাত দেখিয়ে ক্লাসরুমের বাইরে বেরোতাম। দেখতে যেতাম সেই মেয়েটিকে। এসবের মধ্যে যে কী এক নিবিড় ভাল লাগার ব্যাপার ছিল বলে বোঝাতে পারব না। বন্ধুরা যারা এসব পেরিয়ে এসেছে তারা অনুভব করতে পারবে।
পৃথা চট্টোপাধ্যায়
পুজোর ছুটির পরে স্কুল খুললে আমাদের শিক্ষিকারা তখন বেশ গল্প করতেন ক্লাসে। জিজ্ঞেস করতেন ছুটি কেমন কাটল, কোথাও বেড়াতে গেছিলাম কিনা, পুজোয় কেমন আনন্দ হলো,মা দুর্গার সঙ্গে আর কোন্ কোন্ ঠাকুর থাকে , তাদের কার কী বাহন -এইসব অনেক প্রশ্ন। আমাদের শিক্ষিকা মিত্রাদি , ঝর্ণাদি খুব বেড়াতে যেতেন। সেই সব বেড়ানোর গল্প বলতেন আমাদের। খুব ভালো লাগত আমার শুনতে। শেফালিদির মুখটা সবসময় বিরক্তিতে ভরা থাকত কেন জানি না। তবে একবার তিনি বেশ হাসি খুশি ভাবে তাঁর বেড়াতে যাওয়ার গল্প করেছিলেন মনে আছে। আমি পুজোর ছুটিতে বাড়িতেই থাকতাম। বাবা মায়ের সঙ্গে লালবাগে আর বহরমপুরে ঠাকুর দেখা ছাড়া কোনো কোনো বছর মোরগ্রামে মামার বাড়িতে যেতাম। এর বাইরে অন্য কোথাও বেড়াতে যাওয়া হত না আমাদের। বাবার মাইনে পত্র তখন এত বেশি ছিল না যে সংসার চালিয়ে কোথাও বেড়াতে নিয়ে যাবে আমাদের।আর এ ভোজন রসিক ছিল আমাদের বাবা কাকা, তাই খাওয়া দাওয়ার জন্য অনেক খরচ করে ফেলত মনে হয়। একথা অবশ্য আমি বড় হয়ে বুঝতে পেরেছিলাম। বন্ধুরা যখন বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার গল্প বলত তখন খুব ভাল লাগত শুনতে। টিফিন টাইমে তার কাছে যেতাম আরো গল্প শোনার জন্য। 'চাঁদের পাহাড়' বইটা পড়েছিলাম ক্লাস এইটে পড়ার সময়। মুগ্ধ হয়ে গেছিলাম, আর কতবার যে বইটা পড়েছিলাম বলতে পারব না।
স্কুলে আমার বন্ধু ছিল নিষ্কৃতি, জয়ন্তী, তপতী, মানসী, শুভ্রা । তখন সব প্রাণের বন্ধু । অনেক গল্প হত তাদের সঙ্গে।স্কুল থেকে একসঙ্গে গল্প করতে করতে বাড়ি ফিরতাম আমরা। আমার বাড়ি ছিল সবচেয়ে দূরে। কতদিন এমন হয়েছে স্কুল ছুটির পরে ফেরার পথে ওদের বাড়িতে জল খেতে ঢুকতাম। ওদের মাও আমাকে খুব ভালোবাসতেন এবং না খাইয়ে কখনো ছাড়তেন না। এদিকে আমার বাড়ি ফিরতে দেরি হলে মা খুব চিন্তা করত।আমরা তখন হেঁটে একসঙ্গে দলবদ্ধভাবে স্কুল থেকে ফিরতাম। বয়েজ স্কুলেরও ছুটি হত একই সময়ে। আমাদের স্কুলের কাছেই ছিল 'লালবাগ সিংহী বয়েজ হাই স্কুল'। ছেলেরা অধিকাংশই সাইকেলে ফিরত। ক্লাস এইট নাইন থেকে প্রেমের মুকুলিত অনুভব ছুঁয়ে ছিল আমার মন। ক্রমশ একটু একটু করে অনুভব করতে শিখেছি ভালবাসার অপূর্ব সৌন্দর্য। তখন ছেলেরা যে যাকে পছন্দ করত তার পিছনে অথবা পাশে পাশে সাইকেল চালিয়ে যেত স্কুল ফেরত। চিরকুটে ভালবাসার কথা লিখে বন্ধুর মারফত দিত পছন্দের মেয়েটিকে। এইসব নিয়ে অসাধারণ একটা রোমাঞ্চ ছিল আমাদের মধ্যে। স্কুলে আসার সময় কেউ কেউ প্রেমপত্র পেলে তার চোখমুখের চেহারা অন্যরকমহয়ে যেত। যে যার প্রিয় বন্ধুকে এসব বলত। খুব উৎসাহ ছিল তখন এইসব নিয়ে। কিভাবে যেন শিক্ষিকাদের স্টাফরুম পর্যন্ত পৌঁছে যেত সে খবর। ডাক পড়ত সেই মেয়েটির। বন্ধুদের মুখে মুখে আমাদের কাছে পৌঁছে যেত সে কথা। আমরা টয়লেটে যাবার অজুহাত দেখিয়ে ক্লাসরুমের বাইরে বেরোতাম। দেখতে যেতাম সেই মেয়েটিকে। এসবের মধ্যে যে কী এক নিবিড় ভাল লাগার ব্যাপার ছিল বলে বোঝাতে পারব না। বন্ধুরা যারা এসব পেরিয়ে এসেছে তারা অনুভব করতে পারবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন