কিছু বই কিছু কথা ২৭৮। নীলাঞ্জন কুমার
নক্ষত্রের জন্মকথা । গৌরাঙ্গ মিত্র । কবিতা পাক্ষিক । ত্রিশ টাকা ।
অতি সম্প্রতি মৃত্যু যাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে সেই কবি গৌরাঙ্গ মিত্রের অনু কবিতার ছোট্ট কাব্যগ্রন্থ ' নক্ষত্রের জন্মকথা ' পুনঃপাঠ করতে গিয়ে বুঝি এই কবি শুধুমাত্র ভালো কবিতাই লিখতে আসেননি , এসেছিলেন তার চেয়ে ভালো কিছু দিয়ে যেতে । তাই এই কাব্যগ্রন্থ থেকে: ' ঢেউয়ে টালমাটাল নৌকোর কানে কানে/ বলো: জল পড়ে পাতা নড়ে ...' ( ' জল পড়ে ') , ' একটি দেশি মুরগী ময়লা থেকে খুঁটে খাচ্ছে/ আনন্দ/ একটা বুনো ফুল গল্প করছে মৌমাছিদের সঙ্গে, / নীল জলে সাঁতার কাটতে কাটার এই তো সময় ।' ( ' সাঁতার ') ' জীবন অস্বীকার করছে মৃত্যুকে, / মৃত্যু ছাপিয়ে যাচ্ছে জীবনকে, / ঢেউ ভেঙে জল ছড়িয়ে যাচ্ছে সমুদ্র সৈকতে । ' ( ' প্রবহমান ') , ' পথেঘাটে ছড়িয়ে যাচ্ছে অজস্র মৃত্যু/ নইলে রাত্রি এভাবে শোকগাথা লিখত না ।' ( ' শোকগাথা ') র মতো গভীর অথচ স্বচ্ছ কবিতা নাহলে পেতাম না।
কবির এই কাব্যগ্রন্থের ৯২ টি অনুকবিতার ভেতর বিভিন্ন চিন্তা ধরা পড়ে যার মধ্যে দিয়ে কবি গৌরাঙ্গ কখনো তাঁর গঠন ভাষা ও ভাবের বিচ্যুতি ঘটাননি । আমরা কত সহজে তাঁর কাছে পৌছোতে পারি এসব কবিতার ভেতর দিয়ে : ' কোন ভূগর্ভ রেল আজও/ পাতালে পৌঁছাতে পারেনি, / পাতালে পৌছোতে পারে একমাত্র সীতা । ' ( ' পাতাল ') , ' যদি চাও লম্বা লম্বা বাক্য গড়ে দেব / যদি চাও বাক্য ভেঙে টুকরো টুকরো করব, / অনাবাসী মন, দেখো সান্ত্বনা পাচ্ছ তো ? ' ( সান্ত্বনা ') । গৌরাঙ্গর যতগুলো কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তার ভেতরে এই গ্রন্থটি আলাদা মাত্রা নিয়ে গড়ে উঠেছিল । শৈবাল নায়েকের প্রচ্ছদ দক্ষতার ভেতর দিয়ে টেনে রাখে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন