নস্টালজিয়া ৩৭
পৃথা চট্টোপাধ্যায়
নস্টালজিয়া ৩৭
পৃথা চট্টোপাধ্যায়
খুব ছোটবেলার কথা লিখতে কেন যে এত ভালো লাগে জানি না। টুকটুক করে মনে পড়ে যায় কত কিছু। আমাদের শৈশব ঘিরে বাবা-মায়ের স্নেহ ও সান্নিধ্য খুব বেশি ছিল বলেই হয়তো আমাদের মন এত কোমল ভাবে গড়ে উঠেছিল। আজকের অধিকাংশ শিশু নানা কারণে বাবা মায়ের মিলিত স্নেহ ভালবাসা থেকে অনেক ক্ষেত্রেই বঞ্চিত হয় দেখে আমার খুব কষ্ট হয়। সন্তানকে একটু সময় দিতে হবে এটা অভিভাবকদের মনে রাখা খুব দরকার। আগে যৌথ পরিবার ছিল বলে মা বাবা না পারলেও ছোটদের সঙ্গীর অভাব হত না। দাদু ঠাকুমা এদের কাছে অনেক আদর, প্রশ্রয় ও সুশিক্ষা পেত ছোটরা।
আমার মা ছিল ঘোরতর সংসারী। সংসারের কাজকর্ম, পূজার্চনা, আমাদের পড়াশোনার প্রতি সজাগ দৃষ্টি ছিল তার। বাবার অবশ্য আড্ডার অভ্যাস ছিল। অফিসের পরে অথবা ছুটির দিনে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতো। এ নিয়ে অনেক সময়ই বাবা মায়ের মধ্যে মতান্তর হতো। আমার ছোটবেলায় দেখেছি বাবার তাস খেলার নেশা ছিল। পরে অবশ্য বাবা আর তাস খেলত না।
একদিনের কথা আমার বেশ মনে পড়ে। সেদিন রাতে খুব লোডশেডিং। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার।ঝড় বৃষ্টি হচ্ছিল। সেই দুর্যোগের রাতে মা আমাদের দুই বোনকে নিয়ে একা বাবার জন্য অপেক্ষা করছিল। আমার ভাই তখনো হয় নি।সেইসময় টিভি বা টেলিফোন ছিল না আমাদের মত অধিকাংশ বাড়িতে। মোবাইল তো দেশেই আসে নি। মা ঝড়ের তান্ডবে দুর্গানাম জপ করছিল। ঠাকুর দেবতার উপর মায়ের ছিল অগাধ বিশ্বাস। কত রাত মনে নেই তবে ঝড় একটু কমলে বাবা ফিরতেই মা খুব রাগারাগি করতে লাগল বাবা এই দুর্যোগের রাতে এত দেরিতে আড্ডা দিয়ে ফেরার জন্য। বাবা বেশ রসিক প্রকৃতির মানুষ ছিল। আর মা গম্ভীর রাগী স্বভাবের। বাবা হঠাৎ একটু কেমন জড়িয়ে কথা বলতে লাগল মায়ের সঙ্গে। মা সন্দিগ্ধ ভাবে বাবাকে দেখতে লাগল। বাবা একটা বড় কাচের বোতল বের করে ঢকঢক করে সামান্য কিছুটা খেয়ে মাকে সেটা রেখে দিতে বললো। আমরা জীবনে বাবাকে মদ্যপান করতে দেখি নি। অথচ সেই রাত্রে মা অন্ধকারে সেটা কীসের বোতল না দেখে ভয়ঙ্কর রেগে বোতলের পানিয়টুকু ঢেলে ফেলেছিল উঠোনে। বাবা তখন বুঝতে পারে নি। আমরাও ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তারপরে। পরদিন সকালে দেখি উঠোনে সেই পানীয় পদার্থের চারপাশে থিকথিক করছে নানা রঙের পিঁপড়ে। মা যাকে কোনো নেশার দ্রব্য ভেবেছিল সেটা আসলে ছিল অরেঞ্জ স্কোয়াস। সকালে নিজের নির্বুদ্ধিতার কারনে মায়ের মুখ ছিল থমথমে আর বাবা মুচকি হাসছিল। আমি অরেঞ্জ স্কোয়াস নষ্ট হওয়ায় খুব দুঃখ পেয়েছিলাম। আমাদের বাড়িতে তখন খুব কমই এসব ফলের রস আনা হোতো।আমরা ফলমূল খেতেই অভ্যস্ত ছিলাম। মা বাবাকে শুধু বলেছিল , ঐ দুর্যোগের রাতে এরকম ন্যাকামি না করলে দামি ফলের রসটা এভাবে নষ্ট হতো না।
পৃথা চট্টোপাধ্যায়
খুব ছোটবেলার কথা লিখতে কেন যে এত ভালো লাগে জানি না। টুকটুক করে মনে পড়ে যায় কত কিছু। আমাদের শৈশব ঘিরে বাবা-মায়ের স্নেহ ও সান্নিধ্য খুব বেশি ছিল বলেই হয়তো আমাদের মন এত কোমল ভাবে গড়ে উঠেছিল। আজকের অধিকাংশ শিশু নানা কারণে বাবা মায়ের মিলিত স্নেহ ভালবাসা থেকে অনেক ক্ষেত্রেই বঞ্চিত হয় দেখে আমার খুব কষ্ট হয়। সন্তানকে একটু সময় দিতে হবে এটা অভিভাবকদের মনে রাখা খুব দরকার। আগে যৌথ পরিবার ছিল বলে মা বাবা না পারলেও ছোটদের সঙ্গীর অভাব হত না। দাদু ঠাকুমা এদের কাছে অনেক আদর, প্রশ্রয় ও সুশিক্ষা পেত ছোটরা।
আমার মা ছিল ঘোরতর সংসারী। সংসারের কাজকর্ম, পূজার্চনা, আমাদের পড়াশোনার প্রতি সজাগ দৃষ্টি ছিল তার। বাবার অবশ্য আড্ডার অভ্যাস ছিল। অফিসের পরে অথবা ছুটির দিনে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতো। এ নিয়ে অনেক সময়ই বাবা মায়ের মধ্যে মতান্তর হতো। আমার ছোটবেলায় দেখেছি বাবার তাস খেলার নেশা ছিল। পরে অবশ্য বাবা আর তাস খেলত না।
একদিনের কথা আমার বেশ মনে পড়ে। সেদিন রাতে খুব লোডশেডিং। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার।ঝড় বৃষ্টি হচ্ছিল। সেই দুর্যোগের রাতে মা আমাদের দুই বোনকে নিয়ে একা বাবার জন্য অপেক্ষা করছিল। আমার ভাই তখনো হয় নি।সেইসময় টিভি বা টেলিফোন ছিল না আমাদের মত অধিকাংশ বাড়িতে। মোবাইল তো দেশেই আসে নি। মা ঝড়ের তান্ডবে দুর্গানাম জপ করছিল। ঠাকুর দেবতার উপর মায়ের ছিল অগাধ বিশ্বাস। কত রাত মনে নেই তবে ঝড় একটু কমলে বাবা ফিরতেই মা খুব রাগারাগি করতে লাগল বাবা এই দুর্যোগের রাতে এত দেরিতে আড্ডা দিয়ে ফেরার জন্য। বাবা বেশ রসিক প্রকৃতির মানুষ ছিল। আর মা গম্ভীর রাগী স্বভাবের। বাবা হঠাৎ একটু কেমন জড়িয়ে কথা বলতে লাগল মায়ের সঙ্গে। মা সন্দিগ্ধ ভাবে বাবাকে দেখতে লাগল। বাবা একটা বড় কাচের বোতল বের করে ঢকঢক করে সামান্য কিছুটা খেয়ে মাকে সেটা রেখে দিতে বললো। আমরা জীবনে বাবাকে মদ্যপান করতে দেখি নি। অথচ সেই রাত্রে মা অন্ধকারে সেটা কীসের বোতল না দেখে ভয়ঙ্কর রেগে বোতলের পানিয়টুকু ঢেলে ফেলেছিল উঠোনে। বাবা তখন বুঝতে পারে নি। আমরাও ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তারপরে। পরদিন সকালে দেখি উঠোনে সেই পানীয় পদার্থের চারপাশে থিকথিক করছে নানা রঙের পিঁপড়ে। মা যাকে কোনো নেশার দ্রব্য ভেবেছিল সেটা আসলে ছিল অরেঞ্জ স্কোয়াস। সকালে নিজের নির্বুদ্ধিতার কারনে মায়ের মুখ ছিল থমথমে আর বাবা মুচকি হাসছিল। আমি অরেঞ্জ স্কোয়াস নষ্ট হওয়ায় খুব দুঃখ পেয়েছিলাম। আমাদের বাড়িতে তখন খুব কমই এসব ফলের রস আনা হোতো।আমরা ফলমূল খেতেই অভ্যস্ত ছিলাম। মা বাবাকে শুধু বলেছিল , ঐ দুর্যোগের রাতে এরকম ন্যাকামি না করলে দামি ফলের রসটা এভাবে নষ্ট হতো না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন