অনুগল্প:
কালো মেয়ের কথা
চন্দনা দত্ত
মিসকালো বিধবা বউটা যে মাধ্যমিক পাশ তা কেউ জানত না।বহু কষ্টে একে তাকে ধরে পঞ্চায়েত দপ্তরে ঝাড়ু দেওয়ার ঠিকে কাজটা জোগাড় করে। সারা দিন তাকে গাধার খাটুনি খাটতে হয়। কিন্তু পয়সা পায় দু মাস বা তিন মাস ছাড়া। তাকে সবার চেয়ার টেবিল ঘর পরিষ্কার রাখতে হয়। একটু এদিক ওদিক হলেই মুখ ঝামটা খেতে হয়। গায়ের রং নিয়ে খোটা শুনতে হয়।এই কেলে মাগীটাকে কে জোটাল বলত। দাঁড়া নতুন পঞ্চায়েত গঠন হলে তোকে আগে বাদ দেওয়া করাব। লুকিয়ে সে ফেলে দেওয়া কাগজ পত্র বা এদিক ওদিক ছড়িয়ে থাকা বই পত্র পড়ে।তার ধারনা ছিল যে সে মাধ্যমিক পাশ এটা জানতে পারলে তাকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেবে। কিন্তু তার এই বিদ্যার কথা জানত একজন রাজনৈতিক নেতা।
দেখতে দেখতে পঞ্চায়েত নির্বাচন এসে গেল। নির্বাচনের পর নতুন বডি তৈরি হল। বি ডি ও অফিস থেকে আসা আধিকারিক মহাশয় যখন ঘোষনা করলেন যে এবারের মত প্রধান নির্বাচিত হলেন সরলা মাল। অর্থাৎ সেই কালো মেয়েটা। তাকে বিশেষ এক রাজনৈতিক দলের প্রার্থী করা হয়েছিল। যে জানত যে সরলা মাল মাধ্যমিক পাশ সে বহু কষ্টে বুঝিয়ে তাকে নির্বাচনে প্রার্থী করে।তার পর নির্বাচনে জেতা এবং প্রধান হওয়া।
কিন্তু এরপর বাঁধল গোল। সরলা কিছুতেই প্রধানের চেয়ারে বসবেনা। সেখানে নতুন তোয়ালে দিয়ে ঢাকা নতুন চেয়ার এসেছে। সে হাউ হাউ করে কাঁদতে শুরু করে দিল।বাবুগো তোমরা আমাকে নিয়ে একি করলে।যারা আমাকে নিয়ে মস্করা করত আজ তারা ম্যাডাম বলছে, বাবুগো আমি প্রধান হবনি। তাকে সবাই মিলে বোঝায় যে চিরকাল সবার সমান যায়না।আজ তোর দিন।নে যা বোস ঐ চেয়ারটায় সমাজটাকে পাল্টানোর চেষ্টা কর।
পরদিন সরলা মাল প্রধানের চেয়ারে বসতে সচিব কতগুলো বিলে সই করাতে নিয়ে আসে। সরলা এই সব ব্যাপার গুলো জানত তাই সচিব কে নতুন করে বোঝাতে হয় না। সরলা প্রথম বিলটাতে সই করতে গিয়ে দেখে এটা ঝাড়ুদার হিসেবে তারই করা তিন মাসের বকেয়া বিল।
___________________
Garhbeta ,
Dist-Paschim Medenipur
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন