নস্টালজিয়া ৩৩
পৃথা চট্টোপাধ্যায়
নস্টালজিয়া ৩৩
শৈশবে কাটানো সাগরদিঘির দিনগুলো লিখতে শুরু করে এত কিছু মনে পড়ে যাবে ভাবতেই পারি নি। সেটা ছিল আমার খুব শৈশব। আশ্চর্য এই যে লেখাপড়া করতে ভাল লাগত আমার প্রথম থেকেই। এর কারণ হয়তো মায়ের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিল। ম্যাট্রিকুলেশনের পরে মায়ের আরো পড়ার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু পিতৃহীন আমার মায়ের বিয়ে হওয়ার পরে সংসারের বোঝা সামলে আর প্রথাগত লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় নি। তবুও মা পড়তে ভালবাসত। রামায়ণ, মহাভারত, গীতা, পুরাণ, মঙ্গলকাব্য এসব সুর করে সুন্দর উচ্চারণে পড়ত। আমাদের বাড়িতে বিকেলে কতজন আসত মায়ের কাছে এইসব পাঠ শুনতে।
আমার ছোটবেলায় দেখা সাগরদিঘি খুব গ্রাম ছিল। চারদিকে ফসলের খেত। বারোমাস চাষাবাদ হত সেই সব জমিতে। আমাদের কোয়ার্টারের সামনের রাস্তা পেরিয়ে জমিতে শীতের সময় আলু উঠত। মাটির সঙ্গে মিশে থাকত সেই আলু। চাষিরা বড় আলু জমি থেকে তুলে নেওয়ার পরে অনেক ছোট ছোট আলু পাওয়া যেত। আমরা তখন খুব আনন্দের সঙ্গে জমিতে সেই আলু কুড়োতে যেতাম।আমাদের মধ্যে যারা একটু বড় ছিল জমিতে এক ধারে আগুন জ্বেলে আলু পোড়াতো। আমরা ছোটরাও সেই আলু পোড়া খেতাম। কী অপূর্ব তার স্বাদ এখনো মনে আছে।
আমাদের কোয়ার্টার থেকে বাজারে যাতায়াতের পথে একটা গোরস্থান পড়ত। আমি বরাবরই বাবার সঙ্গে সাইকেলে চড়ে সব জায়গায় যেতাম। হেথা হোতা ঘুরে বেড়াতে আমার ছোটবেলা থেকেই খুব ভালো লাগে। সেই কবরখানার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বাবা নাকি সুরে কথা বলে ভয় দেখাতো। আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ঐ রাস্তাটুকু পার হতাম। ওখানেই পোপাড়া বলে একটা পাড়ায় খুব যেতাম বাবার সঙ্গে সনাতন সিংহ জেঠুর বাড়িতে। বাবা ওখানে তাস খেলতে যেত। সেই সনাতন জেঠুর পরিবারের সঙ্গে আমাদের একটা আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ওদের বাড়িতে অনেক সঙ্গী ছিল খেলার, আমি তাদের সঙ্গে খুব খেলা করতাম। ছোটবেলায় দুর্গাপুজোর সময় মা আমাদের নিয়ে মোরগ্রামে আমার মামার বাড়ির পুজোতে যেতে কোনো কোনো বছরে। একবার আমরা পুজোর সময় সাগরদিঘিতে ছিলাম আর সেবার মায়ের খুব মন খারাপ ছিল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন