কিছু বই কিছু কথা ২৩৯ । নীলাঞ্জন কুমার
জন্ম ছুঁয়ে থাকা মাটি । জগদীশ পাল । ত্রিষ্টুপ । পন্ঞ্চাশ টাকা ।
জঙ্গলমহলের লাল কাঁকুরে মাটি ছুঁয়ে থাকা বারোটি কবিতা নিয়ে গঠিত এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলার মতো কাব্যগ্রন্থ ' জন্ম ছুঁয়ে থাকা মাটি ' তে কবি জগদীশ পাল আন্তরিকতা, ভালোবাসার সঠিক সন্ধান দেন । তাই অক্লেশে সাদাসিধে ভাবে লেখেন: ' নতুন বউকে চালতা ফুল দেব/ খোঁপায় গুঁজবে নতুন বউ/ রাতে ছৌ নাচ হবে । ' ( জন্ম ছুঁয়ে থাকা মাটি) , ' শুনতে পাচ্ছ মাদলের তাল / তার চেয়ে প্রণত হও/ হাঁড়িয়ায় কুটুম পাতাব ।' ( 'অহংকার ') , ' যে মাটিতে লেগে থাকে/ কৃষক রমনীর শুশ্রূষা/ মায়ের হাতের জলপটির মতো ।' ( আগুন) যেন অসহ্য খরার পর খটখটে মাটির ওপর বৃষ্টির ভেতর থেকে সোঁদা মাটির গন্ধ পাওয়া যায় ।
কবি জগদীশ সেই কবি যে মাটি মেখে মাটির ঘ্রাণ নিয়ে বাঁচতে চায় । তাঁর কবিতাতে অহেতুক জাগলিং এর আহাম্মকি নেই । বড় বেশি মাটিময়, তার এভাবে যাপন করার আনন্দ থেকে উঠে আসে তাঁর কবিতা ।
কবির মাটি মাখা কবিতার ভেতর দিয়ে কোনো বাড়তি আবেগ কিংবা সহানুভূতি পাবার ইচ্ছা দেখা যায় না। প্রান্তিক অন্ঞ্চলে অবস্থানের ফায়দা তুলতে বহু কবি ' আমি চাষার ছেলে ' কিংবা ' খেতে না পাওয়া কবি ' বলে বাড়তি আদিখ্যেতা দেখিয়ে কলকাতার কবিদের সহানুভূতি চায় । এই কবি তার যে বিপরীত , কবিতা প্রমাণ করে । জগদীশকে আরো লিখতে হবে, তাঁর বোধের গভীরতা তাকে সমৃদ্ধ করবে আরো বেশি । সাঁঝবাতি পালের প্রচ্ছদ বইটির মেজাজের সঙ্গে সুপ্রযুক্ত । পরবর্তী কাব্যগ্রন্থের দিকে তাকিয়ে রইলাম ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন