সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
২১৬.
এই সংখ্যার লেখার শুরুতেই একটা ভুল স্বীকার করে নিতে চাইছি।২১৫ সংখ্যায় বা গতকালের লেখায় এই ভুলটা হয়েছিল । অরুণ মিত্র-র নামে যে উদ্ধৃতিটি ছিল সেটি অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়-এর। এর জন্য দুঃখপ্রকাশ করাটা লোকদ্যাখানো। নতজানু হয়ে দুঃখপ্রকাশ করাটা করাটাই রীতি হওয়া উচিত।
অরুণ মিত্র-র যে কবিতাটি ৩০০ সংকলনে ছিল , সেটি অরুণদার বইনামের কবিতা , ভুলে যাওয়া দ্বিতীয় ভুল।
ওড়াউড়িতে নয় । এই কবিতার বইটির নামকরণ করেছিলাম আমি। অরুণদার এই কবিতাটির নাম থেকেই বই-এর নামকরণ। এখন সেই কবিতাটির কয়েকটি লাইন পড়ে দেখুন।
' ও-সব ওড়াউড়িতে নয় , রামচরণ সাফ জানিয়েছিল,
ওভাবে হয় না, কুরে কুরে মাটিতে সেধুঁলে হতে পারে
হতে পারে কেন হবেই, বলেছিল রামচরণ,
তখন তো আর ফুলটুল ফোটানোর ভাবনা নেই
কয়লা চুন পাথরের পাশাপাশি মাটির মধ্যে
জমবে হাড়, পয়লা নম্বর খাঁটি সার। '
কোটেশন ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরো বেশি সচেতন থাকা উচিত । এই বয়সে ততটা সচেতন হওয়া সম্ভব নয় , তেমনটাই মনে হচ্ছে। কাজেই কোটেশন থেকে সরে আসছি। বরং নিজের কথা বলা যাক। বা মাঝে মাঝে কোটেশন নয় , পুরোটায় কোটেশন হোক। এতে নাম ভুল হবার কোনো সম্ভাবনা থাকছে না।
যাবতীয় বলাবলি সবটাই ' আপনকথা ' ।
এখানে আপনকথা বলতে কবিতাপাক্ষিক-এর সঙ্গে যুক্ত-আপনকথা ।
আমি , ব্যক্তিগতভাবে আমি , গভীর বিস্ময়ে লক্ষ করতাম , যে কবি-লেখকরা , আরো নির্দিষ্ট করে কবি - সম্প্রদায় প্রচারের আলো পান না। সেই আলো পাশ কাটিয়ে চলে যায় ফুটবল-গ্রাউন্ডে । যে দেশে তখন পর্যন্ত ফুটবল খেলা শুরুই হয়নি সেখানে একজন ফুটবলার যে প্রচার পান , সে তুলনায় একজন প্রতিষ্ঠিত কবি তার এক শতাংশ প্রচার পান না। মূলত সংবাদপত্রের পলিশিমেকাররা কবিদের মানুষ বলেই গণ্য করেন না। অথচ ভুল-ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত মানুষজনরা বেশ করেকম্মে খেয়ে চলেছেন ৷
গোটা ভারতবর্ষ যে অসংখ্য ফুটবল-ক্লাব আছে, তার সঙ্গে যুক্ত মানুষজনের যোগফল কমপক্ষে পাঁচলক্ষ , এমনটাই আমার বিশ্বাস। এমনকী মোহনবাগানের শিল্ডজয়-কে স্বাধীনতা-আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা করা হয়ে থাকে। এর থেকে বড়ো মূর্খামি আর কোনো কোথাও নেই। আদতে মোহনবাগান কোনো ফুটবল ক্লাবকে হারিয়ে শিল্ড জয় করেনি। হারিয়েছিল
East Yourshire Regiment কে । রেজাল্ট 2 --1.
এই প্রসঙ্গে একটা কথা খুব স্পষ্ট করে জানাতে হয় , মোহনবাগান কোনো ফুটবল টিম-কে হারায়নি । হারিয়েছিল একটি সৈন্যদলকে।
East Yorkshire Regiment -a জীবনকথা পেলাম ইন্টারনেন্ট সূত্রে।
জন্ম 1685 , মৃত্যু 1958 ।
ওই রেজিমেন্টের যাঁরা সৈন্য তাঁরা অবসর সময়ে ওদেশের ফুটবলকে পরিত্যাগ করতে পারেননি। তারা নিজেদের মধ্যে ফুটবলটিম বানিয়ে খেলাটাকে জারি রেখেছিল। এভাবেই I F A শিল্ডে খেলা। এই I F A -এ শিল্ডে যেসব বিদেশি দল যোগ দিত তাদের সকলেই বিভিন্ন কাজের সূত্রে কলকাতায় এসেছিলেন। তাঁরা কেউই ফুটবলার ছিলেন না। এঁদের কাছ থেকে যে ফুটবল বাঙালিরা শিখেছিলেন তাকে আমি ভুল-ফুটবল বলি।1911-র 11 কিংবা 13 বছর পর ফুটবল খেলা শিখেছিল ব্রাজিল। অনেক পরে ফুটবলে পা দিয়েছিল কোরিয়া ইরান চিন জাপান। তারা সকলে ফুটবলে এগিয়ে গেল , কারণ তারা ফুটবলের কোচ পেয়েছিল , শুরুর দিনগুলিতে। আর পৃথিবীর অন্যতম কোচ অনেক চেষ্টা করেও মিলোভেন ভারতীয়দের ফুটবল শেখাতে পারেননি। সেই ভারতীয় তথা বাঙালিদের ফুটবল নিয়ে সংবাদপত্র হল্লাগুল্লা করে।
সেইসব হল্লাগুল্লা কমানোর প্রয়াস হল কবিতাপাক্ষিক
বা কবিতার একটি নিয়মিত কাগজ। অনিয়মিত-ই কবিতার ঐতিহ্য , এই ঐতিহ্যকে বদলাতেই কবিতাপাক্ষিক। আরো অনেক কথা আগামী পর্ব গুলিতে। পড়তে থাকুন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন