নস্টালজিয়া ২৮
পৃথা চট্টোপাধ্যায়
কয়েকদিন ধরে লেখায় মন বসছে না। এই লেখা আমার অতীতের ঘটনা প্রবাহ হলেও লিখে চলেছে বর্তমানের আমি।মন ভাল না থাকলে কখনো লিখতে পারি না। আমার মন ভাল নেই মানে অনেক কারণে তা হতে পারে। আজ আমাদের ছোট্ট ডালি, আমার ভাই এর পাঁচ বছরের ছোট্ট মেয়েটি যখন জীবন মৃত্যুর সাথে তার ক্ষুদ্র প্রাণটুকু নিয়ে লড়াই করে চলেছে শিশু হাসপাতালে ভর্তি থেকে তখন আমার লেখা আসছিল না। একটু আগে যখন শুনলাম ভালো আছে , ওর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে তখন লেখা এলো।
আমার জীবন বৃত্তে ভাই অনেকটা পরে এসেছে, মানে আমার থেকে অনেকটাই ছোট। আমাদের খুব আদরের ছিল ভাই। আর দুুই বোন ছোটবেলায় বন্ধুর মত বড় হয়েছি। খুব খেলাধূলা করতাম দুই বোনে। আমাদের পড়াশোনা নিয়ে মা বাবাকে কখনো উদ্বিগ্ন হতে হয় নি।খুব সাবলীলভাবে মন দিয়ে পড়াশোনা করতাম। স্কুলে বরাবরই ভাল রেজাল্ট হতো আমাদের। মা কিভাবে যেন বুঝিয়েছিল পড়াশোনা করাটা আমার দায়িত্ব, মারধোর করে হয় না। ভালবেসে পড়তে হয়। আমিও ছোটদের এভাবেই বোঝাতে চেষ্টা করি। মা খুব কড়া শাসনে বিশ্বাসী ছিল, তাই মাকে ছোট থেকেই আমি ভয় করতাম। বোন অবশ্য একটু ডাকাবুকো ছিল, তেমন ভীতু ছিল না। আমরা দুই বোন খেলার সময় নিজেদের নতুন নামে খেলতাম। আমার নাম তখন জুঁই, আর ও করবী। এই নামেই ডাকতাম তখন। দুজনের দুটো অ্যলুমিনিয়ামের বাক্সে পুতুলের সংসার ছিল। তাই নিয়ে আমরা কত কত গ্রীষ্মের দুপুর, বর্ষার সন্ধ্যা, শীতের রাতে খেলা করতাম। আমাদের এই নিজস্ব দেওয়া নাম মা বাবাও অনেকদিন পর্যন্ত জানত না। ভাই হওয়ার পর আমরা খুব খুশি হয়েছিলাম। তখন পড়াশোনার থেকে ভাই এর দিকে মন থাকত বেশি। ওকে একটা ছোট্ট পুতুল বলে আমার মনে হত। খুব তাড়াতাড়ি পড়া করে নিতাম ভাই এর সঙ্গে খেলতে পারব বলে। ভাইকে প্রথম রাখি পরানো আর প্রথমবার ভাইফোঁটা দেওয়ার আনন্দের স্মৃতি আজও মনে আছে। আর এখন যান্ত্রিক জীবনে সবকিছুই কোথায় হারিয়ে গেছে। বড্ড দূর হয়ে গেছে মনে হয় সবই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন