সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
২১২.
কবিতাপাক্ষিক- ৩০০-কে যদি হাফ ওয়ে রূপে চিহ্নিত করি তাহলে একটা তথ্য আরো একবার রিপিট করতে চাইছি। দু-টি তথ্য :
১॥ কবিতাপাক্ষিক ৩০০ পর্যন্ত মোট ১২৭৮ জন কবির কবিতা ছাপা হয়েছিল।
২ ॥ কবিতাপাক্ষিক ৩০০ , এই সংকলনে মোট ৪২১ জনের কবিতা স্থান পেয়েছে।
অর্থাৎ ১২৭৮ --- ৪২১ = ৮৫২ জন কবি -কে জায়গা দেওয়া যায়নি এই সংকলনে।
তাহলে পাঠক-সাধারণ একটা প্রশ্ন তো করতেই পারেন , তাহলে এই ৮৫২ জন কবির কবিতা পত্রিকাতে প্রকাশ করেছিলেন কেন ? আরো এক পা এগিয়ে জিজ্ঞেস করতেই পারেন , কবিতাপাক্ষিক-এর কবিতা নির্বাচন-প্রক্রিয়ায় কিছু ত্রুটি ছিল সম্ভবত। শুধু সম্ভবত বলেই পার পাওয়া যাবে না । ত্রুটি ছিলই।এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার মতো কোনো যুক্তি হাজির করতে অপারগ আমি।
নাসের এবং আমি , এই দুজনই সম্পাদনার মূল দায়িত্ব পালন করে আসছি বা এসেছি। আমাদের সম্পাদনাতেই ১২৭৮ জন কবির কবিতা মনোনীত হয়েছিল এবং প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু সিলেকটেড পোয়েমস এর ক্ষেত্রে এমনটা করলাম কেন !
এই ৩০০ সংখ্যাটি যদি সৌমিত্র রায় এবং কল্যাণ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদনা করত , তাহলে আমার জবাবদিহি -র কোনো কারণ থাকত না । আমি লিখে দিতাম এটা তো সৌমিত্র- কল্যাণ করেছে , ওরা বলতে পারবে কেন বাদ দিয়েছে।
আরো দশ বছর পর যখন নির্বাচিত কবিতাপাক্ষিক প্রকাশিত হবে , তখন সেই সম্পাদক যদি মোট ১০০ বা ২০০ জন কবিকে স্থান দেন সেই নির্বাচিত কবিতাপাক্ষিক - তাহলেও আমার কিছুই বলার থাকবে না। কেননা আমার লক্ষ্য ১০০ বছর পর মাত্র ৩ জন কবি নির্বাচিত হোক বিংশ শতকের বাংলা কবিতার ইতিহাসে। আমি বিশ্বাস করি , দৃঢ়ভাবে মনে করি একটা শতাব্দীতে মোট ৫ জন কবি বেঁচে থাকেন। সেই ৫ -এর মধ্যে ৩ জন কবিতাপাক্ষিক-এর।মাত্র এটুকুই আমার লক্ষ্য।
তাহলে নতুন একটা প্রশ্ন এসে উপস্থিত হয়ে যাবে। সেটি হল তাহলে খামোকা এত এত কবির কবিতা ছাপেন কেন ?
এর একমাত্র উত্তরটি হল : কোন ৩ জন জানি না বলেই ৩০০০ জনের কবিতা ছেপেছি। একটাও ঠিক বললাম না। হয়ত জানি , হয়ত নিশ্চিতভাবে জানি না।
এই দোলাচল থেকেই জোরের সঙ্গে বলতে পারছি না।
আরো একটা কারণ আছে , সেই কারণটি হল 'দল '। যা দলমাদল কামানের মতোই শক্তিশালী। আমাকে ৪০-৫০ জন কবি-কে নিয়ে ঘর করতে হয় । আমি যদি এই মুহূর্তে ৩ জনের নাম ঘোষণা করে দিই তাহলে
৩৭- ৪৭ জন কবি গৃহত্যাগ করবে। ফলে ঘরটাই বা দলটাই অতলে তলিয়ে যাবে।
আমার এই স্বীকারোক্তি থেকে আপনি বলতেই পারেন এই পরিবারের কোন ৩ জন , তা আমার অজানা নয়। আমি এর কোনো উত্তর দেব না । দিতে বাধ্য নয় বলে। কিন্তু এটা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই ৫ -এর মধ্যে ৩ জন কবিতাপাক্ষিক-র বা আমাদের।
কীভাবে এই দৃঢ়তা পেলাম , তার সূত্রটুকু জানিয়ে রাখতে চাইছি। বাংলাকবিতার পাঠক যদি কবিতা -পাক্ষিক প্রকাশের আগে কেমন ছিল সামগ্রিক বাংলা- কবিতা , আর কবিতাপাক্ষিক প্রকাশের পর কেমন হয়েছিল বাংলাকবিতা , কেবলমাত্র এইটুকু বিচার করে দেখলেই আমার দৃঢ়তার সন্ধান পাবেন।
বিচারের মাপকাঠি হব ভাষা এবং প্রকরণ।
ভাবুন। বিচার করুন।
সিদ্ধান্ত আপনার নিজের। আমি এখানে যাত্রাপালার 'বিবেক '- এর ভূমিকায় অভিনয় করছি মাত্র । যাঁর ইতিহাস লেখার কথা তিনিই লিখছেন। আমি বিবেক !
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন