স্মৃতিকথা
এই আমি চরিত্র
নীলাঞ্জন কুমার
(গত মাসের পর)
আমি বাবা মা দুই দিক থেকে দাদু দিদিমার সঙ্গ পাইনি । মায়ের দিক থেকে দাদু মারা গিয়েছিলেন মায়ের বিয়ের আগে , দিদিমা আমাদের জন্মের আগে । ঠাকুমা দেখিনি, তিনি গত হয়েছিলেন ওভারি ক্যানসারে ছোড়দির জন্মের আগে । ঠাকুর্দাকে দেখেছিলাম বোধ হওয়ার আগে । মায়ের দিক থেকে বলতে গেলে , মায়ের দাদু ছিলেন একজন শাস্ত্রজ্ঞ পন্ডিত । যিনি সে সময় একটি পাঁজির উপদেষ্টা ছিলেন । তাঁর গঙ্গায় অন্তর্জলীও হয়েছিল , সেই মৃত্যুর কথা শোনার পর মায়ের ঠাম্মাও দেহ রাখেন । যা সেই সময়ের বড় খবরের কাগজে প্রকাশিত হয়েছিল । চার ভাইবোনদের ভেতরে মা ছিল বড় । দাদু ছিলেন কলকাতার শিপিং কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মচারী , তিনি নাটকও করতেন । ছবি বিশ্বাসের সঙ্গে সখ্যতা ছিল । মা ছিলেন পড়াশোনা গানবাজনাতে বিশেষ পটু । ক্লাস ফোরে তৎকালীন বৃত্তি বা জলপানি পরীক্ষাতে মা বৃত্তি পেয়েছিল । যা সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হয়েছিল । বৃত্তি পাওয়ার ফলস্বরূপ মা ডবল প্রমোশন পেয়ে সিক্সে গিয়ে বসেছিল । তবে তার জন্য মা পরিবারের কাছে সম্মানের বদলে বিদ্রুপ পেয়েছিল বেশি । তারা মাকে ঠেস দিয়ে বলেছিল, কণাকে (মাকে এই নামে ডাকা হত ) দেখছি ওর মা বাবা জজ ব্যারিস্টার করবে । কিন্তু মা তাঁদের মোক্ষম জবাব দিতে পারেনি দাদুর আকাল মৃত্যুর কারণে । অত্যন্ত গরিব অবস্থান ম্যাট্রিক পাশ করার আগে মাকে সারা সংসারে হাল ধরতে হয় । সে সময় মা টিউশনি করে সংসার চালিয়েছে । কিছুকাল রাজেন তরফদারের কাছে গান শিখেও দাদুর মৃত্যুর জন্য ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারেনি । বড় মামা বিয়ে করলেও তাঁর সংসারের প্রতি টান কম ছিলো । বর্তমানে তিনি সন্ন্যাসী জীবন যাপন করছে । সদ্য প্রয়াত মেজমামা বৈদ্যবাটিতে একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতো। রাজস্থান ক্লাবের ফুটবলার ছিলো। ছোটমামা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানি না । মা তাকে নিয়ে কোন কথা বলতো না । তবে এটুকু জেনেছিলাম, দাদুর মৃত্যুর পর লাগামছাড়া হয়ে মামা বদসঙ্গে পড়ে গিয়েছিল । চুরি ছিনতাই করে থানা পুলিশ হয়েছিল । পরে নিজেকে শুধরে নিয়ে কলকাতার কিছু মন্দিরে ও বাড়িতে নিত্য পুজো করতো। পরে এক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ।
সত্যি বলতে কি মায়ের দিক দিয়ে কিছু জানলেও কিন্তু ছোট্ট বয়স থেকে বাবার দিকে তেমন জানতে পারিনি । পরবর্তীকালে তা নিয়ে আগ্রহ জাগেনি । ফলে বাবার দিকটি প্রায় শূন্য অবস্থায় থেকে গিয়েছিল । মাকে মাঝেমধ্যে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে বিষোদ্গার করতে শুনেছি । কিন্তু আমার তাতে কোন কৌতুহল গড়ে ওঠেনি ।
আমাদের চার ভাইবোনদের মধ্যে বয়সের তারতম্য থাকলেও আমি ও ছোড়দি ( যাকে কোনদিন দিদি ডাকিনি, ডাকনাম '' লিলু ' বলতাম) ছিলাম পিঠোপিঠি । ফলে অন্যান্যদের থেকে সখ্যতা ছিল বেশি। বড় দাদা দিদিকে ভয় পেতাম । তারাও তেমন আমায় পাত্তাটাত্তা দিতো না । এভাবে বোধজন্ম হওয়ার বছর দুয়েক কেটে গেল । মাঝেমধ্যে বর্ণপরিচয় আর ধারাপাত নিয়ে বাবা নয়তো মা পড়াতে বসাতো। আমার আধো আধো কথার অআকখ বলা বাড়ির সকলকে মজা দিতো বুঝতে পারতাম । আমার কথার ভেতরে বেশ মজার বিশেষত্ব ছিল, যেমন বলকে বলতাম 'বত', মারবেল গুলিকে বলতাম ' গুই ' । বাবা অফিসে যাবার সময় আমার একমাত্র আবদার ছিল , ' গুই আনবে বত আনবে '। ধোকার ডালনা খুব পছন্দ ছিল, আমি বলতাম ' হা- বড়া ' , এমন কত কি! দিদিরা ' মন মোর মেঘের সঙ্গী ' গানের সঙ্গে নাচ করলে আমিও তাদের সঙ্গে নেচে উঠতাম । পাঁচ বছরে দিদিদের সঙ্গে অলিগন্ঞ্জ প্রাইমারি স্কুলে যেতাম স্কুল স্কুল খেলা করতে । তাকে বলা হত ' ইনফ্যান্ট ' । আমার ' খেলা ' শেষ হলে লিলুর পাশে বসে ওর পড়া শুনতাম ।
ওর সহপাঠীরাও আমাকে বেশ পছন্দ করতো।
খুব আন্তরিক
উত্তরমুছুন