অনুগল্প
অতিমারি
বিনোদ মন্ডল
কেষ্টপদ'র দোকানে দাঁড়ালেই নানা স্বাদের দুঃখ আমার চারদিকে ভনভন করে যায়।
তবু দাঁড়াই। কেন না, আমার আপাত-নিরাপদ বাঁচার সঙ্গে
কেষ্টর কষ্টকর বাঁচার প্রতিতুলনা করে মন ঢেঁকুর তুলতে পারে।
আট বাই দশ ফুটের দোকান, বাজারে। সেখানে সকালে গুচ্ছের দুধ, দই, রুটি বিক্রি হয়। সঙ্গে কেক,বিস্কুট, চা-পাতা,চানাচুর। ইপি নুডলসের পাশে শুয়ে থাকে পাস্তা কিংবা
লেজ্। কুড়কুড়ে। কাচের আলো ঝলমল কুলুঙ্গিতে সাবান, সেন্ট, ব্রাশ, পেস্ট। এখানেই শেষ নয়। একটা দুই বাই আড়াই ফুট টেবিলে স্বপ্ন
বিক্রি হয়। কেষ্ট আবার ব্যঙ্গ করে বলে ডি এ নেই তো কী আছে, আমার কাছে ডিয়ার নিন। লটারির কাউন্টার। মাঝে মাঝে গাঁদার মালায় সেজে ওঠে, প্রাপ্তির দাক্ষিণ্যে।
কেষ্ট থাকে একটা মন্দিরের লাগোয়া এক চিলতে ভাড়া বাড়িতে। মা-বউ অসুস্থ। ছেলেটা বি এ ফেল। টো টো করে ঘুরে বেড়ায়। খেয়ালখুশি মতো দোকানে বসে। নিজের সুগার। ওষুধ -ডাক্তারে জর্জরিত কেষ্ট। দোকানঘরের
দেদার দেনা। কিস্তি ফেল আছে কয়েকটা।
এপ্রিল থেকে অক্টোবর প্রায় গৃহবন্দি ছিলাম। নভেম্বরে সামান্য বের হলাম। ডিসেম্বরের শুরুতে একদিন পথে দেখি ওর ছেলে কুনালকে। উভয়ের মাস্ক থাকায় ও আমায় চিনল না। কুনাল তার পাশেই মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা বন্ধুকে বলছে-- আব্বে, দেশের কে কোথায় কতো কামালো, তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। করোনা ছিল বলে না ক' মাসে বাপ ব্যাটা প্রায় বিশ লাখ কামালাম। কেউ প্রাইসরেট দ্যাখেনি, দাম দর করে নি। বেঁচে থাক লকডাউন। বেঁচে থাক্ মন্দা। মহামারি জিন্দাবাদ !
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন