কিছু বই কিছু কথা ২০৯। নীলাঞ্জন কুমার
কুয়াশা ঘেরা রাস্তার শব্দ । অদীপ ঘোষ । পাণ্ডুলিপি । পঁচিশ টাকা ।
কবিতা যে কতটা সহজ সরল হতে পারে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ যদি পেতে চান তবে অদীপ ঘোষের 'কুয়াশা ঘেরা রাস্তার শব্দ ' পড়ে নেওয়া উচিত । নিত্যাকার ঘটনাবহুল দিনাতিপাতের ভেতর থেকে খুঁড়ে খুঁড়ে তিনি অনায়াসে দক্ষতার সঙ্গে বের করে আনেন পার্থিত কবিতা । তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ: ' কসাইও কোনদিন শনির কেমন দশা বুঝতে চায়নি/ সে শুধু ঘুমের মধ্যে মাঝে মাঝে ছাগলের আর্তস্বর শোনে/ তার স্বপ্নে মাঝে মাঝে ঝুলন্ত পাঁঠারা দোল খায় । ' ( ঐতিহ্য ') , 'দেখবেন, শহরের মানুষেরা বরফ বেশি পছন্দ করে/ বেসিনের কল খুলে অনায়াসে কবিতার গভীরে ঢুকিয়ে নেয় । ' ( ' বরফ প্রিয়তা ')।
অদীপের এই পাঁচ নম্বর বইটির সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে গিয়ে বুঝি কবির মনন কতখানি কবিতা সম্পৃক্ত । প্রকৃত কবির মতো কোন বাড়তি উল্লাস নেই , তার চিন্তার ভেতর দিয়ে যেভাবে ব্যতিক্রমী দিক উঠে আসে
তার থেকে হাজারো প্রশংসা কম বলে মনে হয় । পংক্তি হিসেবে তুলে ধরা যায়: ' কয়েকটা শুকনো কাগজ শুধু পিছু পিছু ছুটে যাচ্ছে/ একটা সম্পূর্ণ কবিতার প্রত্যাশায়।' ( ' ফেরা ') , ' এক সময় ঈশ্বর বাধ্য হয়ে মারা যান/ ফাঁক পেয়ে মানুষ ভগবান বনে যেতে থাকে ।' ( ' ঈশ্বরের মৃত্যু ')।
এই কবিকে যত পড়া যায়, তত নতুন ভাবনা গড়ায় গভীরে । কখনো কখনো ভয় হয়, এই বুঝি সরে গিয়ে উচ্চগ্রামে কিছু লিখে ফেললেন । কিন্তু তা ঘটেনি । ফলে সুন্দর আবহ গড়ে তুলেছেন বইটিতে তিনি । তাঁর কবিতার থেকে তরুণেরা শিখে নিতে পারেন সরল কবিতার ভেতরে রহস্যসন্ঞ্চারের কৌশল । কবিকৃত প্রচ্ছদ পরিচালনায় তিনি সহজ ও সরলের ভেতর দিয়ে পরিব্রাজকের স্বপ্ন ব্যক্ত করেন। তাঁকে শাবাশি দিতে হয় ।
এমন সৎ পাঠক আজ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর
উত্তরমুছুন