সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
১৮৪.
গতকাল শান্তিনিকেতনের মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৫০টি পরামর্শ-র কথা লিখেছিলাম কপা-র ২৭৬ সংখ্যার কথার ফাঁকে। আর আজ বলছি কপা২৭৭ সংখ্যার কথা। এই সংখ্যাটির দুটি পর্ব ছিল। প্রথম পর্ব নোবেল প্রতিক্রিয়া । আমরা এখনো নোবেলচুরি যাওয়ার কথা ভুলে যাইনি। সেই চুরির কিনারাও করতে পারিনি। তবু সেই সময় আমাদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল তা জানাতে আমাদের হয়ে শান্তিনিকেতন থেকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন :
ড : জনকঝঙ্কার নার্জারী , মনুজেশ মিত্র , লালা রামানন্দ প্রসাদ , শ্যামলী খাস্তগীর , রুদ্র কিংশুক ,অহনা বিশ্বাস , মনীষা , সজল দে , খায়রুল আলম।
ঝঙ্কারদা শুরু করেছিলেন ---' নোবেল পুরস্কারের পদক চুরির খবরে যেমন খুব একটা অবাক হইনি, তেমনি পুলিশ , সি আই ডি এবং সি বি আই-এর অসফলতাতেও তেমন আশ্চর্য হইনি ।'
আর শেষে বলেছিলেন : ' একটি সুপরিকল্পিত মূল সংগ্রহশালা ঘরের প্রয়োজনীয়তা অতি আবশ্যক এবং জরুরি '।
জানিনা , এখনো যথাযথ সংগ্রহশালা করা গেছে কিনা !
কবি মনুজেশ মিত্র লিখেছিলেন : ' তাঁর নোবেল-পদক ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী অপহৃত হওয়ার মধ্যে এক অশুভ সংকেতই সূচিত হচ্ছে যেন। '
লালা রামানন্দ প্রসাদ বলেছিলেন : ' বাঙালির একটা জায়গা ছিল--- রবীন্দ্রনাথ। সেটাও আজ নষ্ট হয়ে গেল।'
আমাদের প্রিয় শ্যামলীদি , শ্যামলী খাস্তগীর লিখেছিলেন : ' ... সেখানে এক ছিঁচকে চোর সোনাদানার লোভে এ কাজ করলে খারাপ লাগলেও দোষ দেওয়া যায় কি ? কারণ রবীন্দ্র-ব্যবসায় তো সকলেই করে খাচ্ছে। এর জন্য আমরা আশ্রমবাসী সবাই দায়ী '।
শ্যামলী আপনি আমার মনের কথাটি বলেছিলাম। আপনাকে ধন্যবাদ জানানোর লিঙ্কটা হঠাই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।
রুদ্র কিংশুক জানিয়েছিল : ' তবে এ লজ্জা এমন কিছু বেশি নয় যা বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনিক কাজ-কর্মের সঙ্গে যুক্ত মানুষজনের হজম হবে না। কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থানুকূল্যে বিশ্বভারতী চির দুষ্কৃতি কামধেনু। দোহনের সুযোগ কে আর হাতছাড়া করে।'
অহনা বিশ্বাস জানিয়েছিল : ' আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষ শুধু নোবেল প্রাইজ প্রাপক হিসাবে জানে বলেই সেটা হারানো নিয়ে এত হৈচৈ। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের ভাবনাই যে শান্তিনিকেতন থেকে চুরি হয়ে গেছে। '
মনীষা বলেছিলেন : ' এতদিনে জানলেম আমাদের জন্য রবীন্দ্রনাথের একমাত্র উত্তরাধিকার ছিল নোবেল মেডেলটি। ( ইহা কি কলোনিয়াল হ্যাংওভার --- পণ্ডিতেরা বলতে পারেন। ) কারণ " মুক্ত " রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কেচ্ছা খুঁজে বেড়ানো লেখক , রবীন্দ্রগানের ভুল গায়নে শব্দ বদলানোয় কুড়োনো গায়ক- কি ... ... '
সজল দে লিখেছিলেন : ' অনেক বছর আগে যখন সোমনাথ হোড়ের ব্রোঞ্জের ভাস্কর্য চুরি যায় কলাভবন থেকে, তখন এত হইচই হয়নি। অথচ রবীন্দ্রনাথের নোবেলপদক চুরি যাবার পর বলা হচ্ছে এটা জাতীয় লজ্জা। আমার মনে হয় , বাঙালি কাচ আর হিরের পার্থক্য জানে না। এটা জাতীয় লজ্জা। '
সাবাশ সজল ! বাঙালিদের গায়ের চামড়া কতটা পুরু তার তুলনা টানতে গিয়ে আমি কোনো প্রাণীকে উপস্থিত করে তাকে লজ্জা দিতে চাইলাম না।
খায়ারুল আনাম , ' সাপ্তাহিক বীরভূমের কথা ' -র সম্পাদক , - এর রচনাটি বেশ দীর্ঘ। এই রচনার এক জায়গায় খায়ারুল লিখেছিলেন :
' ... ... এসব তো আপাতদৃষ্টিতে বাইরের লোকদের চুরির ঘটনা। বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবনের কর্মীর বিরুদ্ধেই তো চুরির অভিযোগ রয়েছে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে তথ্যভিত্তিক জানানো সত্ত্বেও তারা কি কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন ? '
এখানে খায়ারুল যে প্রশ্নচিহ্নটি রেখেছিলেন তার উত্তরও আমাদের অজানা নয়।
এখন আবার বাইরের চোর বনাম ভেতরের চোরদের একটা দড়ি টানাটানি চলছে। আমরা আমাদের পুরোনো একটা লোককথা আর একবার ঝালিয়ে নিই :
চোরে চোরে মাসতুতো ভাই !
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন