কিছু বই কিছু কথা ২০০ । নীলাঞ্জন কুমার
অতিকথনের রাত্রি । সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায় । কবিকন্ঠ প্রকাশনী । কুড়ি টাকা ।
' পুরোনো চিঠির মতো, বিক্ষত/ প্রাণ এক, জেগে আছি দূরে/ নির্জনে ' ( ' খড় ') , ' তোমার কথার মাঝে আশ্চর্য পাখি/ চোখের মাঝে কল্পতরু পাপ ' ( মেঘবদল ') -এর মতো উজ্জ্বল পংক্তি যখন একজন তরুণ কবি লিখে চলেন তাঁর কাব্যগ্রন্থে , তখন তাকে বড় আপন বলে মনে হয় । সেই অবস্থা দাঁড়িয়েছে উক্ত পংক্তিগুলির কবি সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ' অতিকথনের রাত্রি ' নামে কাব্যগ্রন্থটিকে পড়ে , যা প্রকাশ হয়েছিল বারো বছর আগে । আসল কথা হলো, কবিতা বুঝতে গেলে যে জাত প্রয়োজন , লিখতে গেলে যে অসাধারণত্ব দরকার তা এই কবির ভেতরে বহমান বলতেই হয় । তাই, ' ভেসে যাক প্রেমিকের মতো, সন্তানের মতো/ অনন্তকাল । ' ( কাঠজন্ম ') , ' তোমার আমার মাঝে/ বয়ে চলে মিসিসিপি, বয়ে চলে মার্চিং সং ' ( 'এষা ') -র প্রেমোচ্চারণ মগ্ন হয়ে পড়লে সচেতন পাঠককে সমৃদ্ধ করবেই ।
সবচেয়ে বড় কথা কবির কোন আদিখ্যেতা নেই উচ্চারণে । জাগলারি আর ওপরচালাকিরও দেখা নেই । যেন ভেতরে থেকে অবিরাম গড়ে উঠেছে স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাসের মতো । তাই কত স্বাভাবিকভাবেই তিনি দুরূহ শব্দ অবলীলায় লেখেন:' বিকেল বেলায় এ তরণী/ ভাসতে পারে দু-চার আনায়/ আগলে রাখা জিন্দেগানি । ' ( ' কৃষ্ণকলি ' ) তন্নিষ্ঠ
করে ।
সমালোচনা মানে কেবলমাত্র ভুল ধরা ও তিরস্কার করা যারা মনে করেন তা যে ভুল, তা এই কাব্যগ্রন্থের মতো কাব্যগ্রন্থ হলে বুঝিয়ে দিতে অসুবিধে হয় না । কবি প্রশংসাযোগ্য তখনই হন যদি খুঁজে পাওয়া যায়:
' করুণা ও নিয়তির মাঝে/ একা একা বেঁচে থাকে বৃদ্ধ শামুক ।' ( ' নষ্টচিত্র ' ) , ' দেখো তোমার স্তন খুবলে খাচ্ছে/ হিসাবি সময় ' ( ' নগরিয়া ') র মতো পংক্তি । প্রচ্ছদ তাকিয়ে থাকার মতো । কবিতার বইয়ের প্রচ্ছদ কিরকম করা যেতে পারে তার শিক্ষা এর থেকে নেওয়া যেতে পারে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন