কিছু বই কিছু কথা ২০৭ । নীলাঞ্জন কুমার
ওগো দুর্বা কিছু ঘাস। মুরলী দে। সমাকৃতি প্রকাশ । দেড় টাকা ।
অতিক্ষীণতনু কাব্য পুস্তিকার ভেতরে এগারো খানি কবিতা এগারো মিনিটে পড়ে ফেলার পরও তার রেশ এগারো দিন থেকে যাবার মতো করে অনায়াসে লিখে যেতে পারেন কবি মুরলী দে । বাঁকুড়া জেলার এই কবির পরিচয়ে কলকাতা কলকাতা গন্ধ না থাকার কারণে অনেকেই চিনবেন না, কিন্তু একবার যদি কবিতায় চেনা যায় তবে কবিতা পাঠক তাঁকে বিশেষ জায়গা দিতে বাধ্য হবেন । যেমন রেখেছি আমি । তার সমস্ত অমোঘ পংক্তি মাত্র দেড় টাকার বই ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত 'ওগো দুর্বা কিছু ঘাস ' -এর ভেতরে যা স্থান পেয়েছে সেগুলোর কয়েকটি: ' ওগো অনন্ত , আগুন থেকে/ উঠে এসে, অনন্ত জড়াও জীবন! ' ( ' অনন্ত ') , ' আমি দাঁড়িয়ে থাকি, / দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বিলিয়ে দিই ছায়া/ কিন্তু নরম আশা ঝিকমিক কাঁপে ..... ' (' কিছু নরম আশা ' ) , ' রাত বাড়ে আরছা অন্ধকারের শেষ নেই/ দূরে নদীর বালি কাশফুলের স্তুপ/ একা,বড়ো একা , ভেসে যাচ্ছি শাদার উপর ' ( ' একা ') -র মতন বুকেতে ছলকে ওঠা উচ্চারণগুলি ।
কবির এগারটি প্ল্যাটিনাম কবিতার ভেতর দিয়ে কবি ফুটিয়ে তোলেন তাঁর চিত্রময়তা এক পরমাশ্চর্য অনায়াস চলাচলের মাধ্যমে । সব বোঝা যায় কিন্তু এই বোঝার ভেতর কোথা থেকে ভালোবাসার দ্যোতনা আমাদের গভীরে আদর করে দিয়ে যায় । অথচ কত সহজে বাস্তবতার নকশিকাঁথা তিনি বোনেন :
' সন্ধ্যে হলে কেবলই একটি লন্ঠন, / সন্ধ্যে হলে সামান্য কিছু ভাত, / সন্ধ্যে হলে ছেলে ঘুমোলে/ সন্ধ্যে হলে পাড়া জুড়োলে/ কত দুঃখ, কত দুঃখ সারারাত ! '
( ' সন্ধ্যে হলে ' ) আমরা পুষে ফেলি পরম মমতায় লাইনগুলো । তাই এগারোটি কবিতা যদি তুলে ধরে এই আলোচনায় কোন কথা না বলে আলোচনাটি শেষ করতে পারতাম তবে গভীর আনন্দ পেলাম । কবি মুরলী দে সেই জাতের কবি যাঁর ক্ষেত্রে কোন আলোচনা যথেষ্ট নয় । উৎপল চক্রবর্তীর প্রচ্ছদে নামাঙ্কন কিছুটা দুর্বোধ্য, কবির কবিতার মতো সহজভাবেই করতে পারতেন ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন