সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
২১০.
কবিতাপাক্ষিক ৩০০ প্রকাশিত হয়েছিল ২০ মার্চ ২০০৫ । বহরমপুরের ঋত্বিকসদনে। যার কথা গত কয়েক দিন ধরে লিখলাম।
এই সংখ্যাটি আলাদা করে গ্রন্থাকারেও প্রকাশ করা হয়। এর উৎসর্গপত্রটি একবার দেখানো যেতে পারে :
বাংলাকবিতা পত্রিকার প্রথম এবং প্রধানতম রূপকার
বুদ্ধদেব বসু-কে
পরম শ্রদ্ধায়
প্রথম সংখ্যাতে যেমন বুদ্ধদেব বসু-র প্রতি আনুগত্য ছিল , ৩০০ তম সংখ্যাতেও সেই আনুগত্য অটুট ছিল। আগাম বলে রাখি যতদিন বেঁচে থাকব , বুদ্ধদেব বসু-র অনুগত থেকে যাব।
ওই ৩০০ সংখ্যায় আমার সম্পাদকীয় লেখাটির শিরোনাম ছিল : কথার কথা ।
বা কথার পিঠে কথা। কথার ধারাবাহিকতা-ই ইতিহাস। সেই ইতিহাস-কে সম্মান জানিয়ে আমি লিখেছিলাম :
' একবার যে মানুষ নিজেকে স্বাধীন ভেবেছে তার পক্ষে কোনোদিনই স্বাধীনতা বিসর্জন দেওয়া সম্ভব নয়। '
বা তখন বলতে চেয়েছিলাম ' স্বাধীন মানুষকে পোষ মানানো যায় না।
এই কথার সমর্থনে ঠিক কী লিখেছিলাম সেটাও পড়া হোক :
' আমরা যদি শাসকদলের অনুগামী হতাম অনেক আগেই আমাদের রবীন্দ্রসদনে সংবর্ধনা জানানো হত, আমরা যদি বিরোধীদলের সমর্থক হতাম তাহলে টাউন হলে আমাদের সংবর্ধিত করা হত।শাসকদলের অনুগামী হওয়া কিংবা বিরোধীদলের সমর্থক হওয়া খুব একটা দুরূহ কাজ নয়। কবিতাপাক্ষিকের আগে আমার যে অতীত ছিল , সেই অতীতের প্রথম পর্বে অর্থাৎ ১৯৬৭-র আগে তৎকালীন শাসকদলের বিরোধিতায় ছিলাম, দ্বিতীয় পর্বে ৬৭-র পর ছিলাম তৎকালীন শাসকজোটের সমর্থনে। কাজেই দুটো রাস্তাই আদৌ অপরিচিত নয় আমার কাছে '।
এই লেখাটা লিখেছিলাম ১৩ .০৫. ২০০৫ -এ । পরবর্তীতে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর মনোভাবের বদল ঘটেছিল। তারা হয়ে উঠেছিল দাম্ভিক , অহংকারী তথা স্বেচ্ছাচারী। আমরাও আমাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের লড়াকু মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম।
আর এখনকার অবস্থান , ব্যক্তিগতভাবে আমার, তা কারো অজানা নয় । সেসব পরে লেখার অনেক সময় পাবো। এখন লিখছি কবিতাপাক্ষিক ৩০০ -র কথা , কথার কথা। যেখানে লিখেছিলাম :
' আর মাত্র ২০০ সংখ্যার পরে কবিতাপাক্ষিক ৫০০ প্রকাশিত হবে। ততদিনে আমার ডানায় অনেক নতুন পালক গজাবে , আপনারা দেখবেন তখনও আমি এরকমই থেকে যাব '।
আরো লিখেছিলাম :
' কবিতাপাক্ষিক ১০ বছর শীর্ষক সংকলনটির প্রাথমিক প্রস্তুতি ছিল , মূলত সেটিকে update করেই কবিতাপাক্ষিক ৩০০ করা হল। কবিতাপাক্ষিক-এ সেই সময় পর্যন্ত ১২৭৮ জন কবিতা লিখেছেন , ১ - ১০০ সংখ্যার সম্মিলিত সূচি কিনতে পাওয়া যায়। এই সংকলনে মাত্র ৪২১ জনের কবিতা নেওয়া গেল। একটা কথা সততার সঙ্গে বলে রাখা ভালো, সম্পর্ক এবং ব্যবহারকে গুরুত্ব দেওয়া কবি নির্বাচনে, এ কারণে কাঙ্ক্ষিত বহু নাম বাদ পরেছে। কবি হিসাবে সেরকম স্বীকৃত নন এরকম প্রায় ১০০ জনের বহু কবিতা জায়গা পেল না যেগুলি এই গ্রন্থের সংকলিত কবিতার সমমানের, সমতূল্য। নিরপেক্ষ থাকা শিখিনি , এখানেই আমার যাবতীয় ত্রুটি এবং বিচ্যুতি। '
ত্রুটি এবং বিচ্যুতির কথা স্বীকার করাটাকে প্রশংসা করা যেতেই পারে। কিন্তু সময় বা মহাকাল অনেক কিছু মুছে দেয়। এখন মনে হচ্ছে সে সময় কোনো বিশেষ কারণে কয়েকজন বিশিষ্ট কবিকে বাদ দেওয়াটা কেবল মাত্র আমার একগুঁয়েমির জন্য। এখন মনে হচ্ছে এদের বাদ দেওয়াটা একটা ঐতিহাসিক ভুল। এরজন্য আমি এখন ক্ষমাপ্রার্থী।
ধরা যাক অলোক বিশ্বাস কপা -র প্রথম সংখ্যা থেকে লিখেছে বা অনিন্দ্য রায় ছাত্রাবস্থা থেকে কপা-তে লিখে এসেছে। কবিতা-কে update করার প্রকল্পে এদের অবস্থান কারো থেকেই কম নয় , এমনকী আমার থেকেও কম নয় , এই দুজন সহ আরো কয়েক জনের বাদ যাওয়াটা সম্পাদক হিসেবে আমার ব্যক্তিগত ভুল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন