নস্টালজিয়া ২২
পৃথা চট্টোপাধ্যায়
এখন হেমন্ত। সদ্য শেষ হলো আমাদের শ্রেষ্ঠ শারদীয় উৎসব দুর্গাপুজো। কেমন যেন উৎসাহহীন উৎসবের মধ্যে কাটল এবারের পুজো। অতিমারীর পরিস্থিতিতে এখন আন্ লক পর্ব চলছে। এই করোনা আমাদের অনেক নতুন কিছু শেখালো। পুজোর কদিন ছুটির পর এখন আবার অন লাইনে পড়াশোনা শুরু হলো। লক্ষ্মী পুজোও হয়ে গেল চড়া বাজার দরের মধ্যেই শুনশান ভাবে। এইসময় আমার খুব মনে পড়ে ফেলে আসা ছোটবেলার দিনগুলো। একমাস পুজোর ছুটি থাকতো আমাদের তখন। কালীপুজো দীপাবলির পর স্কুল খুলতো। কদিন স্কুলের পরেই হতো বার্ষিক পরীক্ষা। উজ্জ্বল প্রজাপতির ডানার রঙে চঞ্চল ছিল তখন উৎসবের রঙ। নতুন জামার গন্ধ লেগে থাকত গায়ে, মনে ছড়িয়ে থাকত কোজাগরীর আলো। সদ্য কিশোরী কাল। পুজোর প্যান্ডেলে বাজতে থাকা পুজোর গানগুলো ... কিশোর কুমারের 'আমার পূজার ফুল ভালবাসা হয়ে গেছে', মহম্মদ রফির , 'পাখিটার বুকে যেন তির মেরো না' , আশা ভোঁসলের ' তোমার ঐ ঝর্ণা তলার নির্জনে' মনে গুনগুনিয়ে সদ্য অনুরণন তুলতে শুরু করেছে। কী যেন পেতে চায় মন তা মন জানত না ! এ এক অপূর্ব মুগ্ধতা ছিল আমার।
চিরকালই প্রকৃতির সাথে সখ্যতা ছিল। প্রত্যেকটি ঋতুর পৃথক সৌন্দর্য আমি খুব ছোট বেলা থেকেই অনুভব করতাম। হেমন্তের হালকা হিমেল বাতাসে কুয়াশার চাদরে মোড়া দিনগুলো কোথায় যেন হারিয়ে গেছে আজ। আমাদের বাড়িতে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো হতো না। ঠাকুমা বলতো ঐ দিন কোনো নবজাতক আমাদের পরিবারে জন্মগ্রহণ করলে লক্ষ্মীপুজো করা যাবে। অধিকাংশ বাড়িতে খুব ধুমধাম করে মা লক্ষ্মীর পুজো হতো। পাড়ার অনেকের বাড়িতে আমাদের পুজোর নিমন্ত্রণ থাকতো।প্রথমদিকে যাদের বাড়িতে যেতাম সেখানে ফল প্রসাদ খেয়েই পেট ভরে যেত। অনেক রকম নারকেল নাড়ু করত এই পুজোয় সবাই। তাছাড়া লুচি, খিচুড়ি, তরকারি, ভাজাভুজি, চাটনি, পায়েস। কাদের বাড়িতে কী প্রসাদ খেতাম সেসব এখনও মনে পড়ে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন