সৌমিত্র রায় -এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
১৮৬.
অনেক সাফল্যের কথা বলা হল । বলা হল বড়ো গলায়। কিন্তু অসাফল্য বা ব্যর্থতার কথাও মাথা উঁচু করে বলা উচিত ।
আমার একটা বাসনা ছিল ' কবিতাচর্চাকেন্দ্র ' নামক একটি প্রতিষ্ঠানের । যেখানে রেগুলার কবিতার ক্লাস হবে। তার সিলেবাস থাকবে। শিক্ষক থাকবেন। ইচ্ছুক ছাত্র থাকবেন। আর থাকবে একটা পূর্ণাঙ্গ লাইব্রেরি। গবেষণার কাজ চলবে সারাবছর।
আর এসবের জন্য প্রথম চাই এক টুকরো জমি। আর এই জমিটা কলকাতা থেকে কিছুটা দূরে হতে হবে। তো আমাদের জমির অভাব নেই । আমাদের দেশের বাড়ি কাদাকুলি। আর কাদাকুলির নতুন পুকুরের লাগোয়া উৎপল চক্রবর্তীর অভিব্যক্তি। অভিব্যক্তির পাশেই পুকুরপাড়ে তৈরি হবে কবিতাচর্চাকেন্দ্র। জায়গা নির্বাচন করা হল। অনেকেই ব্যক্তিগত দান দিলেন। বোঝা গেল টাকার অভাব হবে না।
বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হল। আমাকে যাঁরা খুব বড়ো সংগঠক মনে করেন। তাঁরা জানেন না আমার ব্যক্তিগত আবেগ ছাড়া আর কিছুই নেই । আমি মনে করি আমি যাবতীয় কাজ নিমেষেই সম্পন্ন করতে সক্ষম। এটিই আমার সব থেকে বড়ো দোষ। আরো একটা কল্পনা আমার থাকে । সেটি হল রবীন্দ্রকে অনুসরণ করা। ক্যালেন্ডারের বছরটাকে ভুলে যাওয়া একটা অসুখ। রবীন্দ্রনাথের আমলে উনি প্রথম বাড়িটা করেছিলেন মাটির। আমিও সিদ্ধান্ত নিলাম প্রথম বাড়িটি মাটির হবে। এই সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল। এখন প্রকৃত অর্থে মাটির বাড়ি একটি অবলুপ্ত এপিসোড।
বাড়ি তৈরি হল ।দেওয়াল গাঁথার কাজ ।ইঁট গাঁদা নয়। মাটির ওর মাটির ছিয়া। দরজা-জানলা হল লোহার। গ্রিলের। মাঝে মাঝে কাদাকুলি যাতায়াত চলতে থাকল। ঘরের ছাদ হবে খড়ের। এটাও ছিল মারাত্মক ভুল। শাখামৃগের কথাটা কীভাবে যে ভুলে গিয়েছিলাম ! সবটাই আমার একার মূর্খামি। সামনে বাগান করা শুরু করলাম। পাকাপোক্ত বাউন্ডারি ওয়াল না দিয়ে বাগান করার এই সিদ্ধান্তটিও ভুল। ভেবেছিলাম শুরুটা এভাবেই হোক। ক্রমশ সামনের দিকে একটি চারতলা বাড়ি তৈরি হবে। কোন ফ্লোরে কী থাকবে সেসবও রেডি। গ্রাউন্ড ফ্লোরে অফিস, লাইব্রেরি। দোতলায় ক্লাস রুম।তিনতলা এবং চারতলায় থাকার ব্যবস্থা।
কবিতাচর্চাকেন্দ্র-র প্রথম বাড়িটির নামকরণ করা হল
' মাদল ' ।আর সিদ্ধান্ত নেওয়া হল :
১৫ জুন২০০৪ ¤ জ্যৈষ্ঠ সংক্রান্তি১৪১১
কবিতাচর্চাকেন্দ্র-র
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন মান্যবর শঙ্খ ঘোষ।
স্বর্ণচম্পক বৃক্ষরোপন করবেন প্রভাত চৌধুরী।
সকাল ১১ টায়
' মাদল ' সংলগ্ন নতুন-পুকুরপাড়ে
' অভিব্যক্তি ' -র পাশের প্লটে
কাদাকুলি ॥ ছান্দার ॥ বাঁকুড়া
কবিতাপাক্ষিক-এর
১১ বছর পূর্তি উপলক্ষে
কবিতাউৎসব
দুপুর ১টায়
প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষণ প্রশিক্ষণালয়
ছান্দার॥ বাঁকুড়া
সকলেই আমন্ত্রিত
এই বিজ্ঞাপনটি কবিতাপাক্ষিক -এর ব্যাক কভারে ছাপা শুরু গিয়েছিল পয়লা মে২০০৪ সংখ্যা থেকেই।
আগামীকাল থেকে শুরু করবো সেই উৎসব-কথা-র দিনলিপি।
দিনলিপি শব্দটিতে আপত্তি থাকলে ডাইরি বা ডায়েরিও মনে করতে পারেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন