সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
১৮২.
গতকাল কবিতার কিয়স্কটি নিয়ে গিয়েছিলাম শিবথানে , চড়কগাছের সামনে। তারপর যা লিখেছিলাম , তা পড়ুন :
' সেদিন সন্ধের মুখে কালবৈশাখী আর তুমুল বৃষ্টিপাত। প্রথমে ঢাকিরা ঢাক নিয়ে শিবথান পরিত্যাগ করল, তারপর ভোক্তেরা, যাদের এখানে সন্ন্যাসী বলা হয়। কিন্তু কবিরা তাদের কিয়স্ক ধরে দাঁড়িয়েছিলেন, এক ইঞ্চি নড়েননি। সামনের দিকে সুব্রত চেল, পেছনের দিকে আমি আর আমার ভগ্নীপতি কান্তি লাহা দাঁড়িয়েছিলাম কিয়স্কের স্ট্যান্ড ধরে। পাকা আটচালার এক কোণে হয়েছিল কিয়স্কটি। বৃষ্টি থেকে মাথা মাথা বাঁচাবার জন্য সবাই ঢুকতে চাইছিল আটচালার ভেতর। কিয়স্কের সাইডের কাপড় প্রায় ছেঁড়ার উপক্রম, খুলে দিতে বাধ্য হয়েছিলাম। বৃষ্টি থামার পর যখন কদমগাছ ফুটছে ( কদমগাছ এক-ধরনের বাজি ) , তখন কিয়স্কের ভেতরে ক্যাশমেমো কাটছেন রাজকল্যাণ চেল। আর ক্রেতাদের কেনা বই বা ক্যাসেটে স্বাক্ষর করে চলেছি আমি। এই প্রাপ্তিই আমাকে আরও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার রসদ জোগাবে।আমি জানি মান্যবর শঙ্খ ঘোষের সুপারিশে দেজ থেকে আমার শ্রেষ্ঠ কবিতা প্রকাশিত হবে না বা সুনীলদার সুপারিশে আনন্দ থেকে কবিতার চটি বই।কিন্তু আমার বই বিক্রির সংবাদ যাঁরা রাখেন প্রকৃত তথ্য জানেন ।
২৫শে বৈশাখ থেকে ১৫ দিন কলকাতার ১৫টি অঞ্চলে কবিতার কিয়স্ক রাখা হবে। আপনারা দেখবেন যতই বৃষ্টি হোক যতই ঝড় হোক আমাদের কিয়স্ককে টলাতে পারবে না, আমরা ঠিক মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকব।'
এরপর কয়েকটি প্রতিক্রিয়ার কথা লিখেছিলাম, এক থেকে পাঁচ । এখন আমি এই ৫ টি পয়েন্ট সংক্ষেপে জানাতে চাইছি । পড়ুন সেদিনের স্পর্ধাকথা :
১ ॥ একটি বাণিজ্যিক পত্রিকায় কবিতাপাক্ষিক প্রকাশের আগে তরুণদের সুযোগ কম ছিল। ছয়ের মধ্যে খুব বেশি হলে দুই। পরে এটা ছয়ে ছয় হয়ে যায়।কারণ সমস্ত প্রান্তের তরুণতম কবিরা কবিতাপাক্ষিক- ছাতার নীচে সমবেত হচ্ছিল। এটাকে ভাঙার প্রয়োজন ছিল ভারপ্রাপ্ত কর্মীর।
২ ॥ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের রূপচর্চার পত্রিকায় হঠাৎ করে কবিতা ছাপা শুরু হল। কবিতাপাক্ষিক-এর গর্ভে -জাত আরো কিছু কবিকে জায়গা করে দেবার জন্য।
৩ ॥ পাঁচের দশকের বিশিষ্ট পত্রিকা কোমা-য় আচ্ছন্ন কৃত্তিবাস- কে নতুন করে বাজারে ছেড়ে দেওয়া হল। কী এমন প্রয়োজন পড়েছিল !
হ্যাঁ , প্রয়োজন একটা ছিলই। পোস্টমডার্ন চিন্তা ও চেতনার সঙ্গে তরুণতমদের আকর্ষণ থেকে মুক্ত করার জন্য খুবই জরুরি ছিল কৃত্তিবাসের কোমামুক্তির।
৪ ॥ কবিতাপাক্ষিক প্রকাশের পর বেশ কয়েকটি পাক্ষিক কবিতাপত্রিকা বাজার এসেছিল। কিন্তু কোনোটাই কোনো দাগ কাটতে পারেনি।
৫ ॥ তখন কবিতাপাক্ষিক প্রকাশিত হত
অল্টারনেটিভ শনিবার। এটা শুধু কলকাতার জন্য নয়। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলাশহরেও অল্টারনেটিভ শনিবারে পৌঁছে যেত কবিতাপাক্ষিকের নতুন সংখ্যা। এটাও খুব ছোটোকথা ছিল না। আর সব থেকে বড়োকথা কথা বা বড়ো গলা করে বলেছিলাম যে কথাটি , তার নাম দিয়েছিলাম :
আমার স্পর্ধা , আমার কথা
এই সাবহেডিং-এ লিখেছিলাম :
' কবিতাপাক্ষিক প্রকাশের আগে বাংলাকবিতা ঠিক কোন অবস্থায় ছিল বা কীভাবে লেখা হত আর কবিতাপাক্ষিক প্রকাশের পর বাংলাকবিতা কী অবস্থায় আছে বা কীভাবে লেখা হচ্ছে সেটার একটা তুলনামূলক বিশ্লেষণ করুন , করে দেখুন আমরা সত্যিই কি বাংলাকবিতার নতুন মানচিত্র নির্মাণ করতে পেরেছি ? যদি না পারি তাহলে, আমাদের নির্বাসন দিন কোনো দ্বীপে অথবা একটি পোস্টকার্ড পাঠিয়ে আমাদের অহংকারকে চূর্ণ করে দিন।'
আগামীকাল এই প্রসঙ্গে আরো কিছু কথা বলব। সঙ্গে নির্বাচন করব আরো কয়েকটি জলাশয়কে , যেখানে মনের সুখে সাঁতার কাটবো ৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন