নস্টালজিয়া ২৫
পৃথা চট্টোপাধ্যায়
আকাশ দেখতে ভালবাসি সেই কবে থেকে তা আমার মনে পড়ে না। ঘরের মধ্যে বিছানায় শুয়ে আকাশ দেখার নেশা খুব ছোটবেলা থেকেই। এসব ছিল আমার একান্তই ব্যক্তিগত ভালো লাগা । আমাদের বাড়ির চারপাশে এত ঘরবাড়ি ছিল যে বিছানায় শুয়ে তেমনভাবে আকাশ দেখতে পেতাম না। কিন্তু আমাদের একটা ঘরের দরজা দিয়ে খাটে শুয়ে প্রতিবেশী গণেশদাদের একতলা বাড়ির ছাদ টপকে ফটো প্রেমের মতো একফালি আকাশ তখন দিব্যি দেখা যেত। আমি আর বোন সেই খাটে শুয়ে বর্ষার আকাশে মেঘে মেঘে কত ছবি আঁকতাম ! ভাগ্যিস আমরা বড় হবার পরে গণেশদার বাড়িটা দোতলা হয়েছিল না হলে আকাশ উপভোগের ঐটুকু আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতাম।
বাবার কথা বলতে গেলেই আমার একজন হাসিখুশি কর্মী মানুষের মুখ ভেসে আসে। আমার ছোটবেলায় বাবা অফিস , সংসারের বাইরের কাজকর্ম নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকত । তবে অফিস থেকে ফিরে অঙ্ক আর ইংরেজি পড়াতো আমাদের। ভাইবোনদের মধ্যে আমাকে বাবা একটু বেশি ভালোবাসত বলে আমার মনে হতো। ছুটির দিনে বাবা আমাদের সঙ্গে সারাক্ষণ কাটাতো, সময় দিত আমাদের। বিকেলে আমরা বাবার সঙ্গে গঙ্গার ধারে হাজারদুয়ারির মাঠে বেড়াতে যেতাম। গঙ্গার পারে বসে সূর্যাস্ত দেখতাম আর দেখতাম দলে দলে আকাশপথে বাসায় ফিরে চলেছে পাখির ঝাঁক। অনেক দূরে দূরে ভেসে যেত খেয়া পারাপারের নৌকা।
ছোটবেলায় মনের ভাবনার কোনো পরিধি থাকে না বলে মন যা ইচ্ছে তাই ভাবতে পারে। তখন আমিও কত কিছু ভাবতাম এই সব পাখিদের সারাদিনের উড়ে চলা নিয়ে। সম্ভব অসম্ভবের বেড়াজালে মানুষ আটকে যায় বড় হয়ে বুঝতে শেখার পর। আমার ছোটবেলায় কোনো জিনিসের চাহিদা ছিল না। কখনও কোনো জিনিসের জন্য আবদার করেছি বলে মনে পড়ে না। আজও সেই অভ্যাস থেকে গেছে। কোন কিছুই আমার বলে জোর করে চাইতে পারলাম না বলে বঞ্চিত থেকে গেলাম অনেক কিছু থেকেই ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন